জেলায় জেলায় বিশৃঙ্খলা, শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বাতিল নিয়ে চাপানউতোর
প্রশ্নপত্র জোগাড়ে ঘুরলেন বিডিও, বয়কট পরীক্ষাও
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেরিতে পৌঁছনোয় রাজ্যের অনেক পরীক্ষাকেন্দ্রেই রবিবার নাকাল হতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। তবে হাওড়ার বাগনান আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে যা হয়েছে, তা দক্ষিণবঙ্গের পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির মধ্যে কার্যত নজিরবিহীন।
বেলা ১১টায় যে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল, তা শুরু হয় সওয়া ৩টেয়। প্রশ্নপত্র জোগাড় করতে বিডিও ঘুরলেন অন্য পরীক্ষাকেন্দ্রে। তার মধ্যে পরীক্ষা বাতিলের দাবি তুলে তা বয়কট করলেন এক দল পরীক্ষার্থী। তাঁদের হাতে হাতে ঘুরল ‘ফাঁস’ হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হল পরীক্ষার্থীদের একাংশের। শেষ পর্যন্ত অর্ধেকেরও কম পরীক্ষার্থী কড়া পুলিশ প্রহরায় পরীক্ষা দিলেন সন্ধ্যা সওয়া ৬টা পর্যন্ত। শিক্ষিকারা পরীক্ষার ‘হল’-এ থাকলেন র্যাফ পরিবৃত হয়ে। পরিস্থিতি সামলাতে কালঘাম ছুটল প্রশাসনের কর্তাদের। দিনের শেষে মহকুমাশাসক (উলুবেড়িয়া) সুজয় আচার্য বলেন, “স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে নির্দেশ ছিল, পরীক্ষার ব্যবস্থা করতেই হবে। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। ইচ্ছুকরা নির্বিঘ্নেই পরীক্ষা দিতে পেরেছেন।”
ওই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৬৩২ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ বাগনান-১ ব্লকের বিডিও প্রশ্নপত্র স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে যান। প্রধান শিক্ষিকা প্রতিমা মাইতি ২১১টি প্রশ্নপত্র কম দেখে বিডিওকে খবর দেন। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে বসানো হয়নি। বিডিও ১১টার পরে স্কুলে আসেন। তত ক্ষণে প্রশ্নপত্র কম আসার কথাটি চাউর হয়ে যায়।
বাগনানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিধায়ক রাজা সেনের (ছবিতে চিহ্নিত) ধস্তাধস্তি। ছবি: হিলটন ঘোষ
কখন পরীক্ষা শুরু হবে, সে কথা সেই সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের জানাতে পারেননি বলে অভিযোগ। পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। অন্য পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় এসএমএস মারফত প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলেও তাঁরা অভিযোগ তোলেন। বেলা কিছুটা গড়াতে পরীক্ষা বাতিলেরও দাবি তোলেন পরীক্ষার্থীদের একাংশ।
স্কুলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র এবং বাগনানের তৃণমূল বিধায়ক রাজা সেন। তাঁরা জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। বেলা ১টা নাগাদ স্কুলে এসে মহকুমাশাসক স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে বিডিওকে অন্য পরীক্ষাকেন্দ্রের অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্র জোগাড় করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতো বেলা ২টো নাগাদ প্রশ্নপত্র জোগাড় করে ফিরে আসেন বিডিও মণীশ দাস।
কিন্তু তত ক্ষণে অন্যত্র পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে বেঁকে বসেন বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী। মহকুমাশাসক মাইকে ‘ইচ্ছুক’ পরীক্ষার্থীদের ‘হল’-এ চলে যেতে বলেন। তাঁদের খাওয়ার জন্য ‘কেক’-এর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বিক্ষোভের আশঙ্কায় শিক্ষিকারা প্রথম দফায় পরীক্ষা নিতে যেতে রাজি হননি। শেষে র্যাফের পাহারায় তাঁদের পাঠানো হয়। বেলা সওয়া ৩টে নাগাদ ১৭১ জন পরীক্ষা দেওয়া শুরু করলেও ‘অনিচ্ছুক’ পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে স্কুল চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের কয়েক জনের হাতে প্রশ্নপত্রও দেখা যায়। সেই প্রশ্নপত্র তাঁরা কোথা থেকে পেলেন, সে ব্যাপারে বিক্ষোভকারীরা কিছু জানাননি। পুলিশ বিক্ষোভ থামাতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। এই সময় বিক্ষোভকারীদের কয়েক জনের সঙ্গে বিধায়ক রাজা সেনের বচসা হয়। তিনি তাঁদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন বলে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ। বিধায়ক অবশ্য বলেন, “আমি স্কুল সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কমিশন জানিয়েছিল, এ ভাবে পরীক্ষা বাতিল করা যায় না। বিষয়টি আমি পরীক্ষার্থীদের বোঝাতে এসেছিলাম। কাউকে ধাক্কা দিইনি বা বের করে দিইনি।”
ঘটনার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন পরীক্ষার্থীরা। উদয়নারায়ণপুরের দোলন কাঁড়ার, আমতার সোমেন মণ্ডল বা তারক দাসরা বলেন, “গোটা দিন ধরে চূড়ান্ত নাকাল হলাম। অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম। তার এই পরিণাম!” তাঁদের প্রশ্ন, “এ বার আমাদের কী হবে!”
মহকুমাশাসক অবশ্য ‘হয়রানি’র পিছনে পরীক্ষার্থীদের একাংশের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, বিডিও অন্য পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র জোগাড় করতে যেতে গেলে কিছু পরীক্ষার্থী তাঁর গাড়ি আটকে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানান। মহকুমাশাসক বলেন, “বিডিওকে আটকানো না হলে সাড়ে ১১টা নাগাদই পরীক্ষা শুরু করা যেত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.