আলিমুদ্দিন
ভাবমূর্তি উদ্ধারে কর্পোরেট পদ্ধতিতে মূল্যায়ন
র্পোরেট দুনিয়ায় এর চলতি নাম ‘অ্যাপ্রাইজাল’। মানে, বছর শেষে কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন। এ বারে সেই একই মূল্যায়নের পদ্ধতি চালু হতে চলেছে রাজ্যের সিপিএম নেতাদের জন্য। সিপিএম সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটের আগে তারা এ ভাবেই ছেঁকে নিতে চাইছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সক্রিয় নেতাদের। একই সঙ্গে জনবিচ্ছিন্ন ও অস্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের ক্ষমতা কমাতেও তৎপর দলীয় নেতৃত্ব।
মূল্যায়নের এই নতুন রীতিকে দলীয় পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘সাংগঠনিক অডিট’। রীতিমতো ‘প্রোফর্মা’ ছাপিয়ে নেতাদের তা দেওয়া হবে। নেতাদের কথায় ও কাজে মিল আছে কি না, তার ভিত্তিতেই করা হবে মূল্যায়ন। শুধু এই রাজ্যে নয়, সারা দেশের কোথায় সিপিএম এর আগে এমন মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু করেনি। দলের একটি সূত্রে বলা হয়েছে, ক্যাডারভিত্তিক পার্টি হওয়ার ফলে তাদের পক্ষে এই ধরনের মূল্যায়ন করা সহজ। এবং সে কারণেই কংগ্রেস বা তৃণমূলে কর্মীদের কাজের এমন হিসেবনিকেশ করা কঠিন।
কী থাকছে এই মূল্যায়ন ব্যবস্থায়? দলীয় সূত্রে খবর, বিভিন্ন স্তরের নেতাদের কাজের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় দেখে নিতে চাইছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। যেমন,
নেতা দলীয় সভায় যা বলছেন, সম্মেলনের সাংগঠনিক রিপোর্টে তার প্রতিফলন ছিল কি না?
কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে নেতার অভিযোগ কতটা সত্যি?
আধা-নিষ্ক্রিয় কর্মীদের সক্রিয় করতে নেতা আদৌ কোনও ভূমিকা নিচ্ছেন বা নিয়েছিলেন কি না?
কোনও জেলা কমিটির সদস্য বা রাজ্য কমিটির সদস্যের উপরে যে দায়িত্ব ছিল, তিনি তা পালন করছেন কি? সংগঠনকে চাঙ্গা করতে তিনি কোনও পদক্ষেপ নিয়েছেন কি?
এই মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলকেও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে, জেলার নেতারা যা বলেছিলেন, সেই মতো ফল হয়েছে কি? না হলে কেন হল না? শাসকদলের সন্ত্রাস মোকাবিলার কোনও পথ কি ভাবা হয়েছে? কোনও ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট নেতা কি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন? কী ভাবে জানাচ্ছেন পথে নেমে, নাকি বাড়িতে বসে সাংবাদমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করে?
এমনই এক ঝাঁক প্রশ্নের জবাব নিয়েই তৈরি হবে মূল্যায়ন রিপোর্ট। সিপিএমের এক পলিটব্যুরোর সদস্য জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। এই প্রক্রিয়ায় নেতারা ঠিক বলছেন কি না, তা খতিয়ে দেখবে ঊর্ধ্বতন কমিটি। যেমন, জোনাল কমিটির সদস্য ঠিক বলছেন কি না, দেখবে জেলা কমিটি। আবার জেলা কমিটির সদস্য সত্যি বলছেন কি না, দেখবে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী। ঠিক এ ভাবেই রাজ্য কমিটির কোনও সদস্য কাজ ঠিকমতো করছেন কি না, তা দেখবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর কাজ দেখবে কেন্দ্রীয় কমিটি, তাদের কাজ দেখবে পলিটব্যুরো। আর পলিটব্যুরো সদস্যদের কাজ দেখবেন খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক। অর্থাৎ, প্রকাশ কারাটকেও আলিমুদ্দিনের এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার কথা ভাবা হয়েছে।
সিপিএম পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতেই এই পদ্ধতি চালু হচ্ছে।” এবং এই ‘অ্যাপ্রাইজালের’ রিপোর্টের ভিত্তিতে কিছু নেতার পদাবনতিও হতে পারে। কেন এই চিন্তাভাবনা? দলের এক নেতা জানিয়েছেন, পরপর ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরে এই পদ্ধতিতেই দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের সামনে তুলে আনতে চাইছে দল। একই সঙ্গে ওই নেতার জনভিত্তিও ভাল হতে হবে। পাশাপাশি জনগণের কাছে যাঁদের ভাবমূর্তি ভাল নয় বলে বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হতে পারে।
দলের একটি অংশের বক্তব্য, দলের একটা বড় অংশের জনভিত্তি এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে যে গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে মানুষের মন আঁচই করা সম্ভব হয়নি। দলীয় নেতৃত্বের তরফে যে রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল, তা বাস্তবে মেলেইনি। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটেও দেখা গিয়েছে, দলের ভূমিক্ষয় মেরামত করা যায়নি। তাই পার্টির গঠনতন্ত্র ও গোষ্ঠী রাজনীতির সুযোগ নিয়ে যে সব জনবিচ্ছিন্ন বা অস্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা এত দিন ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন, তাঁদের সেই কাজ বন্ধ করতে তৎপর হয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা।
শুক্রবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। শনি-রবি দু’দিন বর্ধিত রাজ্য কমিটির সভা। সেখানে জেলার নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। ওই সভায় প্রকাশ কারাটের উপস্থিতিতেই ওই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করতে চাইছে আলিমুদ্দিন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটিতে অবশ্য মঙ্গলবারই এটি চালু হয়েছে, জানিয়েছেন জেলা সম্পাদক গৌতম দেব।
সম্প্রতি দলীয় মঞ্চে বুদ্ধবাবু জানিয়েছেন, মানুষ যে সব নেতার মুখ দেখতে চাইছে না, তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন। শুরু হচ্ছে সেই প্রক্রিয়াও। নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে বলেই মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। দলের একটি অংশের বক্তব্য, ভাবমূর্তি ভাল না হওয়া সত্ত্বেও উত্তর ২৪ পরগনার মজিদ মাস্টার, হলদিয়ার লক্ষ্মণ শেঠ থেকে শুরু করে পশ্চিম মেদিনীপুরের তপন ঘোষ, সুকুর আলি সকলেই বহাল তবিয়তে জেলা কমিটিতে রয়েছেন। এঁরা ছাড়াও আরও কয়েক জন নেতাকে নিয়ে আলোচনা চলছে আলিমুদ্দিনে। সব মিলিয়ে, লোকসভা ভোটের আগে দলকে ঝাঁকুনি দিতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.