বানজারা বোমা
আডবাণীদের দিকেও আঙুল মোদী-শিবিরের
জেলবন্দি পুলিশকর্তা ডি জি বানজারার পদত্যাগপত্র বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ কলহকে এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিল।
নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে লেখা সেই চিঠি প্রকাশ্যে আসার ২৪ ঘণ্টা পরে দেখা যাচ্ছে, দলে নেতৃত্বের সঙ্কট চরমে। সমন্বয়ের চূড়ান্ত অভাব। সন্দেহ-অবিশ্বাসের চোরাবালি। এবং প্রত্যেক শীর্ষ নেতাই অন্য শীর্ষ নেতাকে এই পরিস্থিতির জন্য চোরাগোপ্তা দায়ী করছেন।
সঙ্ঘ নেতৃত্বের কাছে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন যে, ৬ তারিখ, শুক্রবার সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেই তাঁর নাম প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হোক। তা না হলে তাঁর পক্ষে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো হিন্দি বলয়ের রাজ্যে ভোট বাড়ানো কঠিন। কিন্তু লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজের মতো শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতারা চাইছেন, পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটের পরে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই বানজারা-কাণ্ড দলে নতুন সঙ্কট এনে দিল। ধাক্কা খেল সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে মোদীর ভাবমূর্তি নির্মাণের প্রয়াসও।
শিল্পবন্ধু হিসেবে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পরিচিতি সুবিদিত। প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নেমে শিল্পমহলকে আরও বেশি করে কাছে টানতে চাইছেন মোদী। সেই লক্ষ্যে ৯ ও ১০ তারিখ ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ শিল্প সম্মেলনের বিশেষ সংস্করণ আয়োজন করতে চলেছেন তিনি। কিন্তু ঠিক তার আগে ভুয়ো সংঘর্ষে সংখ্যালঘু হত্যার আঁচ গায়ে এসে পড়ায় মোদীর সংস্কার এবং উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তিও ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু তার থেকেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হল, মোদীর বহুত্ববাদী নেতা হয়ে ওঠার চেষ্টা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মোদী এবং বিজেপি নেতৃত্ব বারবার প্রচার করছেন যে, তাঁরা সংখ্যালঘু বিরোধী নন। এর উদ্দেশ্য যে সংখ্যালঘু ভোট পাওয়া তা নয়। সেটা যে খুবই কঠিন কাজ, তা বিজেপি নেতারা জানেন। কিন্তু হিন্দু সমাজের মধ্যে যে উদার অংশটি রয়েছে, তাদের বার্তা দিতে মরিয়া বিজেপি। এই অংশের সামনে নিজেদের তারা বহুত্ববাদী এবং গণতান্ত্রিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কারণ, বৃহত্তর হিন্দু সমাজের ভোট না-পেলে দিল্লির মসনদ দখলের সম্ভাবনা ঘিরে যথেষ্ট সংশয় তৈরি হবে। এই অবস্থায় সোহরাবউদ্দিন, তুলসীরাম প্রজাপতি-সহ চারটি ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় মোদীর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তাঁর প্রতি অনাস্থা বাড়ল বই কমলো না।
জাতীয় নেতা হিসেবে মোদীকে তুলে ধরার লক্ষ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর সম্পর্কে আমেরিকার বিরূপ মনোভাব প্রশমিত করার যে চেষ্টা চলছিল, বানজারার পত্রবোমা তাতেও জল ঢেলেছে। সেই চিঠির আঘাত সামাল দিতে আজ বানজারার ইস্তফা গ্রহণ করেনি গুজরাত সরকার। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, সিবিআই যদি বানজারার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে, তা হলে পদত্যাগী ওই আইপিএস অফিসার রাজসাক্ষী হয়ে যেতে পারেন। সেই সম্ভাবনায় জল ঢালতেই পদত্যাগ স্বীকার না-করে তাঁকে সরকারি অফিসার হিসেবে ধরে রাখা হলো।
এমনিতে বানজারার চিঠির পিছনে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে মোদী শিবির। তাঁরা বলছেন, রীতিমতো আইনি পরামর্শ নিয়ে গুছিয়ে যে চিঠিটা লেখা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট। তার উপর সেটা ফাঁস করার সময়টাও বাছা হয়েছে হিসেব কষে যখন সনিয়া গাঁধী দেশে নেই, প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ায় এবং সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত ও আরএসএস নেতা ভাইয়াজি জোশী দিল্লিতে। ফলে বিতর্কের প্রাথমিক ধাক্কা বিজেপি তথা সঙ্ঘ নেতৃত্বকেই সামলাতে হবে, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে নয়।
কিন্তু ঘটনা হল শুধু কংগ্রেসকেই দোষারোপ করে ক্ষান্ত হচ্ছে না মোদী শিবির। তাদের অভিযোগ, এর পিছনে আডবাণী-সুষমারাও রয়েছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মোদীর পথে কাঁটা তৈরি করতে চাইছেন তাঁরা। কারণ একটাই, প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হওয়ার বাসনা। যে দৌড়ে রয়েছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ নিজেও। বানজারা কাণ্ডে বিজেপি শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মোদীর আইনজীবী তথা বহিষ্কৃত বিজেপি নেতা রাম জেঠমলানীও।
সন্দেহের এই কাঁটা স্বাভাবিক ভাবেই সঙ্কট ডেকে এনেছে বিজেপি শিবিরে। যার প্রতিফলন ঘটেছে সংসদেও। সুষমা লোকসভায় বিজেপি-র দলনেত্রী। আর রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি ঘোষিত ভাবেই মোদী-সমর্থক। গত কয়েক দিন ধরে মোদীর নাম অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার জন্য বিভিন্ন দলীয় মঞ্চে জোরদার সওয়াল করেছেন তিনি। এহেন পরিস্থিতিতে সংসদে সুষমা যে দিকে চলছেন, জেটলি যাচ্ছেন তার সম্পূর্ণ বিপরীতে।
সংসদের অচলাবস্থা কাটানো নিয়ে আজ আডবাণীর ঘরে বৈঠক করতে আসেন সংসদীয়মন্ত্রী কমল নাথ ও অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁদের সামনেই বিজেপি নেতাদের কলহ ফুটে বেরোয়। প্রশ্ন ওঠে রামলালের মতো অ-সাংসদ সঙ্ঘ নেতা কেন বৈঠকে উপস্থিত। বিরক্ত জেটলি বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসেন। তা ছাড়া, খাদ্য সুরক্ষার পর আজ লোকসভায় পেনশন বিলও বিজেপি সমর্থন করেছে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের অবস্থান নিয়েই দলে নানা মুনির নানা মত।
সব মিলিয়ে লোকসভা নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, আর সেই যুদ্ধের নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যওয়াড়ি সফর যখন শুরু হওয়ার কথা, ঠিক তখনই বিজেপি-তে হতাশার হাওয়া। দল কার্যত ছত্রভঙ্গ।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.