এই লিয়েন্ডারকে
কুর্নিশ করতেই হবে
লিয়েন্ডারকে লাখো সেলাম!
বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর ডাবলস টিম-ই শুধু নয়। টেনিস ইতিহাসের সেরা জুটি বব আর মাইক ব্রায়ানকে তাদের ঘরের মাঠে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালের মতো সর্বোচ্চ মঞ্চে এক সেট পিছিয়ে থেকেও ৩-৬, ৬-৩, ৬-৪ হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালে উঠতে লিয়েন্ডার পেজের পার্টনার রাদেক স্টেপানেকও খুব ভাল খেলেছে। যমজ ব্রায়ান ভাইদের হারাতে বিপক্ষকে জুটি হিসেবে ভাল খেলতেই হবে। তা হলেও সাফ কথা, চল্লিশের লিয়েন্ডারের এই ম্যাচে পারফরম্যান্স বিস্ময়কর! অসাধারণ, অনবদ্য শব্দগুলোও যেন কলকাতার চিরসবুজ টেনিস প্লেয়ারের জন্য খুব সাদামাঠা মনে হচ্ছে আজ।
বিপক্ষ জুটি ক্যালেন্ডার বর্ষে চারটেই গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছে। বস্তুত গত বারের ইউএস ওপেন থেকেই গ্র্যান্ড স্ল্যামে অপরাজিত। তাদের কাছেই এক বছর আগে এই আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামেই ফাইনালে হারতে হয়েছে। এ রকম অসহ্য মানসিক যুদ্ধে নেমে প্রথম সেট যেটা লিয়েন্ডাররা হারল তাতে ব্রায়ান ভাইরা প্রথম সার্ভিসে অবিশ্বাস্য ৯৫ শতাংশ সফল। একটাও আনফোর্সড এরর নেই। এতটাই তেতে যে, প্রথম তিন গেমের মধ্যেই দু’টো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসেছে লাইনকলের। একটা লিয়েন্ডারের ‘এস’ সার্ভিসেরও। কোর্টের খুব কাছে ভিআইপি স্ট্যান্ডে নীল টুপি পরে বসা এক দর্শককে বাঁহাতি বব ব্রায়ান এত জোরে চেঁচিয়ে টুপি খুলতে বলল যে, টিভিতেও পরিষ্কার শোনা গেল! মার্কিন মহাতারকার সার্ভিস করার সময় নাকি চোখে ‘রিফ্লেক্ট’ করছিল নীল টুপিতে আছড়ে পরা রোদের আলো।

ফ্লাশিং মেডোয় লিদের দাপট।
এহেন চনমনে মহাশক্তিধর জুটির বিরুদ্ধেও ইন্দো-চেক জুড়ি দ্বিতীয় সেটের গোড়াতেই ২-০ এগিয়ে পাল্টা লড়াই দেওয়া শুরু করল। কিন্তু লিয়েন্ডাররা বুনো ওল তো ব্রায়ানরা বাঘা তেঁতুল। পরের গেমেই লিয়েন্ডারের দু’টো ডাবল ফল্টের সুযোগ নিয়ে ‘ব্যাক-টু-ব্যাক’ সার্ভিস ব্রেক করল মার্কিনরা। ২-২ অবস্থায় পঞ্চম গেমে স্টেপানেক যখন প্রথম পয়েন্টেই ডাবল ফল্ট করে বসল, সত্যি বলতে কী, একবার ভেবেছিলাম টিভি বন্ধ করে দিয়ে একটা ডিনারে যাওয়ার ছিল, সেটায় তাড়াতাড়ি চলে যাব। কিন্তু আমাকে টিভি ছেড়ে উঠতে দিল না লিয়েন্ডার। সিনিয়র পার্টনারের দুটো অসাধারণ রিটার্নে স্টেপানেক সার্ভিস ধরে রাখার পর বরং পরের গেমেই আবার ববের সার্ভিস ভেঙে দিল লিয়েন্ডাররা। ৪-২। টেনিস ট্যুরে এক সময়ের সেই বিখ্যাত লি-হেশ ‘চেস্ট বাম্প’ ততক্ষণে ফ্লাশিং মেডোয় শুরু হয়েছে লিয়েন্ডার-স্টেপানেকের মধ্যেও।
ম্যাচে ১-১ সমতা ফিরিয়ে তৃতীয় সেট লিয়েন্ডাররাই শুরু করল বেশি ভাল ছন্দে। ফুটবলে পিছিয়ে পড়ে গোল শোধ করা দলের মতোই তখন দুর্দান্ত ‘মোমেন্টাম’ ফুটবলভক্ত লিয়েন্ডারের। মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম, চূড়ান্ত সেটে যেন গোড়ার দিকেই ব্রায়ানদের একটা ব্রেক করতে পারে লিয়েন্ডাররা। আর সেটাই হল। তৃতীয় গেমে এ বার ডানহাতি মাইকের সার্ভিস ভেঙে দিল ভারতের চিরশ্রেষ্ঠ ডাবলস প্লেয়ার। লিয়েন্ডার তখন কোর্টে যেন টগবগ করে ফুটছে। ‘ভিন্টেজ লিয়েন্ডার’ কথাটা অবশ্য ওর ক্ষেত্রে খাটে না। কারণ বয়স ওর কাছে নিছক একটা সংখ্যা। বরং বলা যায়, কেরিয়ারের মধ্যগগনের ফর্মে আজ ফিরে গিয়েছিল লিয়েন্ডার। যার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল ব্রায়ানদের ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন।
নেটের সামনে রিফ্লেক্স। ভলি। ড্রপশট। ক্রস কোর্ট জ্যাব। অনুমানক্ষমতা। উদ্ভাবনী শট নেওয়া। এমনকী বেসলাইন থেকে রিটার্নও এই ম্যাচে অসাধারণ করেছে লিয়েন্ডার। এক-এক সময় বোঝা যাচ্ছিল না, লিয়েন্ডার-স্টেপানেকের মধ্যে কে ডিউস কোর্টে আর কে অ্যাডভান্টেজ কোর্টে (মানে রাইট কোর্ট আর লেফট কোর্ট) খেলছে আজ!
মাইকের পর ববেরও (ম্যাচে তৃতীয় বার) সার্ভিস ভেঙে লিয়েন্ডাররা যখন চুড়ান্ত সেটে ৪-১ এগিয়ে, ওর মুখে তখনই মিচকে হাসি! কিন্তু সামান্য মনঃসংযোগ হারাতেই লিয়েন্ডারেরই সার্ভিস ভেঙে ম্যাচে ফেরার একটা শেষ চেষ্টা করেছিল ব্রায়ানরা। ৫-৪-ও করে ফেলেছিল। কিন্তু দশম গেমে এ বার স্টেপানেকের তীক্ষ্ম সার্ভিস আর লিয়েন্ডারের স্বপ্নের রিটার্নের সামনে ব্রায়ানদের আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্য রাস্তা ছিল না।

ফ্লাশিং মেডোয় জুটি লি-কে নিয়ে।
লিয়েন্ডার-স্টেপানেক গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে পর্যন্ত বিশ্বসেরা ব্রায়ান ভাইদের হারিয়ে চ্য্যাম্পিয়ন হয়েছে অতীতে। তা সত্ত্বেও আমার মতে এই ম্যাচটাই লিয়েন্ডারদের সেরা জয়। লিয়েন্ডারেরও দীর্ঘ আড়াই দশকের আন্তর্জাতিক টেনিস জীবনের এটা অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। এই লিয়েন্ডারকে কুর্নিশ করতেই হবে!
আর মেয়েদের ডাবলস সেমিফাইনালে সানিয়া মির্জা ওঠায় আমি এতটুকু অবাক নই। এমনকী মাত্র মাস দুই আগে উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল যে তাইপে-চিনা জুটি, সেই সু উয়েই-সুয়াই পেংকে কোয়ার্টার ফাইনালে সানিয়া-জি জেংয়ের স্ট্রেট সেটে ৬-৪, ৭-৬ (৭-৫) হারানোর পরে মনে হচ্ছে, সানিয়াদের এ বার ফ্লাশিং মেডোয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও সুযোগ আছে। যদি মেয়েটার পঁচিশের আগেই অতগুলো বড়সড় অস্ত্রোপচার না হত। যখন আন্তর্জাতিক কেরিয়ারটা তরতরিয়ে এগোচ্ছে, তখন যদি একশো ভাগ ফিট থাকত, তা হলে ওর সিঙ্গলসের রেকর্ডটাও কী উজ্জ্বল যে হতে পারত! ঈশ্বরপ্রদত্ত ফোরহ্যান্ড। মেয়েদের সার্কিট অনুযায়ী বিশ্বমানের গ্রাউন্ডস্ট্রোক। উনিশ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। তৃতীয় রাউন্ডে স্ট্রেট সেটে বর্তমান উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন মারিয়ন বার্তোলিকে হারিয়েছিল। বেচারার তার পর কব্জি, হাত, হাঁটু মিলেটিলে তিন-তিন বার অস্ত্রোপচার হয়। বাধ্য হয়ে সিঙ্গলস থেকে সরে এসে ডাবলসে পুরোপুরি মন দিতে হয়েছে সানিয়াকে। সেখানেও অবশ্য সফল।

লিয়েন্ডার-স্টেপানেক ব্রায়ান ভাইরা
এস ৩, ডাবল ফল্ট ৫
প্রথম সার্ভে পয়েন্ট ৬৭ শতাংশ,
দ্বিতীয় সার্ভে পয়েন্ট ৫৫ শতাংশ,
ব্রেক পয়েন্ট দশে চার,
আনফোর্সড এরর ১২
এস ২, ডাবল ফল্ট ২
প্রথম সার্ভে পয়েন্ট ৭৬ শতাংশ,
দ্বিতীয় সার্ভে পয়েন্ট ৪১ শতাংশ,
ব্রেক পয়েন্ট নয়ে তিন,
আনফোর্সড এরর ৩

...ঈশ্বর মহান! চল্লিশেও এতটা ফিট আর সুস্থ রেখেছেন। ধন্যবাদ সমস্ত মার্কিন, চেক আর ভারতীয়দের। আমাদের সমর্থন জানানোয়। ব্রায়ানরা টেনিসের ডাবলসের সেরা দূত। তাই আজ ওরা ম্যাচের শেষে কোর্ট ছাড়ার সময়েও হাততালি দিয়েছি। রাদেক আমার সেরা ডাবলস পার্টনার। আমরা খেলি যা হবে হোক ভেবে। ফাইনালেও সে ভাবে খেলব। কারা প্রতিদ্বন্দ্বী সে সব ভাবছিই না।” —

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.