অনন্ত জলরাশির মাঝখানে জেগে রয়েছে মাত্র বিঘা চারেক ডাঙা। সেখানে রয়েছে ‘নির্মলচর জুনিয়ার হাইস্কুল’ আর নির্মীয়মাণ একটা ফ্লাড শেল্টার।
বস্তুত জেগে নেই, জাগিয়ে রাখা হয়েছে ওই ডাঙাটুকু। চর মহিষমারি এলাকার ওই ডাঙার চার দিকে কোমর সমান মাটির বাঁধ দিয়েছেন নির্মলচরের বানভাসি মানুষ। চরের মাটি তো আদতে পলি, অর্থাৎ বালিমাটি। তাই পদ্মার জলের ঢেউ থেকে রক্ষা করতে ওই বাঁধ ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছেন, মেরামত করছেন তাঁরা। নইলে শ’ দুয়েক গরু ছাগল আর হাজার খানেক বন্যার্ত মানুষের ওই জরুরি আশ্রয়টুকুও প্লাবিত হয়ে যাবে।
গত ১২ দিন ধরে তাঁরা এ ভাবেই প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করছেন। কিন্তু কতক্ষণ? পদ্মার জল কমার লক্ষণ নেই। বুধবারও জল বেড়েছে। এ দিন দফায় দফায় বৃষ্টিও হয়েছে। এ দিনের ফুলে ওঠা ঢেউ-এর আছাড়ে বালিমাটির বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে গ্রামের লোকজন ভাঙাবাঁধ রক্ষা শুরু করে। পদ্মানদীর মাঝি আনসারুল শেখ বলেন, “কতক্ষণ পারব জানি না। তবে চেষ্টা তো করতেই হবে।”
নির্মীয়মাণ দোতলা ফ্লাড শেল্টারে এখনও দরজা-জানালা লাগানো হয়নি। তবে ছাদ ও চারপাশের দেওয়াল রয়েছে। |
ফ্লাড শেল্টারের পাশেই রয়েছে বছর চারেক আগে গড়ে তোলা ‘নির্মলচর জুনিয়র হাইস্কুল’ ভবন। ওই দু’টি ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন চর মহিষমারি, চর কৃষ্ণপুর, হাঁসচর ও নাসিরেরপাড়ার বানভাসি মানুষ। সংখ্যায় হাজার খানেক। আর ওই স্কুলের মাঠে আশ্রয় মিলেছে শ’ দুয়েক গরু-ছাগলের।
স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ডলি বিবি বলেন, “১২ দিন ধরে এখানে কোনও মতে টিঁকে আছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রধান, বিডিও, সভাপতি-- কেউই এক বারও আসেনি।” ওই ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য তৃণমূলের মহম্মদ উকিল হাসান। তিনি বলেন, “হাজারের বেশি লোক আছে এখানে। অথচ স্কুলের তিনটি নলকূপের মধ্যে ২টি খারাপ। স্কুলের তিনটি শৌচালয়ের মধ্যে দু’টি তালাবন্দি।” ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম অবশ্য প্রতিশ্রুতি দেন, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তিনি বাকি দু’টি শৌচালয়ের তালা খুলে দেবেন। নিমীর্য়মাণ ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি সাবিনা বিবি বলেন, “১২ দিনের বানে ঘরের চাল-ডাল সব শেষ হয়ে গিয়েছে। জ্বালানিও নেই। উনুন বন্ধ। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে
খাব কি?”
মাঠের ধান, পাট, ভুট্টা, পটলের খেত, শাক-সব্জি জলের তলায়। গরু-ছাগলের খাদ্যের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। রানিতলার নির্মলচরের ওই এলাকা থেকে বাংলাদেশ ৬ কিলোমিটার দূরে আর স্থানীয় আখরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত ভবন ৭ কিলেমিটার দূরে। এমন একটি ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক অবস্থানে থাকা ওই ফ্লাড শেল্টারে অনেকের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব আরসাদ আলি। তিনি বলেন, “সরকার নৌকায় আমাদের নিয়ে যাক। না হলে এটাই শেষ
বন্যা দেখা!” |
তৃণমূল নেতাকে খুনের চেষ্টা, ধৃত ১
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তৃণমূল নেতাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ গোপাল গোপাল মণ্ডল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। ধৃতের বাড়ি কৃষ্ণনগরের ভীমপুর-পালপাড়া এলাকায়। বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওই যুবককে ভীমপুর বাজারে তৃণমূলের কৃষ্ণনগর-১ ব্লক সভাপতি শৈলেন ঘোষকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খুনের চেষ্টা করে অভিযোগ। শৈলেনবাবুর দাবি, “আমি বাজারে দাঁড়িয়েছিলাম। কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী গোপাল সেই সময় আমার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের লোকজন তাকে জাপটে ধরায় আমি রক্ষা পাই। হট্টগোলের মধ্যে গোপালের দুই শাগরেদ চম্পট দেয়।” গোপালকে ধরে স্থানীয় লোকজন মারধরে করে। তারপর তাকে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে পুরে দেওয়া হয়। খানিকপরে পুলিশ এসে ওই যুবককে গ্রেফতার করে। জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি অসীম সাহা বলেন, “পুরোটাই সাজানো গল্প। গোপালের কাছে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তৃণমূলের লোকজন আমাদের কর্মীর পকেটে আগ্নেয়াস্ত্র পুরে দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।” জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, “ধৃত যুবকের কাছ থেকে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র ও দু’রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।” |