নবির নাম শুনলেই চটছেন কোচ
আজ শব্দব্রহ্ম বনাম সুনীল অ্যান্ড কোম্পানি
শরথ রঙ্গসালা স্টেডিয়ামে বুধবার রাত থেকে লাইন পড়বে বৃহস্পতিবারের টিকিটের জন্য। কাউন্টার খোলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই টিকিট শেষ। যেমন হত কলকাতায় সত্তরের দশকের ডার্বি ম্যাচে।
ম্যাচের আগে তিনশো টাকার টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হবে হাজার টাকায়। সাতশোর টিকিট দেড় হাজারে।
খেলা শুরুর দু’ঘণ্টা আগে মাঠ ভর্তি হয়ে যাবে। উপচে পড়বে বাইশ হাজারের গ্যালারি। বাড়তি দর্শক ঢুকে বসে পড়বে প্রেসবক্সের সিঁড়িতে, ভি আই পি ব্লকেও। এবং প্রিয় দলকে জেতানোর জন্য চলবে নাগাড়ে চিৎকার।
এ বারের সাফে নেপালের সব ম্যাচে এই ছবি। অফিস-কাছারি বন্ধ করে টিভির সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে গোটা দেশ!
বৃহস্পতিবারের ম্যাচ তাই এগারো ‘দি গোর্খালিস’-এর সঙ্গে উইম কোভারম্যান্সের ‘ব্লু টাইগার্স’ নয়। চৌম্বকে আসল লড়াই, শব্দব্রহ্ম বনাম সুনীল অ্যান্ড কোম্পানির ।
বিদেশের মাঠে শব্দব্রহ্মের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কালে কোভারম্যান্সের টিমের পারফরম্যান্স বিশ্রী। সিঙ্গাপুর, মায়ানমার এবং তাজিকিস্তান—টানা হারের মিছিলে হেঁটেছে ভারত।
কিন্তু বৃহস্পতিবার কী হবে? “মাঠ ভর্তি থাকবে এবং সবাই স্থানীয় দলের সমর্থক। যা ফুটবলের পক্ষে আদর্শ। সেটা আমার টিমের উপর কিছুটা চাপ তো তৈরি করবেই। তবে আমরা তো তিন নম্বর ফাইনাল খেলতে নামছি। জেতার জন্য তৈরি হয়েই নামব,” বুধবার সকালে অনুশীলনের আগে ভারতের ডাচ কোচের গলায় সমীহ এবং বাস্তব মিলে একাকার।

সব বিতর্ক ভুলে অনুশীলনে মোহনরাজ-মেহতাবরা।
নেপালের বিরুদ্ধে শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে নামার আগে অবশ্য সুনীল-মেহতাবরা কিছুটা স্বস্তিতেই। নেপালকে হারাতে পারলে ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। ড্র করলেও রানার্স হয়ে শেষ চারে। হারলেও কোভারম্যান্সের টিম সেমিফাইনালে যাবে, যদি না গ্রুপের অন্য ম্যাচে বাংলাদেশ ২-০ হারিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। একই সময়ে দু’মাঠে দু’ম্যাচ। দশরথে ভারত-নেপাল আর আলচক স্টেডিয়ামে পাকিস্তান-বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম যে ম্যাচকে বলছেন, “একাত্তরের যুদ্ধের স্মৃতি মনে করাচ্ছে।”
তা সত্ত্বেও গড়াপেটার গুঞ্জন যে টিম হোটেলে উঠছে না তা নয়। ডেনমার্ক জাত পাকিস্তান স্ট্রাইকার হাসান বসির প্রকাশ্যেই প্রশ্ন করলেন, “শুনছি ভারত-নেপাল পয়েন্ট ভাগ করে নেবে ঠিক করে ফেলেছে। এটা কি গুজব না সত্যি?” ভারতের বিরুদ্ধে পাক শিবির থেকে এসব কথা বলা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘটনা হল, ম্যাচটা জিততে চাইছেন কোভারম্যান্স। না হলে কেন তিনি সুনীলকে ডেকে মজার ছলে বলবেন, “যে গোলগুলো গত দু’টো ম্যাচে করতে পারনি তার দু’টো কাল করে ফেলো।”
বাংলাদেশ ম্যাচের পর মেহতাব-মোহনরাজের ঝামেলায় মলম দিতে টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য চেষ্টার ত্রুটি করছে না। ডিনার টেবিলে খাওয়ানো থেকে এ দিন পাশাপাশি রেখে দৌড় করানো, কিছুই বাদ যায়নি। তবে শান্তির এই আবহেও তাল কাটছে রহিম নবি নিয়ে ঝামেলায়। ফেডারেশনের বিচারে দেশের এক নম্বর হওয়া নবি কেন প্রথম একাদশ থেকে বাদ, তা নিয়ে তোলপাড় জাতীয় শিবির। চার বছর কোনও ক্লাব দলেই নিয়মিত নন মোহনরাজ। তা সত্ত্বেও কেন তাঁকে খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। ফুটবলারদের উপর এতটাই নজরদারি যে, কথা বলতে সবাই ভয় পাচ্ছেন। ফতোয়া জারি হয়েছে, সরকারি সাংবাদিক সম্মেলন ছাড়া কারও নামে কোনও ‘কোট’ মিডিয়ায় বেরোলেই দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
কিন্তু কোভারম্যান্সকে কি নবি সম্পর্কে দলেরই একটি মহল ভুল তথ্য দিচ্ছে? যে জন্য নবির নাম শুনলেই চটে যাচ্ছেন জাতীয় কোচ? শোনা যাচ্ছে, সহকারী কোচ স্যাভিও মেদেইরার অতি পছন্দের ফুটবলার মোহনরাজ! এবং টিম নিয়ে ডাচ কোচ সবথেকে বেশি আলোচনা করেন স্যাভিওর সঙ্গেই। ঘটনা যাই হোক, নেপালের বিরুদ্ধে আজও নবি প্রথম একাদশে থাকবেন কি না তা বুঝতে দেননি কোভারম্যান্স। বরং সব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে এ দিনও তিনি বলে দিলেন, “কোন প্রাক্তন ফুটবলার বা কে কী টিম নিয়ে সমালোচনা করল তার আমি তোয়াক্কা করি না। সব দেশেই এরকম হয়। আসল হল ট্রফি। ভাল না খেলেও ওটা জিতলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
নেহরু কাপে কোভারম্যান্সের ‘বৃহস্পতি’ ছিল তুঙ্গে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। নেপালের ম্যাচও বৃহস্পতিবার! সেখানেও কি সঙ্গী হবে ডাচ কোচের কপাল?

টিম হোটেলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে খোশ আড্ডা নবিদের।
বুধবার থেকেই কিন্তু নেপালের যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কোচ জ্যাক স্টেফানোর চোখে-মুখে চিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠছে। কারণ তাঁর দলের দুই সেরা ফুটবলার অনিল গুরুং এবং জগজিৎ শ্রেষ্ঠা চোটের জন্য অনিশ্চিত। দু’জনেই এ দিন অনুশীলন করেননি। স্ট্রাইকার অনিল এবং মাঝমাঠের পিভট জগজিৎ কিন্তু নেপালের দুই স্তম্ভ। নেপাল কোচ এ দিন কিছু বলতে চাননি। তবে নেপালের সব থেকে দামি ফুটবলার অনিল বললেন, “ভারত শেষ দুটো ম্যাচ ভাল খেলেনি। আমরা জানি ওদের দুর্বলতা কোথায়। আমরা তো খেলবই, দর্শকরাও আমাদের সঙ্গে খেলবে।”
ভারত যে হোটেলে আছে সেখানেই আছে নেপাল। নবিকে না খেলানো নিয়ে ভারতীয় শিবিরে যখন গুঞ্জন তুঙ্গে তখন নেপাল ফুটবলাররা দিনের অনেকটা সময় কাটাচ্ছেন ‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি’ করে। কোচের নির্দেশে বুদ্ধের একটা মূর্তি রাখা হয়েছে বিশাল একটি হলঘরে। অনুশীলনে যাওয়ার আগে সেখানে অনিল-সাগর থাপাদের মানসিক-থেরাপি চলছে ঘণ্টাখানেক। ভারত বুধবার সন্ধ্যায় ব্যস্ত ছিল নেপালের খেলার সিডি দেখতে। নিজেদের ভুল কোথায় হচ্ছে তা কোচের কাছ থেকে বুঝে নিতে।
আগের দিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া ম্যাচে শেষ মূহূর্তে গোল করে বাঁচিয়েছিলেন নেপালের বিমল মাগর। ছেলেটি এ বারের সাফ কাপের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়। বছর পনেরোর বিমলকে নিয়ে নেপাল তোলপাড়। ফুটবল-পাগল একদল নেপালি ছেলে এ দিন বিমলের হাতে চারটি মুখের স্কেচ দিয়ে গেল।
মাস দেড়েক আগে অনূর্ধ্ব ষোলো সাফে এখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সাব জুনিয়র ভারতীয় দল। নেপালকে হারিয়ে। বিমল সেই দলে ছিলেন। জেতার পর সে দিন ভারতীয় ফুটবলারদের উপর গ্যালারি থেকে ছাতা, জলের বোতল ছোড়া হয়েছিল। ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল তেরঙ্গা পতাকা। সেই হারের জ্বালার কথা তুললে রোগা-সোগা বিমলের চোখ জ্বলে ওঠে। বলে দেন, “এ বার সেই হারের বদলা নিতে হবে।”
এগারো ফুটবলার, পঁচিশ হাজার নেপালি দর্শকের শব্দব্রহ্ম এবং আবেগ। টিম ইন্ডিয়া কি পারবে, দেশে ‘দৈত্য’ বাইরে ‘বামন’— সাম্প্রতিক কালে তৈরি এই অপবাদ ঘুচিয়ে নেপাল-জয় করতে?

ছবি: এআইএফএফ

পুরনো খবর:
নতুন রেকর্ড আসফাকের
সাফ কাপে ফের আরও এক রেকর্ড গড়লেন মলদ্বীপের আলি আসফাক। সাফ কাপের ইতিহাসে তিনি একমাত্র ফুটবলার, যিনি এক প্রতিযোগিতায় একাই দশ গোল দিলেন। গত ম্যাচে মলদ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল ১০-০। আসফাক করেছিলেন জোড়া হ্যাটট্রিক। বুধবার ভুটানের বিরুদ্ধে তিনি করলেন আরও চার গোল। মলদ্বীপ জিতল ৮-২। ম্যাচের পর আসফাক বললেন, “আমি খুশি। লক্ষ্য সাফ কাপ দেশে নিয়ে যাওয়া।” অন্য ম্যাচে এ দিন শ্রীলঙ্কাকে ৩-১ হারাল আফগানিস্তান। টানা দু’টি ম্যাচ জেতায় মলদ্বীপ এবং আফগানিস্তান চলে গেল সেমিফাইনালে। এই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ঠিক হবে শুক্রবার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.