ছাত্র পড়িয়ে বেঁচে থাকার রসদ খোঁজেন বৃদ্ধ শিক্ষক
য়স ৭৬। বার্ধক্যজনিত রোগে অশক্ত শরীর। কিন্তু মনের জোর তাতে হার মানেনি। মহিষাদল থানা এলাকার নাটশাল গ্রামের অনিরুদ্ধ জানা আজও পড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ৪০ বছর পড়িয়ে বছর পনেরো আগে অবসর নিয়েছেন গেঁওখালি উচ্চবিদ্যালয় থেকে। এখন পড়ান রামপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম শিক্ষায়তনে। বলাবহুল্য বিনা পারিশ্রমিকে। বাড়ি থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে স্কুল। যেতে হয় বাস বা ট্রেকারে চেপে। এই বয়সে অসুবিধা হয় না? এক গাল হেসে অনিরুদ্ধবাবু বলেন, “ছাত্রদের ছাড়া আমি বাঁচব না। ওরাই আমার অক্সিজেন।”
ছোটবেলাটা কেটেছে খুব কষ্টে। বাবা প্রকৃতিরঞ্জন জানা এক আত্মীয়ের দোকানে কর্মী ছিলেন। সামান্য উপার্জনের টাকায় সংসার চলত কোনও রকমে। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেই মহিষাদল রাজ স্কুল ও কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ১৯৫৮ সালে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন গেঁওখালি উচ্চবিদ্যালয়ে। তাঁর শিক্ষক জীবন শুরু হয় মাত্র সত্তর টাকা বেতন দিয়ে। হুগলি নদীর পাড়ে মাটি, টালির ভাঙা স্কুল ঘর ও দরিদ্র ছাত্রদের পিছনেই চলে

অনিরুদ্ধ জানা।
—নিজস্ব চিত্র
যেত সেই বেতনের টাকা। স্বামীজীর জন্মশতবর্ষ পালনের বছর ১৯৬২ সালে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষক শিক্ষণ মন্দিরে পড়ার সময় সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্যে আসেন অনিরুদ্ধবাবু। তখন থেকেই ছাত্রদের সেবায় নিজেকে সমর্পণ করে দেন।
স্কুলই ছিল জীবন। রাতে স্কুলের বেঞ্চ জোড়া লাগিয়ে মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে সেখানেই শুতেন। সপ্তাহান্তে বাড়ি যেতেন। এসব কথা আজ অকপটে স্বীকার করেন তাঁর ছাত্র ও পরে তাঁর সহকর্মী হওয়া গেঁওখালির বাসিন্দা গোপাল দাস। স্বামীর ভাবগতিক বুঝে স্ত্রী ছবিরানিদেবী গেঁওখালি নিকুঞ্জ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নেন। তিনি বলেন, “উনি সংসার দেখেননি। স্কুল, ছাত্র, আশ্রম নিয়েই থাকতেন। এক ছেলে, এক মেয়ে আমাদের। আমি চাকরি শুরু না করলে সংসারটাই ভেসে যেত।”
স্কুলে যোগদানের দু’বছর পর থেকেই ছাত্রদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গতদের কাছে ছুটে যেত যারা। এলাকাবাসী আজও মনে রেখেছেন, কী ভাবে তিনি বাড়ি থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ধরে এনে পড়াতেন। গেঁওখালি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “গোটা শিক্ষক জীবন জুড়েই স্কুলের উন্নয়নে বড় ভূমিকা নিয়েছেন অনিরুদ্ধবাবু। উনি আমাদের আদর্শ।” গেঁওখালি স্কুলেরই তাঁর এক ছাত্র শক্তিপ্রসাদ মিশ্র এখন পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষক। ১৯৮৯ সালে শক্তিপ্রসাদবাবু শিক্ষা ও সংস্কৃতিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য উপ-রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমাদের ছাত্রজীবনে সর্বত্রই তিনি বিরাজ করতেন। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে কাজ করার অনুপ্রেরণা তার কাছ থেকেই পেয়েছি। একজন ছাত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।”
নতুন স্কুল রামপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমেরও সকলের মুখে তাঁর নাম। আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক স্বামী বিশ্বনাথানন্দ বলেন, “এমন উদার মনের শিক্ষক আজকাল পাওয়া যায় না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.