নির্বিঘ্ন হবে কি জুবিনের কনসার্ট, অগ্নিপরীক্ষায় কাশ্মীরের ঐতিহ্য
তিহাস বলছে, সঙ্গীত আর কবিতার পীঠস্থান ছিল ভূস্বর্গ।
সেই কাশ্মীরই দশচক্রে আজ এক অদ্ভুত জটের মুখোমুখি। প্রসঙ্গ, আগামী ৭ তারিখ শালিমার বাগে জার্মান দূতাবাস আয়োজিত জুবিন মেটার কনসার্ট ‘এহসাস-ই-কাশ্মীর’। সময় যত এগিয়ে আসছে, এই অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক ততই মাথাচাড়া দিচ্ছে। হিজবুল মুজাহিদিনের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা একাধিক জঙ্গি সংগঠনের হুমকি, বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের তীব্র আপত্তি, মানবাধিকার সংগঠনগুলির অসন্তোষ--- থমথমে করে রেখেছে কাশ্মীরকে। রাস্তায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রধারী জওয়ান, পথচারীদের দেহতল্লাশি, সবই চলছে। ফলে যে মূল প্রশ্নটা মাথাচাড়া দিচ্ছে, সঙ্গীত কি পারবে অশান্ত উপত্যকায় কিছুটা শান্তির প্রলেপ দিতে? নাকি এই থমথমে আবহাওয়া, জঙ্গি হানার আশঙ্কা, সবকিছুর অনুঘটক হয়ে দাঁড়াল সেই সঙ্গীতই?
ওমর আবদুল্লার সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন অনুষ্ঠানটিকে ‘নিরাপদ’ রাখার। বিষয়টাকে কার্যত চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে কেন্দ্র। ভারত সরকারের তরফে সম্পূর্ণ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জার্মান দূতাবাসের দিকে। প্রসার ভারতী ইউরোপের ২৪টি দেশে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করার দায়িত্ব নিয়েছে।
‘ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন’কে বিনামূল্যে অনুষ্ঠানটির ‘ফিড’ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। সম্প্রচারের মান যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয়, সে জন্য বসানো হচ্ছে বারোটি হাই ডেফিনিশন ক্যামেরা।
জুবিন মেটার কনসার্ট উপলক্ষে নিরাপত্তায় আঁটোসাঁটো ডাল লেক।
বৃহস্পতিবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই।
অনেকেই মনে করছেন, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে এক শান্ত সঙ্গীতময় কাশ্মীরের ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করতে চাইছে দিল্লি। একই সঙ্গে উপত্যকার অশান্ত যুবসমাজের কানে ঢালতে চাইছে বিঠোফেন-মোৎজার্টের সিম্ফনি। লক্ষ্য যা-ই হোক, তা কত দূর সফল হয়, সেটাই এখন দেখার। কারণ, হিজবুল মুজাহিদিনের অধীনে কাজ করা তিনটি কাশ্মীরি জঙ্গি সংগঠন--- আল নাজিরিন, শোহাদা ব্রিগেড এবং ফারজান্দান-ই-মিলাত সাধারণ মানুষের উদ্দেশে ইতিমধ্যেই হুমকি-বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, এই অনুষ্ঠানে যোগ দিলে তার পরের পরিণতির জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। জার্মান দূতাবাসে ফ্যাক্স পাঠিয়ে অনুষ্ঠান বাতিল করতেও বলেছে তারা।
জঙ্গি হুমকির মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সহায়তায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে। কিন্তু শুধু নাশকতার হুমকিই নয়, প্রতিরোধ হচ্ছে রাজনৈতিক ভাবেও। হুরিয়ত কনফারেন্স-এর কট্টরপন্থী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি কনসার্টের দিন প্রতিবাদে বন্ধ ডেকেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এই সব অনুষ্ঠান করিয়ে কাশ্মীরের মূল বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চাইছে সরকার। আসলে এ সব করে ভারতীয় শাসনই প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে নয়াদিল্লি।” কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের কাছে এই অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মধ্যপন্থী হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুখের কথায়, “এই ধরনের অনুষ্ঠান করার জন্য কাশ্মীরের পরিস্থিতি আদৌ উপযুক্ত নয়। তা ছাড়া রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করে এখানে বাজে খরচ করা হচ্ছে।” জবাবে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার বক্তব্য, “প্রত্যেকেরই পৃথক পৃথক রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু সঙ্গীত আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.