নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন বনাম ললিত মোদী ‘রাউন্ড ওয়ান’-এ এগিয়ে ছিলেন সরে দাঁড়ানো বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন বনাম ললিত মোদী ‘রাউন্ড টু’-তে প্রবল আক্রমণাত্মক মেজাজে প্রত্যাবর্তন ঘটালেন প্রাক্তন আইপিএল কমিশনার।
বুধবার রাতে একটি চ্যানেলে শ্রীনিকে মুখোমুখি যুদ্ধের ডাক দিলেন মোদী। হুঙ্কার দিয়ে বলে রাখলেন, “খেলা শেষ কে বলল? খেলা তো সবে শুরু!” তাঁর বিরুদ্ধে জমা পড়া রিপোর্টের পাল্টা হিসেবে শুনিয়ে রাখলেন, “আর বোর্ডে কী চলছে? কারও জামাই ফিক্সার। কেউ ম্যাচ ফিক্স করছে। আর কেউ কেউ তো সব কিছুই ফিক্স করে বসে আছে!” এবং সব শেষে জানিয়ে দিলেন, শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে তিনি মোটেই সরে আসছেন না। পালানোর কোনও ইচ্ছে নেই তাঁর।
শ্রীনির বোর্ড যে তাঁকে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের চেন্নাই বৈঠকে আজীবন নির্বাসনে পাঠাতে চলেছে— এই খবর মিডিয়ায় বেরোনোর পরেও প্রথম দিকে কিছু বলতে শোনা যায়নি মোদীকে। কোনও টুইটও করেননি। কিন্তু এ দিন জানাজানি হয় যে, মোদীর বিরুদ্ধে যে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে বোর্ডে, তা সদস্যদের দেওয়া হয়েছে। এবং সেই রিপোর্টের সূত্র ধরেই বুধবার দিনভর মোদীকে কেন্দ্র করে মারাত্মক সব অভিযোগ বেরিয়ে আসতে থাকে। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় দেশজ মিডিয়ায়। অভিযোগনামা এ রকম:
নির্বাসিত থাকাকালীন মোদী আইপিএলের ‘বিদ্রোহী’ লিগ তৈরি করতে উদ্যত হয়েছিলেন!
ইংল্যান্ড এবং ভারতীয় বোর্ডের মধ্যে বিরোধ বাঁধানোর চেষ্টা করেছিলেন।
আইপিএলের টিম কেনার সময় দু’টো কোম্পানিকে সুবিধে করে দিতে টেন্ডার ড্রাফটে অনৈতিক কিছু ধারা যোগ করে দিয়েছিলেন রাতারাতি।
|
অভিযোগনামা |
• বিদ্রোহী লিগ তৈরির চেষ্টা।
• ইংল্যান্ড এবং ভারতীয় বোর্ডের মধ্যে বিরোধ বাধানোর চেষ্টা। • আইপিএলে টিম কেনার ব্যাপারে দুটো কোম্পানিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।
• আইপিএলে ইন্টারনেট এবং সম্প্রচারস্বত্ব নিয়ে রিগিং। |
মোদীর পাল্টা |
আমি যা যা করেছি আইপিএল কমিশনার থাকার সময়, সবই তো পরিষ্কার ভাবে বোর্ড জানে। সব কিছুই ওদের কাছে স্পষ্ট। লুকিয়ে কিছু করিনি, বরং অনেকেই অনেক কিছু জানে। |
|
|
আইপিএলের ইন্টারনেট এবং সম্প্রচারস্বত্ব নিয়ে রিগিংয়ে নেমেছিলেন।
যার পরপরই বোর্ডমহলে বলাবলি শুরু হয়ে যায়, চেন্নাইয়ে বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভার বৈঠকে মোদীর পক্ষে বাঁচা মোটামুটি অসম্ভব। আজীবন নির্বাসন এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। মোদীকে পুরোপুরি হঠাতে বৈঠকে শ্রীনির দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা অর্থাৎ একুশটি ভোট লাগবে ঠিকই, কিন্তু সেটা কোনও ব্যাপারই হবে না। ঘটনা হচ্ছে, তখনও বোর্ডমহলের কেউ আঁচ পাননি মোদী এ ভাবে পাল্টা যুদ্ধে নেমে পড়বেন।
শ্রীনির বোর্ডকে মোটামুটি তুলোধোনা করে মোদী বলতে থাকেন, “আমি যা যা করেছি আইপিএল কমিশনার থাকার সময়, সবই তো পরিষ্কার ভাবে বোর্ড জানে। সব কিছুই ওদের কাছে স্পষ্ট। লুকিয়ে কিছু করিনি, বরং অনেকেই অনেক কিছু জানে।” কিন্তু তাঁরা কারা মোদী বলতে চাননি। বরং অরুণ জেটলি-জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ‘টাইমস নাও’-কে মোদী পাল্টা বলেন, “আমি আজীবন নির্বাসন নিয়ে মোটও ভয় পাই না। আর আমি কোথাও যাচ্ছি না। পালাবও না। বরং শ্রীনিকে চ্যালেঞ্জ করছি। উনি মুখোমুখি ডিবেটে আসুন না। আমি বসতে রাজি। সেটা কাল সকালে হলেও আমার তরফে কোনও আপত্তি নেই।”
চার দিকে ‘ললিত মোদীর খেলা শেষ’ বলে আওয়াজ উঠছে, তার জবাবও দিয়ে রাখলেন। উত্তেজিত ভাবে মোদী বলে দিলেন, “খেলা শেষ কে বলল? খেলা তো সবে শুরু। আর আমি এই খেলায় স্বচ্ছন্দে নামব। দেখুন, আমি কী করেছি না করেছি, সেটা সবাই জানে। একই সঙ্গে এটাও জানে যে বোর্ডে কী চলছে। কেউ কেউ তো দেখছি সব কিছু ফিক্স করে বসে আছে। তদন্ত কমিশন বলে যে ব্যাপারটা করা হল, সেটা লোক দেখানো জিনিস ছাড়া আর কিছু নয়।” সঙ্গে পরবর্তী সংযোজন, “পুরো ব্যাপারটা যেহেতু আদালতের বিচারাধীন, তাই এখন সমস্ত কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এটা বলব যে, সত্যিটা সবাই জানতে পারবে। আর আমার নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে যদি কথা ওঠে, তা হলে বলব বাকিরাও সেটা দেখাক!”
|