সরকারি উদাসীনতায় বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে বহরমপুরের মীন বাজার। তাও বছর খানেক হয়ে গেল। কিন্তু ওই মীন বাজার চালুর ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের কাছে প্রায় দু’বিঘা জায়গার উপরে বেনফিস পাইকারি মাছের বাজার হিসেবে ওই মীন বাজার গড়ে তোলে। গত বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৎকালীন মৎস্য মন্ত্রী কিরণময় নন্দ অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই তড়িঘড়ি সেই বাজারের উদ্বোধনও করে দেন। কিন্তু তার প্রায় বছর খানেক পরে ২০১২ সালের জুনে ওই বাজার চালু হয়। তারপরেও মাত্র দু’মাস ওই বাজার চালু ছিল। এরপর থেকেই ওই মীন বাজারের গেটে তালা পড়ে যায়।
রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডের কাছে ওই মীনবাজার সাধারণ ভাবে ব্যবসার পক্ষে সুবিধাজনকই। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ীর কারণেই তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বহরমপুর বেনফিসের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সিরাজুল ইসলাম মল্লিক বলেন, “এক শ্রেণির মাছ ব্যবসায়ীর অসহযোগিতায় ওই মাছ বাজার বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই মীন বাজার চালু করা যায়নি।” |
বাজারের হাল |
• পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্য ৪২টি ও খুচরো বিক্রির জন্য ৬০টি ঘর
• কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ
• স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডের কাছে অত্যাধুনিক বাজার
• বন্ধ বাজারেও ভাড়া মেটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা |
|
বহরমপুরের প্রধানত তিনটি বড় পাইকারি মাছের বাজার রয়েছে। নতুন বাজারে, শহর লাগোয়া ভাকুড়ি ও চুনাখালি বাজার। প্রতি দিন নতুন বাজারে ১৫-২০ লক্ষ টাকার মাছ কেনাবেচা হয়ে থাকে। ভাকুড়িতে ৮-১০ লক্ষ টাকা এবং চুনাখালিতে ৩-৫ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। মীনবাজারে পাইকারি মাছ ব্যবসার জন্য যে ৪২টি দোকান ঘর রয়েছে, তার মধ্যে নতুন বাজারের ২৭ জন, ভাকুড়ি বাজারের ১৪ জন এবং চুনাখালি বাজারের এক জন মাছ ব্যবসায়ীর ঠাঁই হয়।
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ঘর ১৬২ স্কোয়ার ফুটের। সেই সময়ে প্রতি স্কোয়ার ফুট এক হাজার টাকা দরে ৩৩ বছরের লিজে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে ওই দোকান ঘর বিক্রি করা হয়। বন্ধ বাজারেও দোকান ঘরের ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ১৬২ টাকা করে গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সিরাজুলবাবু বলেন, “ওই ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ভাবে দোকান ঘরের ভাড়া মিটিয়ে দেন। তাঁদের কোনও মাসের ভাড়া বকেয়া নেই।”
এক সময়ে নতুন বাজারের সমস্ত মাছ ব্যবসায়ী বহরমপুর নতুন বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির ছাতার তলায় ছিলেন। এক টানা ১০ বছর ওই সমিতির সম্পাদক পদে ছিলেন প্রতিষ্ঠিত মাছ ব্যবসায়ী অরুণকুমার ঘোষ। সম্প্রতি নতুন বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতি ভেঙে দু’টি সমিতি গঠিত হয়েছে। তার একটির নাম বহরমপুর নতুনবাজার মৎস্য আড়তদার উন্নয়ন সমিতি। সাত জন সদস্য নিয়ে অন্য একটি সমিতি গড়ে উঠেছে, যার এখনও নামকরণ হয়নি।
অরুণবাবু বলেন, “ওই মীনবাজার চালু হওয়ার পরে নতুন বাজারের একাংশ, ভাকুড়ি ও চুনাখালির মাছ ব্যবসায়ীরা সেখানে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু নতুন বাজারের একশ্রেণির ব্যবসায়ী কথার খেলাপ করেন এবং তাঁরা মীন বাজারে যেতে উৎসাহী হননি। ফলে পাইকারি ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীদের কাছে ভুল বার্তা যায়। তাঁরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসা। বিশেষ করে মীন বাজারের ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। আমরা তখন পুরনো ব্যবসার জায়গায় ফিরে যেতে বাধ্য হই।”
তবে বহরমপুর নতুনবাজার মৎস্য আড়তদার উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক অনিল মণ্ডল বলেন, “আমাদের ৫০-৫২ জন সদস্য রয়েছেন। সকলের মীনবাজারে জায়গা হয়নি। কয়েকজন নতুন বাজারে ব্যবসা করবেন, কয়েকজন মীনবাজারে ব্যবসা করবেন, এটা হয় না। তা ছাড়া, পরিচিত ব্যবসাস্থল ছেড়ে নতুন জায়গায় গিয়ে ব্যবসা হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না, তবে এখনই মীন বাজারে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই।”
যদিও নতুন বাজার, ভাকুড়ি ও চুনাখালির মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে মীনবাজার গড়ে তোলার জন্য বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া ওই জায়গা বেছে নেয় মৎস্য দফতর। সেই সঙ্গে মাছ ব্যবসায়ীদের পরামর্শ ও পরিকল্পনায় ওই মীন বাজার নির্মিত হয়। ওই মীন বাজারে গাড়ি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। তেমনই আড়তের কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মাল ওঠানো নামানোরও সুবিধা রয়েছে, যা নতুন বাজারে নেই। মাছ ও সব্জির খুচরো ব্যবসার জন্য রয়েছে আরও ৬০টি দোকান ঘরও।
তবে ভাকুড়ি মৎস্য আড়তদার সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক অসীম হালদার বলেন, “আমরা ব্যবসা করতে চাইলেও পাইকারি ও ব্যাপারিরা মীনবাজারে আসতে আগ্রহী হননি। সকালের দিকে যখন ব্যবসার সময়, তখন ট্রেন যাতায়াতের জন্য চুঁয়াপুর রেল গেট বার বার করে বন্ধ থাকায় ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছিল। সেই সঙ্গে নতুন বাজারের আড়তদারদের একাংশের অনুপস্থিতিও ব্যবসা ক্ষতির কারণ।” চুনাখালি মৎস্য আড়তদার সমিতির (শ্যামবাজার) পক্ষে সুদীপ্ত সাহা বলেন, “আমরাও মীনবাজারে ব্যবসার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাজারের কয়েক জন ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে মীনবাজার বন্ধ করেছে। নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা ওই কাজ করেন।” অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “বিভিন্ন এলাকার মাছের বাজারের নিজস্ব কিছু রীতি, প্রথা থাকে। সেই মতো পাইকারি বাজারে মাছের দামও নির্ধারিত হয়। কিন্তু সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন বাজারে তা সম্ভব নয়। সে কারণেই কিছু ব্যবসায়ী এই ধরনের সরকারি উদ্যোগ থেকে সরে থাকতে চান। সেই মনোভাবই এই মীনবাজারেও প্রভাব ফেলেছে।” তিনি বলেন, “তবে আমরা চেষ্টা করছি সকলের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ওই বাজার চালু করার।” |