|
|
|
|
বনধ থেকে ছাড়, স্কুল খুলবে ১৩ই |
রেজা প্রধান • দার্জিলিং |
ঘরে-বাইরের চাপ অগ্রাহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত দার্জিলিং পাহাড়ের সব স্কুল-কলেজকে বনধের আওতা থেকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বৃহস্পতিবার, শিক্ষক দিবসে দলের শিক্ষক সংগঠন ও স্কুল-কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে তারা জানায়, বনধ চলবে কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাহাড়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। তবে ওই ঘোষণার পরেও পাহাড়ের বোর্ডিং স্কুলগুলি কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি। সে জন্য শুক্রবার বোর্ডিং স্কুলের সব প্রতিনিধিরা বৈঠক করবেন। একাধিক বোর্ডিং স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, যে সব পড়ুয়ারা বাড়ি ফিরে গিয়েছে, তাঁদের ফিরতে বলা হবে কি না, সেই ব্যাপারে ওই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। |
|
বনধ উপেক্ষা করে শিক্ষক দিবসে প্রিয় শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছে
গিয়েছেন ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি। |
পাহাড়ে স্কুল খোলার জন্য রাজ্য সরকারও মোর্চাকে চাপ দিয়েছিল। এ দিন মহাকরণ ছাড়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দার্জিলিঙের স্কুল খোলার জন্য আমি অনুরোধ করেছিলাম। ১৩ তারিখ খুলবে জেনে খুশি।” তবে সেই সঙ্গেই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, বনধের জন্য পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের স্কুল যাতায়াতে যে অসুবিধা হবে, তাতে তিনি রুষ্ট। বিশেষত গাড়ি বন্ধ থাকলে কী ভাবে পাহাড়ে ছোট ছোট বাচ্চারা যাতায়াত করবে তা নিয়ে নার্সারি স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি এবং অভিভাবকেরা চিন্তায় পড়েছেন। সেই উদ্বেগের খবর পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী কানেও। মোর্চাকে লক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “বাচ্চাদের বলবে গাড়ি চলবে না, হেঁটে স্কুলে যেতে হবে, না তো কাউকে চিঠি দিয়ে অনুপস্থিতির কথা জানাতে হবে এ সব চলবে না।”
মোর্চা প্রভাবিত জনমুক্তি সেকেন্ডারি টিচার্স অর্গানাইজেশনের (জেএসটিও) মুখপাত্র বি রোকা অবশ্য বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারী পড়ুয়াদের হেঁটেই যাতায়াত করতে হবে।” তাঁর কথায়, “১৩ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুললেও সরকারের উপরে চাপ বজায় রাখতে বনধ চালিয়ে যাওয়া হবে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সর্বসম্মত ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ফের খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” কিন্তু যে হেতু এক মাসের বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ, তাই কোনও স্কুলেই পাঠ্যক্রম যথা সময়ে শেষ হওয়া মুশকিল। তাই একবার খুলে যাওয়ার পরে শনি ও রবিবার ক্লাস করানোর জন্য স্কুলগুলিকে অনুরোধ করেছে মোর্চা।
বনধ চললে যাঁরা পাহাড়ের বাসিন্দা নন, তাঁরা বোর্ডিংয়ে আসবেন কী করে? রোকা বলেন, “বাইরের পড়ুয়াদের শিলিগুড়ি থেকে আনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বাসের ব্যবস্থা করবেন। সে জন্য আলাদা হেল্পলাইন খুলব। যেখানে ফোন করলে পড়ুয়াদের হস্টেলে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে। খাবার-দাবার, পড়াশোনার জন্য যাবতীয় জিনিসের যাতে অসুবিধে না হয়, স্থানীয় ভাবে যাতে সে সব মেলে সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেব।”
তবু বনধ না তুললে পড়ুয়ারা যে প্রতি পদে অসুবিধেয় পড়তে পারে, সেই আশঙ্কা করছেন প্রায় সব অভিভাবকই। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফেও মোর্চা নেতাদের সে কথা জানানো হয়েছে। স্কুলের অধ্যক্ষ জানান, তাঁদের স্কুলের সিংহভাগ পড়ুয়া পাহাড়ের বাইরের। ফলে পাহাড়ের বনধ চললে স্কুল খুললেও পড়ুয়াদের পাঠাতে ভরসা পাবেন না অভিভাবকেরা। শুক্রবার দলের সদর দফতর সিংমারিতে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। পরে বিকেলে গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সভা। সেখানে পুরোপুরি বনধ তোলা নিয়েও সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মোর্চা সূত্রের খবর।
দার্জিলিং পাহাড়ের বনধ প্রায় ৩৫ দিনে পড়ল। দীর্ঘদিন বাদে পাহাড়ে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দিবসও পালিত হয়নি। যদিও পড়ুয়ারা মোবাইলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এসএমএস পাঠিয়েছেন। অনেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়িতে গিয়ে ফুল দিয়ে সম্মান সূচক উত্তরীয় খাদা পরিয়ে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকারা উদ্বিগ্ন পড়ুয়াদের ভরসা দিয়েছেন। যেমন ৫২ বছর বয়সী রবিন থাপার কথা ধরা যাক। তিনি বলেন, “শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে বাড়িতে বসে থাকাটা কম দুঃখের নয়। তবুও পড়ুয়ারা অনেকে বাড়িতে এসেছে। ফুল, খাদা দিয়েছে।” |
পুরনো খবর: অশান্তি থেমে স্কুল খুলবে দ্রুত, আশা পড়ুয়াদের |
|
|
|
|
|