নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অভিযুক্তের সম্ভাব্য চেহারার স্কেচ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি তো চলছেই। সেই সঙ্গে জগাছায় ধর্ষণের তদন্তে নেমে পুলিশ এ বার খোঁজ নিচ্ছে, কারও সঙ্গে ধর্ষিতার পুরনো শত্রুতা ছিল কি না। পুরনো কোনও আক্রোশেই তাঁকে ধর্ষণ ও মারধর করা হয়েছে কি না। নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের মহিলা সেলের জেলা নারী সুরক্ষা অফিসের কর্মীরাও এই ব্যাপারে ধর্ষিতার সঙ্গে কথা বলছেন।
ধর্ষিতার সম্ভাব্য শত্রুদের সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছে, ওই মহিলার একটি জমি নিয়ে অনেক দিনের গণ্ডগোল আছে। সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকার দাগি দুষ্কৃতীদের কারও সঙ্গে অভিযুক্তের স্কেচের মিল পায়নি পুলিশ। তাই লাঞ্ছিতার কোনও পুরনো শত্রু এই দুষ্কর্ম করে থাকতে পারে বলে তাদের সন্দেহ। সাম্প্রতিক কালে কারও সঙ্গে অভিযোগকারিণীর গুরুতর কোনও গোলমাল হয়েছিল কি না, নারী সুরক্ষা অফিসের কর্মীরাও তা খতিয়ে দেখছেন।
গত বুধবার, ২৫ জুলাই ভোর ৫টা নাগাদ সাঁতরাগাছি সেতুর নীচে এক দুষ্কৃতী ওই মহিলাকে মারধর এবং ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মহিলার আর্ত আবেদন সত্ত্বেও পথচলতি মানুষ বা রাস্তায় কর্মরত পুলিশ, কেউই তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। এমনকী আহত অবস্থায় জগাছা থানায় গেলেও তাঁর অভিযোগ নেওয়া বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা তো দূরের কথা, থানার ডিউটি অফিসার ওই মহিলাকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। পরে বাড়ির লোকেরাই মহিলাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। আর পুলিশ এফআইএর নেয় ঘটনার ছ’ঘণ্টা পরে।
পুলিশি সূত্রের খবর, জগাছা থানার গাফিলতিতে অস্বস্তিতে পড়েন হাওড়া কমিশনারেটের পদস্থ কর্তারা। রাজ্য মহিলা কমিশন তীব্র ভর্ৎসনা করে পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডেকে। শেষ পর্যন্ত ঘটনার তদন্তে উঠেপড়ে লাগলেও কার্যত অন্ধকারেই হাতড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা। ওই মহিলার জামাকাপড়ের ফরেন্সিক রিপোর্টও এখনও হাতে পাননি তাঁরা।
তদন্তকারী দল সূত্রে জানা গিয়েছে, সিআইডি-র শিল্পীকে দিয়ে অভিযুক্তের আঁকানো ছবি নিয়ে বাকসাড়া ও হাওড়া হোমস এলাকায় যায় পুলিশ। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ওই এলাকার মাদকাসক্ত ও রিকশাচালকদের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু কোনও সূত্রই মেলেনি। ঘটনার পরে ওই মহিলা যাঁদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, তাঁদেরও খোঁজা হচ্ছে।
সাঁতরাগাছি রেলসেতুর কাছে যেখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেই এলাকাটি খুবই নির্জন। পুলিশ বলছে, রাতের দিকে বাইরের বহু দুষ্কৃতীও সেখানে ঘাঁটি গাড়ে। সেই সব দুষ্কৃতীর কেউ এই ঘটনায় জড়িত কি না, খোঁজ চলছে। অভিযুক্তের স্কেচ হাওড়া কমিশনারেট এলাকা এবং সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, লাগোয়া জেলাগুলিতেও পাঠাচ্ছে পুলিশ। হাওড়া কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “হাওড়া কমিশনারেটে এলাকার যে-সব দাগি দুষ্কৃতীর ছবি আছে, তাদের কারও সঙ্গে ওই স্কেচের মিল পাওয়া যায়নি। তাই এখন অন্যান্য এলাকার দাগি অপরাধীদের সঙ্গে ছবিটি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।” তদন্তে সাহায্য করছে সিআইডি-ও।
হাওড়া কমিশনারেটের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ বলেন, “বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখনই তা জানানো যাবে না।” ঘটনার পরেই ওই মহিলা জগাছা থানায় হাজির হন। থানার সেই সময়কার সিসিটিভি-র ফুটেজ রাজ্য পুলিশের কর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে হাওড়া কমিশনারেট। পুলিশেরই খবর, ১৯ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের সেই ফুটেজে দেখা গিয়েছে, মহিলা থানায় সাহায্য চাইতে গেলে তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন ডিউটি অফিসার। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও বন্দোবস্ত করা হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ধর্ষিতা মহিলা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে তাঁর নাকের সেলাই এখনও কাটা হয়নি। শীঘ্রই আরও এক বার তাঁর নাকের এক্স-রে করানো হবে। |