খাঁড়িতে হাঁড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার নবজাত
খাঁড়িতে মাছ ধরতে গিয়ে হাঁড়ি ভাসতে দেখে পাটকাঠি দিয়ে নাড়িয়ে দেখেন মৎস্যজীবী গণেশ মোহন্ত। স্থানীয় কৃষিজীবী কলম্বাস ডাঙ্গোয়ার কাছেই ছিলেন। তিনি সাহস করে জলে নেমে মাটির হাঁড়ির কাপড় সরাতেই দেখেন ফুটফুটে এক শিশুপুত্র। বুধবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার কুয়ারন এলাকার ঘটনা। খাঁড়ির জলে জ্যান্ত শিশু ভেসে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। খাঁড়ির পাড়ে প্রায় গোটা গ্রামের ভিড় মাঠের কাজ ফেলে চলে আসেন। কলম্বাসের স্ত্রী টেরেসাদেবী সদ্যোজাতকে কোলে নেন। শিশুটিকে লালনপালনের জন্য গ্রামে কয়েক জন দাবি তুলে কাড়াকাড়ি শুরু করে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ডিএসপি উত্তম ঘোষ বলেন, “খাঁড়ির জলে মাটির হাঁড়িতে সদ্যোজাত উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। শিশুটির আসল অভিভাবকদের খোঁজ চলছে।” বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার অসিত দেওয়ান বলেন, “শিশুপুত্রটি একদিন আগেই জন্মেছে বলে মনে হচ্ছে। শিশুটিকে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করে চিকিৎসা চলছে। শিশুটি ভাল আছে।”
সেই সদ্যোজাত। বুধবার ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।
এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ চকভৃগু অঞ্চলের কৃষ্ণনগর এলাকায় আত্রেয়ী নদীর কাশিয়াখাঁড়িতে জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন পাশের কুয়ারন গ্রামের মৎস্যজীবী গণেশবাবু। তিনি জানান, উত্তরদিক থেকে মাটির হাঁড়িটি ভেসে আসে। খাঁড়ির ধারে ঘাসপাতায় হাঁড়িটি আটকে ছিল। পাটকাঠি দিয়ে নাড়িয়ে দেখছিলাম সে সময় কলম্বাসের কথায় হাঁড়িটি ওপারে ঠেলে দিয়েছিলাম। ওর মধ্যে জ্যান্ত শিশু থাকবে কল্পনাতেই ছিল না। এরপরই কলম্বাস ডাঙ্গোয়ার জলে নেমে হাঁড়িটি তুলে কাপড় সরাতেই সবাই আমরা অবাক। হাঁড়িতে ফুটফুটে শিশুপুত্র হাতপা ছুঁড়ছিল।
এদিন আদিবাসী অধ্যুষিত কুয়ারন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটিকে নিয়ে গ্রামে জটলা। গ্রামের প্রবীণ মাইকেল সুরিন বলেন, “ভগবানই ওই শিশুকে আমাদের গ্রামে পাঠিয়েছেন। তা না হলে এইভাবে মাটির হাঁড়ির মধ্যে থেকে জলে ভেসে রীতিমত জীবিত থাকে কি করে? তাছাড়া রাত থেকে মেঘলা আকাশ বৃষ্টি হলে হয়ত শিশুটি বাঁচত না।” মাটির হাঁড়ির ওপর ডালি চাপিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে সম্ভবত ভোর রাতেই সদ্যোজাতকে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলে গ্রামবাসীদের অনুমান। স্থানীয় বধূ ফিলমিনা সুরিনের দাবি, তিনিই শিশুপুত্রটি নিয়ে মানুষ করবেন। এলাকার কৃষিজীবী নিরঞ্জন সরকারের স্ত্রী পুষ্প দেবী বলেন, “আমার সন্তান নেই। আমার কাছে ও ভালই থাকবে।” গ্রামেই শিশুকে রেখে বড় করা হবে বাসিন্দারা দাবি করেন। উপপ্রধান চন্দন দাস বলেন, “শিশুটি হয়ত হোমে ঠাঁই পাবে। কিন্তু শিশুটিকে নিতে ইচ্ছুক আর্থিক সঙ্গতিপূর্ণ বাবা মায়ের স্নেহে মানুষ হলে ভাল হয়। পঞ্চায়েতের তরফে প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।” কৃষিজীবী কলম্বাস ও টেরেসাদেবীর ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী তিনটি মেয়ে। ঈশ্বরই তাঁদের ওই শিশুকে পাঠিয়ে ছেলের আশা পূর্ণ করতে চান বলে দাবি করে ডাঙ্গোয়ার দম্পতি বলেন, “আমরা মানুষ করব। সুস্থ হলে আমরা প্রশাসনের কাছে শিশুটিকে চাইব।” বেলা ১০টা নাগাদ শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ ওই গ্রাম থেকে নিয়ে আসার সময় ওই দম্পতি পুলিশের জিপে উঠে বসেন। কলম্বাস ও টেরেসাদেবী থানা হয়ে হাসপাতালে শিশুকে ভর্তি পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিলেন।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.