নেতা-শিক্ষিকা বিবাদে স্তব্ধ প্রকল্প, নির্জলা স্কুল
স্থানীয় কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকার দ্বন্দ্বে জলপ্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে দাঁইহাটের দুর্গাদাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরস্পরের বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে চিঠি দিয়েছেন দু’জনেই। কাটোয়ার মহকুমাশাসকের নির্দেশে দাঁইহাট চক্রের স্কুল পরিদর্শক সম্প্রতি দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য তাঁদের দু’জনকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু তাঁদের দ্বন্দ্ব মেটেনি।
দাঁইহাটের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা জবা চট্টোপাধ্যায় গত ১৬ অগস্ট জেলাশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেন, ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ওয়ার্ড শিক্ষা-স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি দীপক হাওলাদারের অসহযোগিতার কারণে স্কুলের শিশুরা পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, পানীয় জলের অভাবে মিড-ডে মিল ব্যবস্থা কার্যত ধুঁকছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা রাঁধুনিদের অনেক দূর থেকে জল আনতে হয়। স্কুলের শিশুরাও পানীয় জলের জন্য অনেক দূর যায়। তাঁর আরও অভিযোগ, দাঁইহাটের পুরপ্রধানকে বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেননি। তাই তিনি জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন। একই সঙ্গে কাটোয়ার মহকুমাশাসককেও চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকার অভিযোগ পেয়ে জেলার প্রকল্প আধিকারিক গত ৩০ অগস্ট দাঁইহাটের পুরপ্রধানকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে ওয়ার্ড শিক্ষা-স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকার মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার মীমাংসা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। ওই চিঠিতে প্রকল্প আধিকারিক আরও জানান, বিষয়টি মিটে গেলে শিশুরা পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হবে না। মিড-ডে মিলও সমস্যায় পড়বে না। ওয়ার্ড শিক্ষা-স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর দীপকবাবু মঙ্গলবার পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা স্কুলের টাকা নিয়ে অনিয়ম করেছেন। খরচের কোনও ঠিক হিসেব তিনি দিতে পারছেন না।
দীপক হাওলাদার ও জবা চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কাউন্সিলরের সঙ্গে জবাদেবীর এই দ্বন্দ্বের কারণ কী? স্কুল সূত্রে জানা যায়, জুলাইয়ে জেলা সর্বশিক্ষা অভিযান দফতর থেকে পানীয় জল প্রকল্পের জন্য ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বলেন, “ওয়ার্ড শিক্ষা-স্বাস্থ্য কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকের পরে সিদ্ধান্ত হয়, সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পড়ুয়াদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে। এর পরে টাকা তোলার জন্য বারবার বলা হলেও ওই কমিটির সভাপতি রাজি হচ্ছেন না। সাবমার্সিবলও কেনা যাচ্ছে না।” তাঁর অভিযোগ, “সভাপতি পুরো কাজটি নিজে হাতে করতে চান। আমি তা করতে দিচ্ছি না বলেই উনি পড়ুয়াদের পানীয় জল থেকে বঞ্চিত করার জন্য টাকা তুলতে দিচ্ছেন না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, পোশাকের জন্য টাকা এসেছে। কিন্তু তা-ও তুলতে বাধা দিচ্ছেন সভাপতি। স্কুল সূত্রে জানা যায়, ২৫ জন পড়ুয়ার জন্য ৪০০ টাকা করে মোট দশ হাজার টাকা এসেছে জুলাইয়ে।
দীপকবাবু অবশ্য অসহযোগিতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। পুরপ্রধানকে তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন, বৈঠক হয় না, অথচ ওই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ওয়ার্ড শিক্ষা-স্বাস্থ্য কমিটির সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সই করিয়ে এনে নিজের মতো রেজোলিউশন তৈরি করে তাঁকে টাকা তোলার ফর্ম পাঠিয়ে দেন। দীপকবাবু বলেন, “সরকারি নিয়ম না মেনে আগাম টাকা তুলতে চাইছেন ওই শিক্ষিকা। সে কারণে আমি টাকা তোলার ফর্মে সই করিনি। তাই তিনি আমার উপরে রেগে গিয়েছেন। আমি তো কোনও অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দিতে পারি না।” তাঁর দাবি, পুরপ্রধান বা স্কুল পরিদর্শক একটি সভা ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দিলে ভাল হয়।
দাঁইহাটের কংগ্রেস পুরপ্রধান সন্তোষ দাস বলেন, “বিষয়টি আমরা দেখছি। আশা করি শীঘ্র সমাধান হয়ে যাবে।” অভিভাবিকা দীপ্তি ঢালি, পূর্ণিমা সরকারেরা বলেন, “স্কুল উন্নয়ন নিয়ে এ ধরনের দ্বন্দ্ব কখনও কাম্য নয়। এর ফলে পড়ুয়ারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা কোন ভরসায় পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠাব!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.