ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ল। শিলিগুড়ি এবং আশেপাশে নতুন করে আরও অন্তত ১৫ জনের রক্তের ডেঙ্গির জীবানু মিলেছে। তাতে শিলিগুড়ি শহর এবং তার আশেপাশে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দেড়শো ছুঁই ছুঁই। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়িতে ডেঙ্গিতে প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুললেন বাসিন্দারা। বিশেষ করে শহরের যখন এই পরিস্থিতি তখন নিজেদের মধ্যে রেষারেষির জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং পুরসভা আলাদা ভাবে নিজেদের মতো করে কাজ করতে চাইছে কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাসিন্দাদের মত পরিস্থিতি সামলাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর, পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতর একযোগে কাজ করা উচিত। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ, শুক্রবার শিলিগুড়িতে আসছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি পুর এলাকা এবং মহকুমার অন্যত্র মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২২ টি। শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ২৫ জন। শিলিগুড়ি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ৯৭ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ৪৩ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবানু মিলেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ডেঙ্গি আক্রান্ত ৩৫ জন ভর্তি রয়েছেন। শহরের নার্সিংহোমগুলিতে রয়েছেন আরও অন্তত ৪৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত। |
শহরের ডেঙ্গি নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান তিনি। তবে স্বাস্থ্য দফতরের থেকে সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেন। যদিও এ দিন পুরকমিশনার এবং দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে নিয়ে নিজের দফতরে বৈঠক করেন তিনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগ, “ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভা ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। তারা যদি এ ব্যাপারে অপারগ হয় তবে ওই কাজ শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে করা হবে। এসজেডিএর মাধ্যমে শ্রমিক সংখ্যা বাড়িয়ে আমরা কাজ করব। পাশাপাশি ফগিং মেশিন ভাড়া করা হবে।” বিষয়টি পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হবে। মন্ত্রীর দাবি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সহায়তাতেই শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ হবে। ব্লিচিং দেওয়া থেকে সমস্ত কাজ এসজেডিএ করবে। সচেতনতা প্রচারে ইতিমধ্যে ‘মোবাইল ভ্যান’ বের করেছেন তাঁরা।
মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত এ দিন শহরের বাইরে ছিলেন। তিনি বলেন, “কারও সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভার তরফে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এমনকী ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের এক কিশোরী রশ্মি মাঝির মৃত্যুতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে অন্যত্র চিকিৎসা করাতে বলা হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন মেয়র। পুরসভার যে সমস্ত ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রভাব বেশি সেখানে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে শিবির করে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে ডেঙ্গি সচেতনার জন্য ১২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল পুরসভাকে। তা দিয়ে পুরসভা সঠিকভাবে কাজ করেনি বলে অভিযোগ করেন গৌতমবাবু। |
ডেঙ্গি পরিস্থিতির মধ্যে এ ভাবে দুই রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিদের আকচাআকচিতে বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাঁরা জানান, হাতে গোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশা মারতে ধোঁয়া বা লার্ভানাশক তেল স্প্রে করা হচ্ছে না। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ডেঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে অন্যান্য বিষয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করতেও। তাতে এখনও যে সমস্ত ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ছড়ায়নি সেখানেও রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্য দফতরের মতে ডেঙ্গি প্রতিরোধে আক্রান্তদের চিকিৎসা করার পাশাপাশি ডেঙ্গির বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া দরকার। ওই কাজের জন্য তারা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের এ ব্যাপারে যুক্ত কর্মীদের উপর নির্ভর করছেন। কিন্তু সেই কাজ ঠিক মতো করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
|