|
|
|
|
সংখ্যালঘুদের ক্ষমতা বাড়িয়েই ভোট দখলের কৌশল রাহুলের |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
লোকসভা ভোট আসন্ন। তার আগে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট, বিশেষ করে মুসলিম যুব সম্প্রদায়কে কংগ্রেসের অনুকূলে ফেরাতে ‘নিঃশব্দ অপারেশন’ শুরু করে দিলেন রাহুল গাঁধী।
নিঃশব্দ, কারণ শুরুতেই প্রকাশ্যে হইচই করতে চাইছেন না রাহুল। চাইছেন না ধর্মতলায় বা উত্তরবঙ্গের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে এখনই কোনও সভা করতে। তাঁর মতে, এক দিন সভা করে দীর্ঘমেয়াদে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়। আবার রাজ্যের যাবতীয় মুসলিম নেতানেত্রীকে একসঙ্গে দিল্লিতে ডেকে কোনও বৈঠকও করতে চাননি কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। সে ক্ষেত্রেও একযোগে সকলকে উজ্জীবিত করা সম্ভব নয় বলে তাঁর মত। তার বদলে গত দু’সপ্তাহে রাজ্যের তিন যুব নেতাকে আলাদা করে দিল্লিতে ডেকে পাঠান রাহুল। দীর্ঘক্ষণ তাঁদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। তাঁদের কাছ থেকে শোনেন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের অবস্থা কেমন। এবং সব শেষে ওই তিন জনের মনে একটি কথাই গেঁথে দিতে চান। তা হল, সংখ্যালঘু যুব সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন করতে হবে। ওই তিন জন দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন এবং ধীরে ধীরে উপরে উঠে এসেছেন। সেই ভাবেই তাঁদের ব্লক ও জেলাস্তরে আরও সংখ্যালঘু নেতানেত্রী তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল। আর এই নেতাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে আরও উপরে তুলে আনার।
এই তিন জন হলেন, বীরভূমের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিমি, উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক গুলাম রব্বানি এবং মালদহের মুথাবাড়ির বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন। মজার বিষয় হল, রাহুল তিন জনকেই ডেকেছেন, অথচ কেউ অন্যের ডাক পাওয়ার খবর জানতেন না।
এখন প্রশ্ন হল, মৌসম নূর বা শমীক হোসেন কেন ডাক পেলেন না? কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, গনি খানের বোনের মেয়ে মৌসমের বাচ্চা এখনও খুবই ছোট। মান্নান হোসেনের ছেলে শমীক রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভাপতি। অর্থাৎ, দলে এর মধ্যেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়ে গিয়েছেন। এই তিন জন, সিরাজ, রব্বানি বা সাবিনা, এঁদের কারও বাবা-কাকা কংগ্রেসের বড় নেতা নন। সাধারণ অবস্থা থেকে উপরে উঠে আসা এই তিন নেতাকেই তাই বেছে নিয়েছেন রাহুল।
সনিয়া-পুত্রের উদ্দেশ্য কী ছিল?
রাহুল-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, শুধু যে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদেরই তিনি এ ভাবে ডেকেছেন, তা নয়। যে সব রাজ্যে মুসলিম জনভিত্তি উল্লেখযোগ্য, সেই সব রাজ্যের সংখ্যালঘু যুব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমরা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এই রাজ্যে নির্বাচনী সাফল্যের জন্য মুসলিমদের ভোট পাওয়াটা জরুরি। সংখ্যালঘুরা বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ফলেই গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে বিপুল সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। রাহুল চাইছেন, জোট ভেঙে যাওয়ার পরে সেই ভোটকে যতটা সম্ভব কংগ্রেসের দিকে নিয়ে আসতে।
এ ক্ষেত্রে রাহুলের যুক্তি, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে এমন কোনও সংখ্যালঘু নেতা নেই, গোটা রাজ্যে জুড়ে যাঁর দাপট রয়েছে। তাঁর নির্দেশ, সেই শূন্যস্থানটাই পূরণ করতে হবে কংগ্রেসকে।
তৃণমূলের অবশ্য দাবি, তারা যে মুসলিমদের আস্থা অর্জনে সফল, সেটা পঞ্চায়েত ভোটেও প্রমাণিত। সাচার কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে মুসলিমদের ক্ষমতায়নের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার যে পদক্ষেপ করেছেন, গোটা দেশে তা নজিরবিহীন। কিন্তু রাহুলকে রাজ্য কংগ্রেসের সংখ্যালঘু যুব নেতারা জানিয়েছেন, আসলে সাচার কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু উন্নয়নে কেন্দ্র যে ১৫ দফা কর্মসূচি নিয়েছে, তার রূপায়ণের কৃতিত্ব নিচ্ছে তৃণমূল। প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে তাই কংগ্রেসকে আরও আগ্রাসী প্রচার করতে হবে। তাতে রাহুল রাজি। কিন্তু তাঁর মূল বক্তব্য, ব্লক, জেলা ও রাজ্যস্তরে সংখ্যালঘু যুব নেতানেত্রী তুলে আনতে হবে। যাতে তাঁদের হাত ধরে মুসলিমদের আস্থা ফিরে পেতে পারে কংগ্রেস।
সূত্রের খবর, বীরভূমের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিমিকে রাহুল প্রশ্ন করেন, রামপুরহাট পুরসভার ছ’বারের কাউন্সিলার আপনি। কিন্তু এর ওপরে ওঠার চেষ্টা করেননি কেন? আপনিও ওপরে উঠুন। নতুন যুব নেতাও তৈরি করুন বীরভূমে। আবার সাবিনা ইয়াসমিনকে রাহুল বলেন, মুসলিম মহিলাদের বড় অংশ এখনও রক্ষণশীল ঠিকই। কিন্তু আপনি যে ভাবে মালদহের জেলা পরিষদের সভাপতি, তার পর রাজ্যে মন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই পথে হাঁটতে রাজ্যের সংখ্যালঘু মহিলাদেরও উৎসাহী করুন। এই প্রক্রিয়া যে দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তা বোঝেন রাহুল। সে কথা মেনে তিনি বলেছেন, তবে লোকসভা ভোটের আগে না হোক, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করে দেখাতে হবে।
দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক শাকিল আহমেদ খানকে রাহুল পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় সফরের জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন। লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের তরফে সম্ভাব্য মুসলিম প্রার্থী খুঁজে বের করার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে শাকিলকে। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় তাঁরা এ বার ভাল সংখ্যালঘু প্রার্থী দিতে পারলে, সেখানে তৃণমূলের যাত্রাপথ কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
|
|
|
|
|
|