শিক্ষক ‘দি বস’কে প্রণাম ই-পোস্টে
ভাদ্রের প্যাচপ্যাচে গরমে জবজবে শরীরে আনাজের থলিটা ধপাস করে মেঝেতে রাখলেন অবিনাশবাবু। স্ত্রীকে বললেন, “বুঝলে, সব গোল্লায় গেল! আরে বাবা, তোরা তো ছাত্র, না কী! ঢিপ করে প্রণাম কর,তা নয়। ফেসবুকে নাকি প্রণাম পোস্ট করেছে।’
হ্যাঁ, অবিনাশবাবুর একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। কিন্তু অপারেট করে তাঁর সপ্তদশী কন্যা সহেলি। বাবার উদ্বিগ্ন কণ্ঠ শুনে এ-ঘরে এসে বাবাকে প্রণাম করে সহেলি। বলে, “আমার প্রথম শিক্ষক, মাই ডিয়ার ড্যাডি! তুমি কত জনপ্রিয়, জানো? ফেসবুকের পেজ ভর্তি ছাত্রদের পাঠানো শ্রদ্ধাঞ্জলিতে। মাই গ্রেট ফাদার।”
অবিনাশবাবু একটু সেকেলে ধরনের হলেও কী এক অদ্ভুত গুণে তাঁর জনপ্রিয়তার খামতি নেই। তাই তিনি নবীন শিক্ষকদের ঈর্ষণীয়। মাস কয়েক হল, অবিনাশবাবু মেয়ের হাত ধরে সাইবার ওয়ার্ল্ডে একটু একটু করে ঢুকে পড়েছেন। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অনলাইনে চ্যাটিং-এ বসতে তাঁর ভালই লাগে। কত খোঁজখবর করে তারা। গর্ব হয়।
আজ স্ক্রিনে চোখ রাখতেই দেখেন একটা ছবি। ‘হ্যাপি শিক্ষক দি বস্’। অবিনাশবাবুর চোখ তো চড়কগাছ। বলে কী! শিক্ষককে ‘বস’ করে দিল লিটন! এক সময়ে শিক্ষককে অনেকেই ‘বস্’ বলে মানত। সে সব দিন পেরিয়ে গিয়েছে। আইনের জাঁতাকলে শিক্ষক এখন ছাত্র-অভিভাবক সহ সবার শাসনে শাসিত ছেঁড়া শালপাতা বৈ কিস্যু তো নয়! ছাত্রদের এখন নাকি শুধু আদর দিতে হবে, যাতে তাদের বাঁদরামির শিক্ষাটাও পূর্ণ হয়। যুক্তি অকাট্য। শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ হয়, তা হলে আর ‘বাঁদর’ হওয়াটাও বাদ থাকে কেন রে বাবা! বকাঝকা? ওরে বাবা! ছাত্রের যদি মানসিক বিকৃতি ঘটে! তা হলে তো সোজা শ্রীঘর! এর পরেও শিক্ষক = দি বস্!
স্কুলে শিক্ষক দিবসে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী আসেনি। যারা এসেছে, তারা বেশির ভাগই দায় সারতে। বাড়ির পথে দেখলেন, চৌরাস্তায় বিরাট মঞ্চ বেঁধে চলছে শিক্ষক দিবসের প্রোগ্রাম। তরুণ ছাত্রনেতার কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছে। কৌতূহলে ঘাড় ঘোরাতেই অবিনাশবাবু কেমন নস্টালজিক হয়ে পড়েন। বছর সাতেক আগের এইচ এস দিতে এসেছিল এই ছেলেটি। পকেটস্থ ‘জ্ঞানসম্ভার’ বার করতেই বাধা দেন অবিনাশবাবু। অতঃপর ছেলেটির সুভাষণ“কেন পকেটস্থ ‘জ্ঞানালোক বটিকা’ প্রকাশে বাধা দিচ্ছেন? আমরা আলোর পথযাত্রী।” সেই ছেলেই আজ শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধায় নতবাক!
বাড়ি ফিরে অবিনাশবাবু বসেছেন ফেসবুক খুলে। চ্যাট-এ প্রতাপ। নিউ ইয়র্কে থাকে। “প্রণাম নেবেন স্যার। আজ ফিফ্থ সেপ্টেম্বর। নিউ ইয়র্কে কত আলো! মনে হয়, আপনাদের অন্তর থেকে উৎসারিত আলোই আমার চার দিকে ঘোরে সারাক্ষণ।”
“না না, মা-বাবা, আর নিজের চেষ্টায় এ আলো অর্জন করেছ।”
“না স্যার। আপনি আর আপনারা আমার...”
অবিনাশবাবুর মনের সমস্ত আবেগ গলায় এসে কুণ্ডলী পাকিয়ে রইল। তাঁর চোখের কোণে অশ্রুর ঢেউ।

(বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.