কয়লা শিল্পে শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা তিন দিনের ধর্মঘটে ফের প্রমাদ গুণতে শুরু করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলের কর্তারা।
দীর্ঘ দিন ধরে আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকায় বিআইএফআরের আওতায় চলে গিয়েছিল ইসিএল। কিন্তু গত চার বছরে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতিতে কোল ইন্ডিয়ায় পাঁচ শতাংশ বিলগ্নিকরণের বিরোধিতায় ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন দিনের শ্রমিক-ধর্মঘট ফের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলবে ইসিএলকে, এমনটাই মনে করছেন খনি আধিকারিকদের একাংশ ও বিশেষজ্ঞেরা। ইসিএলকে ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখার দাবিও তুলেছেন সংস্থার প্রাক্তন কর্ণধারেরা।
আর্থিক ভাবে রুগ্ণ এই সংস্থাটিকে ইদানীং লাভের মুখ দেখায় বিআইএফআর থেকে বের করে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, চলতি আর্থিক বর্ষের শেষে যদি একই ভাবে লাভ হলে সংস্থাকে বিআইএফআর থেকে বের করে আনতে বেগ পেতে হবে না। কোল ইন্ডিয়ার একটি লাভজনক সংস্থার রূপও দেওয়া যাবে এই সংস্থাকে। তাতে শুধু এই শিল্পাঞ্চল নয়, চাঙ্গা হবে রাজ্যের আর্থিক পরিকাঠামো উন্নয়নেও ভূমিকা নিতে পারবে এই সংস্থা। মান বাড়বে শ্রমিক-কর্মীদের জীবনযাপনের। সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে এলাকারও উন্নতি করা যাবে। এই পরিস্থিতিতে ইসিএলের কর্তাদের অনুরোধ, সংস্থার ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে ধর্মঘট থেকে ছাড় দেওয়া হোক।
|
ইসিএল |
• এ রাজ্যে খনির সংখ্যা শ’খানেক
• কাজ করেন প্রায় ৯০ হাজার শ্রমিক-কর্মী।
• এ বছর কর জমা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
• নানা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কারখানায় সরবরাহ হয়েছে ৩৫ মিলিয়ন টন কয়লা।
• চলতি বর্ষে এখনও পর্যন্ত লেনদেন ১২ হাজার কোটি টাকার।
• লাভ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। |
|
এ রাজ্যে ইসিএলের শ’খানেক খনি রয়েছে। কাজ করেন প্রায় ৯০ হাজার শ্রমিক-কর্মী। সংস্থার সিএমডি রাকেশ সিংহ জানান, রাজ্য ও কেন্দ্রের রাজকোষে কর বাবদ এ বছর প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা জমা করেছেন তাঁরা। রাজ্যের একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বহু কারখানায় জ্বালানি হিসেবে ৩৫ মিলিয়ন টন কয়লা সরবরাহ করা হয়েছে। ইসিএলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু সহায়ক ও অনুসারী শিল্প। পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এলাকার আর্থিক পরিকাঠামো। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। এ বছর লাভও হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, সংস্থার লাভের সুফল পেয়েছেন শ্রমিক-কর্মীরাও। সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। নীলাদ্রিবাবু বলেন, “উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে তা সংস্থার পক্ষে মোটেই ভাল হবে না।”
ইসিএলকে এখন ধর্মঘটের বাইরে রাখা উচিত বলে মনে করেন সংস্থার প্রাক্তন কর্ণধারেরাও। তাঁদের মতে, বহু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থারই কিছু শতাংশ করে বিলগ্নিকরণ হচ্ছে। এ নিয়ে ধর্মঘটের জেরে কয়লা শিল্পের ক্ষতি হলে রাজ্যের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে। সংস্থার প্রাক্তন সিএমডি স্মরজিৎ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “ইসিএলে ধর্মঘট বাঞ্ছনীয় নয়। আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া উচিত।” প্রাক্তন ডিরেক্টর (পার্সোনেল) আনন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “ধর্মঘট হলে নিজের পায়েই কুড়ুল মারবেন শ্রমিক-কর্মীরা।” ধর্মঘটের বিরোধিতা করে ‘ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দত্ত বলেন, “ইসিএলের ক্ষতি হলে কয়লা নির্ভর শিল্প মার খাবে।”
তিন দিনের ধর্মঘটে ইসিএলের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে, সে কথা স্বীকার করেও কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র সিংহের দাবি, সাময়িক ক্ষতি স্বীকার করেও ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তাঁরা ধর্মঘটে যাবেন। |