গাছের নাম ‘গুরমার’। তার পাতা খেয়ে চকলেট মুখে দিলেও তা মিষ্টি লাগে না। বরং চকলেটটিকে মনে হবে বুঝি সেটি বালিপাথরের তৈরি। আবার রয়েছে ডাইনোসরদের যুগের গাছ ‘জিঙ্গবাইলোবা’! কেমন হয় সেই গাছ এখানে এলে তাও দেখা যাবে। ডানা মেলা বাঁদুড়ের মতো দেখতে ‘টাক্কর’ ফুল রয়েছে এই বাগানে। রয়েছে সেই গাছ যা থেকে আগর তেল তৈরি হয়। সুগন্ধী হিসাবে ওই তেল জগদ্বিখ্যাত। ৫ মিলিলিটার আগর তেলের দাম অন্তত ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। লোকমুখে প্রচলিত আছে কৃষ্ণবটের ঠোঙার মতো পাতায় ভগবান কৃষ্ণ নাকি ননী খেতেন। সেই কৃষ্ণবট গাছও রয়েছে এই বাগানে। না এটা কোনও জাদুনগরীর বাগান নয়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেষজ উদ্ভিদ বাগান । এমন ছয়শোর বেশি প্রজাতির ভেষজ গাছ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা না-থাকায় তা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সীমিত সময়ের কিছু প্রকল্প থেকে বাগানটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হত। বর্তমানে তেমন কোনও প্রকল্প নেই। বাগানটি গড়তে উদ্যোক্তাদের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অভয় দাস। বছর তিনেক আগে অবসর নেওয়ার পরও তিনি বাৎসরিক চুক্তির ভিত্তিতে গত ৩ বছর ধরে ওই বিভাগেই কাজ করছেন। বাগানে রক্ষণাবেক্ষণে চিন্তিত তিনি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেও তিনি জানান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগেই যদি বাগানটির দেখভালের জন্য বছরে নির্দিষ্ট অর্থ পাওয়া যায় সে জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ করেছেন তিনি। |
উপাচার্য সমীর কুমার দাস বলেন, “উদ্যান ছাত্রছাত্রীর গবেষণার কাজেও লাগে। সীমিত সময়ের কিছু প্রকল্প থেকে সেটা দেখভাল করা হলেও বর্তমানে তেমন কোনও প্রকল্প নেই। এই পরিস্থিতিতে বাগানটি যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, প্রয়োজনীয় ন্যুনতম রক্ষণাবেক্ষণ যাতে হয় সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দায়িত্ব রয়েছে। সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” যদি কোনও উৎসাহী বাগান পরিচর্যার জন্য আর্থিক সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে চান তাঁদের স্বাগত জানানো হবে বলে উপাচার্য এই দিন জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালে রাজ্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি দফতরের প্রকল্পে আর্থিক সহায়তায় ওই ভেষজ উদ্যানটি গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও রকম ব্যবস্থা ছিল না। পরবর্তীতে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সীমিত সময় প্রকল্প থেকে আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে এটি দেখভাল করা হচ্ছে। কবে কোন প্রকল্প মিলবে সেই তহবিলের টাকার উপর নির্ভর বাগানের পরিচর্যার বিষয়টি। নতুন কোনও প্রকল্প না মিললে বাগানের পরিচর্যায় দিকটিও অবহেলিত থাকে। অথচ ভেষজ উদ্যানটি ঘুরে দেখতে উৎসাহী অনেকে। ছাত্রছাত্রীদের পড়া, গবেষণার কাজে যেমন সাহায্য হয় তেমনই উৎসাহী পর্যটক থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বাগান দেখতে উৎসাহী হয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। |
ভেষজ-উদ্যান |
• ১৯৯৬ সালে রাজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের প্রকল্পে এই ভেষজ বাগানটি গড়ে তোলা হয়।
• বাগানে ছ’শোরও বেশি প্রজাতির গাছ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নেই।
• বাগান পরিচর্যার জন্য আরও অন্তত দু’জন প্রয়োজন থাকলেও টাকার অভাবে তা নেওয়া যায়নি। |
|
অভয়বাবু জানান, ছয়শোর বেশি নানা ভেষজ গাছ রয়েছে বাগানটিতে। দেখভালের জন্য ৪ জন মালি আছেন। মাসে তাদের ৪ হাজার টাকা করে দিতে হয়। পরিচর্যার জন্য আরও দুটি লোক প্রয়োজন হলেও টাকার অভাবে তা নেওয়া যায়নি। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে নার্সারি তৈরি, গাছ লাগানো, চাষিদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার কর্মসূচির মতো বিভিন্ন প্রকল্প পেলে সেখান থেকেই কিছু টাকা বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবহার করা হয়। বছর দেড়েক আগে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় ৭৬ লক্ষ টাকা মিলেছিল। তখন বাগানের পরিচর্যার বিষয়টিকে ধরে কিছু টাকা বরাদ্দ হয়। অথচ তদ্বির না করলে প্রকল্প মেলে না। দেখভালে বছরে ২ লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিলে এর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হবে বলে তাঁর দাবি।
|