|
|
|
|
কট্টর কারাট, কংগ্রেস-প্রশ্নে তোলপাড় দলে |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
লোকসভা ভোটে কী ফল হবে, তার ঠিক নেই। ভোট-পরবর্তী কৌশল নিয়ে এখনই বিতর্ক বেধে গিয়েছে সিপিএমে!
সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঠেকাতে লোকসভা ভোটের পরে ফের কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানো হবে কি না, চিরাচরিত বিতর্ক সেই প্রশ্নেই। সামনে পাঁচ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে সিপিএমের অন্দরে ওই বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের কিছু বক্তব্য। সর্বভারতীয় একটি ইংরেজি দৈনিক এবং টিভি চ্যানেলকে কারাট খোলাখুলিই বলেছেন, কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন কোনও সরকারকে কোনও অবস্থাতেই আর বামেদের সমর্থনের কোনও প্রশ্ন নেই। সে উল্টো দিকে নরেন্দ্র মোদীই উঠে আসুন, আর যা-ই হোক! সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যেই দলের একাংশ কৌশলগত অদূরদর্শিতার ছায়া দেখছে। তাদের বক্তব্য, ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সব দরজা খুলে রাখার বদলে এমন ভাবে তাস দেখিয়ে ফেলা অর্থহীন! সম্ভবত হঠকারীও!
বঙ্গ সিপিএমের বড় অংশও কারাটের কট্টর কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থান এ ভাবে প্রকাশ্যে চলে আসায় বিস্মিত এবং অসন্তুষ্ট। পরমাণু চুক্তিকে ঘিরে ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন তোলার প্রশ্নে কারাটের সঙ্গে আলিমুদ্দিনের টানাপোড়েন ছিলই। রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের পথ সিপিএমের ওই সিদ্ধান্তেই প্রশস্ত হয়েছিল বলে বঙ্গ ব্রিগেডের নেতারা মনে করেন। এ বার কোনও অবস্থাতেই কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হবে না বলে আগাম ঘোষণা করে দিয়ে সাধারণ সম্পাদক খানিকটা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই কংগ্রেস-তৃণমূল পুনর্মিলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সাহায্য করে বসলেন কি না, ভাবছেন তাঁরা। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল যে ভাবে চলছে, তার মোকাবিলা করতে গেলে আমাদের অনেক কিছু মাথায় রেখে চলতে হবে। ভোটের পরের কথা আগাম ভেবে রাখা কি সম্ভব?” ঘটনাচক্রে, সিপিএমের বর্ধিত রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকের জন্য কাল, শনিবার থেকে কলকাতায় থাকার কথা কারাটের। তার আগে আজ, শুক্রবার রাজ্য কমিটির বৈঠক।
কারাটের বক্তব্য নিয়ে দলের মধ্যের কংগ্রেস-বিরোধী অংশ অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যত্র প্রচারে নেমে পড়েছে। কারাটের যুক্তি, ২০০৪ সালে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। এনডিএ সরকার তত দিনে দিল্লিতে ৬ বছর কাটিয়ে ফেলেছে। ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই সময়ের চাহিদা ছিল। কিন্তু এ বার ২০১৪ সালে যখন ভোট হবে, গত ১০ বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মনমোহন সিংহ সরকারের একের পর সিদ্ধান্তে মানুষ তখন নাজেহাল। বামেরা সে সবের তীব্র বিরোধিতাও করেছে। এর পরে আর কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পথে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। কারাট এমনও বলে রেখেছেন, মোদীকে আটকানোর জন্য কংগ্রেসকে সমর্থন দিতে হবে, এটাও মনে করার কোনও কারণ নেই। একই সঙ্গে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মেনেছেন: লোকসভা ভোটের পরে তাঁরা পাঁচমিশেলি সরকার গড়ার
জন্য কংগ্রেসের সমর্থন চাওয়ার জায়গায় থাকবেন এটাও তিনি মনে করছেন না।
এবং এখানেই পাল্টা প্রশ্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতত্বের একাংশের। জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার স্বার্থেই কট্টর কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থান আগে থেকে চূড়ান্ত করে ফেলার বিপক্ষে তাঁরা। দলের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “আপাতত আমাদের লক্ষ্য, অ-কংগ্রেস এবং অ-বিজেপি শক্তিগুলিকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করা। রাজ্যভিত্তিক যে যে দলের সঙ্গে সমঝোতা সম্ভব, করে ফেলা। লোকসভা ভোটের পরে কী পরিস্থিতিতে ঠিক কী করা হবে, তা নিয়ে পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি কেরলে গিয়ে সম্প্রতি বলেছেন, সিপিএম তাঁদের কাছে ‘অচ্ছ্যুৎ’ নয়। অথচ কারাট তাঁর ছুৎমার্গ প্রকট করে ফেলায় বিস্মিত পলিটব্যুরোর একাংশ। তাদের মতে, মনেপ্রাণে কারাট প্রবল কংগ্রেস-বিরোধী। মাঝে মাঝে তাঁর কথায় সেই মনোভাব দলের কৌশলের আগে চলে এসে জটিলতা বাড়াচ্ছে। ওই অংশের যুক্তি, কংগ্রেসের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে সুর নরম করার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু ইউপিএ-১’এর মতো বাইরে থেকে বাম সমর্থনের জেরে আর্থিক নীতিতে যদি কিছু প্রভাব রাখা যায়, সেই রাস্তা বন্ধ করে ফেলা হবে কেন? সিপিএমের এক সাংসদের বক্তব্য, “সংসদের এ বারের অধিবেশনেই তৃণমূলের চরম কংগ্রেস-বিরোধিতা প্রকট। জমি-বিলে শুধু তৃণমূলই বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে (বিচ্ছিন্ন ভাবে আরএসপি সাংসদ প্রশান্ত মজুমদারও একই কাজ করায় দলে অবশ্য জলঘোলা হয়েছে)। কংগ্রেস এখন শরিক-সন্ধানে আছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের দিকে তাদের ঠেলে দিতে আমরা উদ্যেগী হব কেন?”
|
পুরনো খবর: কংগ্রেস নিয়ে এখন দ্বন্দ্ব ‘দুই’ সিপিএমে
|
|
|
|
|
|