ডাউন লালাগোলা প্যাসেঞ্জারের পরে ব্যারাকপুরে ডাউন নৈহাটি লোকাল যখন এল, প্ল্যাটফর্ম লোকারণ্য। সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন ট্রেনের দরজাগুলোর উপরে। কিন্তু উঠতেই পারছেন না অনেকে। গেট আটকে যাওয়ায় শুরু হল ধাক্কাধাক্কি। ট্রেনের দরজায় পা রাখতে না-পেরে প্ল্যাটফর্মে পড়ে গেলেন কেউ কেউ। তাঁদের বেশির ভাগই মহিলা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ব্যারাকপুর স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ট্রেনে ওঠা স্থগিত রেখে অনেকেই পড়ে যাওয়া যাত্রীদের তুলে ধরতে ছুটে গেলেন। ভিড় তো রোজকার ব্যাপার। যাত্রীরা এ ভাবে পড়ে যাচ্ছেন কেন?
আসলে প্ল্যাটফর্মের থেকে ট্রেন উঁচু হয়ে গিয়েছে অনেকটাই। অতটা পা উঁচু করে অনেকে ট্রেনে উঠতেই পারছেন না। সমস্যা শুধু মহিলাদের নয়, প্ল্যাটফর্ম নিচু হয়ে যাওয়ায় ইদানীং ট্রেনে উঠতে-নামতে অসুবিধা হচ্ছে অনেক পুরুষেরও। বিশেষ করে শিয়ালদহ ডিভিশনের অনেক স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এই বিপত্তি ঘটছে। মেন লাইনের দমদম থেকে নৈহাটি, দমদম থেকে বারাসত সব লাইনেই অনেক স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের এই দুরবস্থা। প্রতিদিনই বেশ কিছু যাত্রী উঠতে বা নামতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে পড়ে আহত হচ্ছেন।
ওই সব লাইন, স্টেশন বা প্ল্যাটফর্ম তো অনেক দিনের। এত দিন পরে এমন সমস্যা হচ্ছে কেন?
রেলের বক্তব্য, সংস্কার করতে গিয়ে লাইন উঁচু হয়ে গিয়েছে। তার উপর দিয়ে ট্রেন যখন প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে, আগের তুলনায় বেশ খানিকটা উঁচুতে থাকছে ট্রেনের পাটাতন। এত দিন যাত্রীরা যে-উচ্চতায় পা তুলে ট্রেনে উঠতেন, সেটা বেড়ে যাওয়ায় পা নাগাল পাচ্ছে না পাটাতনের। অভ্যস্ত উচ্চতার হেরফের হওয়ায় ভারসাম্য হারিয়ে পড়েও যাচ্ছেন অনেকে। একই বিপত্তি নামার সময়েও। অভ্যাস অনুযায়ী পা নামিয়েও প্ল্যাটফর্মের নাগাল না-পেয়ে বেসামাল হয়ে অনেকে পড়ে যাচ্ছেন।
লাইনের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্ল্যাটফর্ম উঁচু করে ট্রেনের পাটাতনের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি কেন?
রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, নির্দিষ্ট কয়েকটি নিয়ম মেনেই রেলের এই ধরনের কাজ করার কথা। যেমন, সংস্কারের দরুন লাইনের উচ্চতা কিছুটা বেড়ে যাবে ধরে নিয়ে একই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতাও বাড়াতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন আগেই লাইন সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বাড়ানো হয়নি। তাই এই বিপত্তি।
প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা হয়নি কেন?
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ লাইন সংস্কারের নকশা করার সময় প্ল্যাটফর্ম উঁচু করার কথা বলেনি। তাই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না-হওয়ায় সেই কাজ হয়নি। ফের টাকা চাওয়া হয়েছে।
এতে যাত্রীরা যে সমস্যায় পড়বেন, সেটা ভাবা হল না কেন?
রেলের তরফে এর সদুত্তর মেলেনি। প্রাক্তন রেলকর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “এমনটা হওয়াই উচিত নয়। লাইন সংস্কারের কাজের মধ্যেই বাজেটে টাকার সংস্থান রেখে প্ল্যাটফর্ম উঁচু করার কথা বলাটাই নিয়ম। সেটা যদি না-হয়ে থাকে, ভুলটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের। এবং ভুলটা হয়েছে পরিকল্পনা করার সময়েই।”
প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা ও ট্রেনের পাটাতনের মধ্যে সমতার অভাবে যাত্রীদের যে অসুবিধা হচ্ছে, রেল তা স্বীকার করে নিয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ অফিসার রবি মহাপাত্র বলেন, “শিয়ালদহ ডিভিশনের ৩৬টি স্টেশনে এই সমস্যা হচ্ছে। বেশি সমস্যা হচ্ছে বেলঘরিয়া, নৈহাটি ও জয়নগর স্টেশনে। আপাতত ওই তিনটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম উঁচু করার জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে। অন্যান্য স্টেশনেও যত শীঘ্র সম্ভব সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।”
সুরাহা না-হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের ট্রেনে ওঠানামার কী হবে?
চটজলদি কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিতে পারেনি রেল। যাত্রীরা অবশ্য একটা পথ বাতলেছেন। তাঁরা চান, আপাতত কয়েকটি স্টেশনে লোকাল ট্রেনগুলিকে একটু বেশি সময় থামানোর নির্দেশ দেওয়া হোক। তা হলে যাত্রীরা সময় নিয়ে নিরাপদে ওঠানামা করতে পারবেন। |