মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাওড়ার নতুন মহাকরণে জলপথে পৌঁছতে ৯টি ফেরিঘাটের সংস্কার করবে রাজ্য সেচ দফতর। প্রথম পর্যায়ে ৩টি ফেরিঘাট সংস্কারের কাজ জরুরি ভিত্তিতে শুরু হবে সাত দিনের মধ্যে। এই ঘাটগুলি হল চাঁদপাল, রামকৃষ্ণপুর এবং শিবপুর। প্রতিটি ফেরিঘাটের জন্য প্রাথমিক ভাবে ব্যয়বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা। প্রয়োজনে আরও টাকা বরাদ্দ করা হবে।
মান্ধাতা আমলের ফেরিঘাটগুলির পন্টুন বা জেটি ও ফেরিঘাটের রাস্তা বা গ্যাংওয়েগুলি বড় লঞ্চ এবং অতিরিক্ত যাত্রীর ভার নেওয়ার পক্ষে বিপজ্জনক বলে আনন্দবাজারে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। শিবপুর, রামকৃষ্ণপুর, চাঁদপাল ফেরিঘাটগুলি যে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের উপযোগী নয় এবং হাওড়ায় নতুন মহাকরণ হলে যাত্রী সংখ্যা প্রায় তিন গুণ হয়ে যাবে তা মেনে নেয় রাজ্য পরিবহণ দফতরও। ফেরিঘাটগুলির সংস্কার নিয়ে হুগলি নদী জল পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত প্রধান সংস্থা রাজ্য ভূতল পরিবহণ ও হুগলি নদী জলপথ পরিবহন সমবায় সমিতির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠকে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে ফেরিঘাটগুলির মেরামতির জন্য ৮৭ লক্ষ টাকার খসড়া হিসেব পেশ করা হয়। সমিতির তরফে জানানো হয়, হুগলি নদীর উপরে রাজ্য ভূতল পরিবহণের ৯টি ফেরিঘাটই রয়েছে বিপজ্জনক অবস্থায়। কোনওটায় নোঙর কমজোরি হওয়ার জন্য বড় লঞ্চ ভিড়তে পারে না। কোনওটার আবার গ্যাংওয়ে ছোট হওয়ায় ভাটার সময়ে মাটিতে বসে যায়। কোনও জেটির অবস্থা এতই খারাপ যে জোয়ারের সময়ে অসংখ্য ফুটো দিয়ে জল ঢুকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এই তথ্য জানার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জলপথে কাজে দক্ষতার নিরিখে ফেরিঘাটগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখে দ্রুত সংস্কারের জন্য সেচ দফতরকে নির্দেশ দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরেই শুক্রবার সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়া ও কলকাতার দিকের ফেরিঘাটগুলির অবস্থা সরেজমিন দেখতে বেরোন। দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা ছাড়াও তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) চৈতালী চক্রবর্তী, হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান প্রণব দত্ত-সহ অন্য অফিসারেরা। এ দিন সেচমন্ত্রী প্রথমে যান রামকৃষ্ণপুর ফেরিঘাটে। পরে শিবপুর ও চাঁদপাল ঘাট পরিদর্শন করেন।
পরে মন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ফেরিঘাটগুলি সারানো হয়নি। প্রতিটির আমূল সংস্কারের প্রয়োজন। আগামী মাস থেকে মহাকরণ হাওড়ায় চলে এলে ফেরিঘাটগুলিতে যাত্রীসংখ্যা প্রায় তিন গুণ বাড়বে। তাই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব ফেরিঘাটগুলি সংস্কার করতে হবে।” সেচমন্ত্রী জানান, প্রথম পর্যায়ে চাঁদপাল, শিবপুর এবং রামকৃষ্ণঘাটের সংস্কার হবে। এর পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে সারানো হবে ফেয়ারলি, নাজিরগঞ্জ, হাওড়া ২ নম্বর জেটি এবং আর্মেনিয়ান ঘাট। শেষ পর্যায়ে সংস্কারের কাজ হবে বাগবাজার এবং মেটিয়াবুরুজ জেটিতে। রাজীববাবু জানান, ফেরিঘাটগুলির যেমন পন্টুনের কাজ হবে, তেমনই সংস্কার হবে গ্যাংওয়ের মূল কাঠামোর। সেই সঙ্গে ফেরিঘাটগুলির সৌন্দর্যায়নও করা হবে।
সেচমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি ফেরিঘাটের জন্য প্রাথমিক ভাবে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। টাকা লাগলে আরও দেওয়া হবে। মুখ্যামন্ত্রী চান জলপথে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য। এ জন্য টাকাটা কোনও সমস্যা হবে না।” |