স্বপ্ন দেখি না, চাপ সামলাতে চাল মোদীর
গুজরাত পুলিশের কর্তা ডিজি বানজারার পত্রবোমার পিছনে দলের মোদী-বিরোধীরা সক্রিয় বলে বিজেপিতে জল্পনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে কংগ্রেস। মোদীকে এখনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দরেও। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না’ এই মন্তব্য করে আজ নতুন জল্পনা উস্কে দিলেন মোদী। যদিও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বলছেন, একের পর এক বিতর্ক থেকে কংগ্রেস এবং দলের বিরোধীদের নজর ঘোরাতেই এমন চাল কৌশলী মোদীর।
আজ ঠিক কী বলেছেন মোদী? এ দিন গাঁধীনগরে শিক্ষক দিবসের এক অনুষ্ঠানে এক ছাত্র তাঁকে প্রশ্ন করে, “প্রধানমন্ত্রী হয়ে কি আপনি আমাদের কাছে ফিরে আসবেন?” মোদীর জবাব, “আমি কখনও এমন স্বপ্ন দেখি না, দেখবও না। গুজরাতের মানুষ আমাকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তাঁদের সেবা করার রায় দিয়েছেন এবং আমাকে সর্বশক্তি দিয়ে সেই কাজ করতে হবে।”
মোদীর এই মন্তব্য নিয়ে তেড়েফুঁড়ে মাঠে নামে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরি বলেন, “মোদীর আর প্রধানমন্ত্রী হয়ে লাভ নেই! দেশকে রসাতলে পাঠানোরও দরকার নেই! তিনি গুজরাতেই থাকুন।”
একে মোদীর ওই মন্তব্য তার উপর কংগ্রেসের আক্রমণ, দুইয়ের ধাক্কায় বিজেপির মোদীপন্থীরা বেশ অস্বস্তিতে। তাঁদের অস্বস্তি বাড়িয়ে এ দিনই গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা মনোহর পারিক্কর মন্তব্য করেছেন, “গুজরাত দাঙ্গা মোদীর রাজনৈতিক জীবনে একটা কলঙ্কের ছাপ।” বিজেপি অবশ্য এমন মন্তব্য করার জন্য পারিক্করকে ‘সেন্সর’ করেছে। কিন্তু তাদের কাছে কাঁটা হয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে মোদীর আজকের মন্তব্য। যাঁকে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার জন্য এত আয়োজন, সেই তিনিই যদি বেঁকে বসেন, তা হলে কী হবে এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দলের একাংশের মধ্যে। যদিও দলের একাধিক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, এই মন্তব্য করে মোদী আসলে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে চাইলেন।
বিজেপির এই নেতাদের বক্তব্য, প্রথমত, মোদী মোটেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছাড়েননি। আজ সকালেই টুইটারে চলতি মাসে দেশের কোথায় কোথায় যাবেন, তার তালিকা দিয়েছেন। দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, তামিলনাড়ু, ও কেরল সফরের সূচি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়ত, দলের অন্দরে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়ে মতান্তর এখনও মেটেনি। সঙ্ঘের নেতাদের চাপেও এ ব্যাপারে সায় দেননি লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা। তার মধ্যেই বানজারার পত্রবোমা। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নেই বলে মোদী আসলে তাঁর সমর্থকদের আবেগকেই উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। এতে দলের বিরোধী নেতাদের উপরে চাপ আরও বাড়বে বলেই আশা মোদীর। এই সপ্তাহের শেষে বিজেপি ও সঙ্ঘের শীর্ষ বৈঠকেও যাতে মোদীর নামে আওয়াজ ওঠে, এই মন্তব্যে তার পথই প্রশস্ত করলেন। দলের এক নেতার কথায়, “বানজারা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই মন্তব্য করে মোদী সকলের নজর কাড়ার পাশাপাশি বানজারার ঘটনা থেকে সুকৌশলে দৃষ্টি ঘোরানোরও চেষ্টা করলেন।”
মোদীপন্থী বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি বলেন, “গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী শুধু দেশের সেবার কথাই ভাবেন। শুধু গুজরাতের মধ্যে তাঁকে আবদ্ধ রাখা কঠিন। তিনি এখন কোনও পদেরই ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছেন। কংগ্রেসের কাছে কোনও কাজ নেই, তাই তাঁরা সব বিষয়ে ‘মোদী’ দেখেন!”
কিন্তু কংগ্রেস এত সহজে বিষয়টি ছাড়তে নারাজ। বিরোধী শিবিরের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে চাপে ফেলার এমন সুযোগ কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছেন না কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনকী দীর্ঘদিন পর সংসদে মোদীর ইস্তফা চেয়ে পোস্টারও তুলে ধরতে শুরু করেছেন কংগ্রেস সাংসদরা।
তবে একই সঙ্গে কংগ্রেস এ ব্যাপারেও সতর্ক যে তাঁদের এই মোদী বিরোধিতা যেন ধর্মীয় মেরুকরণকে উৎসাহ না দেয়। সে জন্য বানজারার চিঠির ভিত্তিতে কোনও সিবিআই তদন্ত দাবি করছে না কংগ্রেস। একই কারণে সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো সংঘর্ষ মামলা নিয়েও সরব নন কংগ্রেস নেতারা। তবে বানজারার চিঠি নিয়ে হইচই থামছে না। সিবিআইয়ের প্রধানকে এ দিন বানজারার চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, নতুন কোনও সূত্রের খোঁজে ওই চিঠি খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। এ দিনই ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় বানজারার বক্তব্য রেকর্ড করার দাবি জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
কংগ্রেস এখন তুলসীরাম প্রজাপতির ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় মোদীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলতে চাইছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, তুলসীরাম হিন্দু এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মানুষ। মোদী নিজে ওবিসি নেতা। তুলসীরাম হত্যার সঙ্গে মোদীর নাম জড়াতে কংগ্রেস এতোটাই সক্রিয় যে তফসিলি জাতি কমিশনের চেয়ারম্যান পি এল পুনিয়া সিবিআই প্রধানের কাছে আজ চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, তুলসীরাম হত্যার ঘটনা তদন্ত করে দেখুক সিবিআই। পুনিয়া কংগ্রেসের নেতা এবং উত্তরপ্রদেশের সাংসদ। তিনি এ ভাবে তাঁর সাংবিধানিক পদ ব্যবহার করতে পারেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.