এক বছর আগে হাওড়ার জগাছা থানা এলাকায় উল্টোডাঙার এক মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এক বছরের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি হয়নি। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে তদন্তকারী অফিসারের রিপোর্ট দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অফিসারকে অযোগ্য বলে মন্তব্য করে ডিসি (ইএসডি)-কে ১৫ দিনে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন। এ দিনের রিপোর্টে পরিষ্কার, এক বছরেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। ৩ অগস্টের আগে ওই তরুণী বা তার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেননি তদন্তকারী অফিসার।
৩ অগস্ট থেকে প্রায় রোজ বাড়িতে তদন্তকারী অফিসার ও অন্যান্য পুলিশেরা আসছেন। তদন্তের বিষয়ে কিছু জানতে না চেয়ে তাঁকে এবং তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে ও অন্য মেয়েদের নানা ভাবে হেনস্থা করছে পুলিশ। এই অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন নিগৃহীতা তরুণীর মা পূর্ণিমা বিশ্বাস। আবেদনে তিনি জানান, তিনি ও তাঁর মেয়েরা পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁরা গরিব হওয়ায় থানায় হেনস্থার কথা জানালেও ফল হচ্ছে না। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে। এর পরেই তদন্তকারী অফিসারকে হাইকোর্টে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
২০১২-র ১৭ অগস্ট ওই মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণী আপনমনে হেঁটে হাওড়া চলে যান। অভিযোগ, ১৯ অগস্ট হাওড়ার জগাছা থানা এলাকায় তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়। হাওড়া জেনারেল হাসপাতাল ও আরজিকরে তার মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়। ২০ অগস্ট জগাছা থানায় এফআইআর হয়। ওই তরুণী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় হাওড়া আদালতের বিচারক মামলাটি জগাছা থানা থেকে উল্টোডাঙা থানায় স্থানান্তরিত করেন।
আবেদনকারীর পক্ষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, নিগৃহীতা মানসিক ভারসাম্যহীন ও দরিদ্র পরিবারের বলেই পুলিশের হেলদোল নেই। এক বছরে পুলিশ তদন্তই করেনি। ধর্ষণের তদন্ত না করে, পুলিশ তাঁর মায়ের কাছে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার বিষয়ে তথ্য চাইছে। তাঁর দাবি, পুলিশ কাউকে আড়াল করতে চাইছে।
বিকাশবাবু আরও বলেন, পার্ক স্ট্রিট, বরাহনগর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ কিছুটা সক্রিয় হয়। সমাজে বিতর্কও তৈরি হয়। কামদুনি নিয়ে দেশে সাড়া পড়েছে, লাগাতার আন্দোলনও চলছে। অথচ পরিচারিকার মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে গণধর্ষিতা হলে পুলিশ বা সরকারের কিছু যায় আসে নাএই অভিযোগে প্রতিবিধানের আর্জি জানান।
এ দিন রিপোর্ট দেখে বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এক জন পুলিশ অফিসার ধর্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার এই রিপোর্ট দিচ্ছেন, ভাবা যায় না। এর পরেই বিচারপতি ডিসি (ইএসডি)-কে ১৫ দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন। |