|
|
|
|
মোর্চা-শিন্দে বৈঠকে ক্ষুব্ধ মমতার চিঠি মনমোহনকে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দের বৈঠককে ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর’ বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে লেখা একটি চিঠিতে ওই বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বিভেদ তৈরির নীতিকে ইন্ধন দিচ্ছে, রাজ্যের বিষয়ে অনবরত রাজনৈতিক ভাবে নাক গলানো হচ্ছে। তাতে আমার রাজ্যে গোলমালে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে দুর্বল করা হচ্ছে।”
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরে কেন্দ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করে মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি সহ দলের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি বারবার দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা করেন। সম্প্রতি মোর্চার ডাকা বন্ধের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী লেপচাদের ডাকে কালিম্পঙে যাওয়ার সময় রোশনরা দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। ৩ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে থাকাকালীনই রোশনরা দিল্লিতে বৈঠক করেন সুশীল কুমার শিন্দের সঙ্গে। তাতেই রীতিমতো ক্ষুব্ধ সুরে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘চলতি মাসের ৩ তারিখে কেন্দ্রীয় সরকার মোর্চার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে রাজি হল। এটা অত্যন্ত বিরক্তিকর। সে দিন আমি দার্জিলিং-এ ছিলাম। কালিংম্পঙে একটি জনসভায় রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি প্রমুখ উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ে আমি যোগ দিয়েছিলাম। সে সময় কেন্দ্রীয় সরকার ওই বৈঠক করল, তা দুর্ভাগ্যজনক।”
কেন্দ্রের তরফে রাজ্য-মোর্চা সম্পর্কে সমঝোতার উদ্যোগে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “খুবই বিরক্তিকর ভাবে, আমি সংবাদমাধ্যম মারফত জানতে পারলাম, কেন্দ্রীয় সরকার দার্জিলিং সমস্যা নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কথা বলেছে। নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য সরকারই এই ধরনের বৈঠকের আয়োজন করে। যেমন চলতি বছরের ১৩ জুন দার্জিলিঙে রাজ্য সরকার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল। যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছিলেন। জিটিএ সংক্রান্ত কিংবা অন্য বিষয়ে প্রয়োজন পড়লে রাজ্য সরকার বৈঠক আয়োজন করতে পারে।” এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ক্রমাগত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রচেষ্টা শুধু রাজ্যের রাজনৈতিক অশান্তি তৈরিকে ইন্ধন দিচ্ছে তাই নয়, সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকেও ধ্বংস করবে, আশা করি আপনি এ বিষয়ে একমত হবেন। আমি আপনার অবগতির জন্য বাস্তব প্রেক্ষিত তুলে ধরলাম।” চিঠিতে তিনি লেখেন, “স্যর, দার্জিলিং আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকার কাছে অবস্থিত। এক দিকে উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং নেপাল, ভূটান ও বাংলাদেশের সীমানার কাছে হওয়ায় দার্জিলিং সঙ্কট দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রশ্নেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে আপনি আমার চেয়েও বিশদে জানেন।”
এ দিন রাতে মহাকরণ থেকে বেরোনোর সময়েও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি অনেক বারই জানিয়েছি, আমরা কোনও অবস্থাতেই বাংলাকে ভাগ হতে দেব না। পাহাড়ে যা হবে, তা গণতন্ত্রের মাধ্যমেই হবে।”
সম্প্রতি জিটিএ-র চিফ নির্বাচন নিয়ে মোর্চা দাবি করেছে, তাঁদের জেলবন্দি জিটিএ সদস্যদের ছেড়ে দিতে হবে। কেবল তারপরেই তাঁরা জিটিএ নির্বাচনে যোগ দেবেন। সেই প্রসঙ্গে এই দিন মহাকরণে মমতা বলেন, “ওঁরা ভোট দিতে চেয়েছেন, আমরা ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করব। সেখানে জেলে বন্দি জিটিএ সদস্যরা আদালতের অনুমতি নিয়ে আসতেই পারেন। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে পাহাড় চলুক। ৩০ বছর পাহাড়ে উন্নয়ন হয়নি। আমরা উন্নয়ন করতে চাই। ওখানে গুণ্ডামি আমরা বরদাস্ত করব না।”
তবে জিটিএ সভার চেয়ারম্যান তথা মোর্চার সহ সভাপতি প্রদীপ প্রধান বলেন, “প্যারোলে নয়, যে সব জিটিএ সদস্যরা জেলবন্দি, তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। না হলে আমরা জিটিএ-এর নতুন চিফ নির্বাচনের সভায় যাব না।” পাশাপাশি, জিটিএ সদস্যদের বিরুদ্ধে যে সব পুরানো মামলা (খুনের মামলা ছাড়া) রয়েছে, তা ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মেনে প্রত্যাহারও করতে হবে।
|
পুরনো খবর: মোর্চা-শিন্দে কথা কেন, রুষ্ট মমতা |
|
|
|
|
|