ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও মিনিবাস মিলছে না আসানসোলের নানা এলাকায়। কারণ, অনুমতি ছাড়াই চলা ট্রেকার ও অটোর দাপটে মহকুমায় জুড়ে কমছে মিনিবাসের সংখ্যা।
মিনিবাসের মালিকদের অভিযোগ, জ্বালানির খরচ বাড়ায় এমনিতেই সমস্যা শুরু হয়েছে। তার উপরে বাসের রুটে ট্রেকার, অটো ও মিনিবাস চলায় যাত্রী পাচ্ছেন তাঁরা। তাই বাস তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি বাস মালিকদের। অনেক সময়ে মিনিবাস কর্মীদের সঙ্গে ট্রেকার ও অটোর চালক-কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।
মহকুমার মিনিবাস মালিকদের থেকে জানা যায়, ইতিমধ্যে মহকুমার ৪৫০টি মিনিবাসের মধ্যে ১৩৩টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আগে আসানসোলের হটন রোড মোড় থেকে জি টি রোড হয়ে বিএনআর ২১০টি মিনিবাস চলত। এখন চলছে ১৬০টি। গোপালপুর, কুমারপুর, মনোজ টকিজ হয়ে আসালোসোলে যেত ৯৬টি মিনিবাস। এখন চলে ৭৬টি। চিত্তরঞ্জন বাসস্ট্যান্ড থেকে ডাবর মোড় হয়ে চলা ৩৮টি মিনিবাসের মধ্যে দশটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বরাকর থেকে নিউ রোড, নিয়ামতপুর মোড় থেকে চিনাকুড়ি হয়ে ডিসেরগড়, বরাকর থেকে ডিসেরগড় ঘাট, আসানসোল হাসপাতাল থেকে হটন রোড মোড়, হাসপাতাল থেকে আসানসোল কোর্ট, নিয়ামতপুর থেকে বরাকরএই সব রুটেও পাঁচটি করে বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে মহকুমা মিনিবাস মালিক সংগঠন হাইকোর্টে আসানসোলে নতুন কোনও যাত্রীবাহী যানের পারমিট দেওয়ার বিরুদ্ধে পিটিশন দায়ের করে। তাঁদের দাবি ছিল, এই মহকুমায় জনসংখ্যার নিরিখে উপযুক্ত পরিমাণ যাত্রীবাহী যান রয়েছে। এর পরে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে অনুমোদন দেওয়া বন্ধ হয়। |
উখড়া-হরিপুর রাস্তায় ট্রেকারের ছাদে চড়ে নিত্য যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র। |
সমস্যার শুরু সেখান থেকেই। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত পরিবহণ শ্রমিক সংগঠন ‘আসানসোল মহকুমা মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া বলেন, “২০০৮-এ রাজ্য সরকারের তরফে বর্ধমানের জেলাশাসককে অটোর অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে প্রায় ৪০০ অটোর প্রাথমিক অনুমতি দেওয়া হয়। অনেকে পারমিটের টাকাও দিয়ে দেন। কিন্তু কয়েক বছর পরেই পুনরায় জেলাশাসককে পারমিট দিতে নিষেধ করা হয়। এখন এই অটোগুলি যাবে কোথায়? তাই কেউ পুরুলিয়া থেকে, কেউ ঝাড়খণ্ড থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে এনে গাড়ি চালাচ্ছে।” বর্তমানে এই মহকুমায় অনুমতিহীন অটোর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। রাজুবাবুর দাবি, “নতুন জনসমীক্ষা করে তার ভিত্তিতে নতুন যানের অনুমোদন দেওয়া হোক। যাঁরা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে অটো কিংবা ট্রেকার কিনেছেন তাঁদের পারমিট দেওয়া হোক। তবে বর্তমানে এলাকায় কিছু চার চাকার অটো চলছে, যেগুলি আসলে ব্যক্তিগত মালিকানার। সেগুলির যাত্রী পরিবহণের অধিকার নেই।”
সমস্যা রয়েছে আরও। মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মহম্মদ মামুদের অভিযোগ, “বছর পাঁচেক আগে রাস্তা সংস্কারের কারণ দেখিয়ে আসানসোল স্টেশন থেকে বার্নপুর যাওয়ার পথে বিএনআর মোড় থেকে কোর্ট মোড় পর্যন্ত ‘ওয়ান ওয়ে’ করে দেওয়া হল। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়েই উল্টো দিক অবাধে যাতাযাত করছে অটো ও ট্রেকার। সামনেই রয়েছে জেলা পরিবহণ দফতর। অটো বা ট্রেকারের পারমিট না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীরা বিমাজনিত কোনও সুযোগও পাচ্ছেন না।” তবে, যে রুটে বাস চলে না, সেখানে অটো কিংবা ট্রেকার চললে তাঁদের আপত্তি নেই বলে জানান আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়।
আসানসোল-শশীভূষণ গড়াই রোডের এক অটোচালক রাজু সিংহ বলেন, “সংসার চালানোর জন্য অটোই আমাদের কাছে একমাত্র উপায়। গাড়ি কিনতে ও রাস্তায় গাড়ি চালাতে আমাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অটো ও ট্রেকার চালকেরা জানান, পারমিটহীন গাড়ি চালানোর জন্য তাঁদের বিভিন্ন স্তরে ‘উপরি’ও দিতে হয়। একই দাবি ট্রেকার চালকদেরও।
আসানসোলের এআরটিও সজল মণ্ডল বলেন, “আসানসোলের ডিএসপি (ট্রাফিক)-এর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শীঘ্র অভিযানে নামা হবে।” |