ভোটে বেশি আসন পেয়ে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাদের বাদ দিয়ে পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়েছে কম আসনে জয়ী দু’টি দল! উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ব্লকের কমলগাঁও সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতে এ-হেন আজব কাণ্ডে উচ্চ আদালতও হতবাক। সদ্যগঠিত ওই পঞ্চায়েত বোর্ড কেন বাতিল করে দেওয়া হবে না, রাজ্য সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
রমজান আলি-সহ ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১ জন নির্বাচিত সদস্য বোর্ড ভেঙে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। মঙ্গলবার ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচন এবং বোর্ড গঠনের বৃত্তান্ত শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সাত দিন পরে সরকারকে হাইকোর্টে তাদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ দিন মামলাটির শুনানিতে আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য-সংখ্যা ১৮। গত নির্বাচনে বামফ্রন্ট পেয়েছে ১২টি আসন। তৃণমূল পাঁচ এবং কংগ্রেস একটি আসনে জিতেছে। কিন্তু ওই পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের বেগম মঞ্জুরা ইসলাম। মিলিত ভাবে বোর্ড গঠন করেছে তৃণমূল আর কংগ্রেস।
বিচারপতি জানতে চান, এ ভাবে বোর্ড গড়া সম্ভব হল কী ভাবে? সুব্রতবাবু বলেন, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচনের তারিখ ছিল ১৭ অগস্ট। নির্বাচিত বাম সদস্যেরা ১৬ অগস্ট জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানান, পঞ্চায়েত-প্রধান নির্বাচনে শাসক দলের সমর্থকদের হাতে তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। প্রধান নির্বাচনে তাঁরা যাতে আদৌ হাজির হতে না-পারেন, তার চেষ্টা হবে। আতঙ্কিত বাম প্রতিনিধিদের ওই চিঠি পাওয়ার পরেও জেলাশাসক বা পুলিশ সুপার তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেননি বলে বিচারপতির সামনে অভিযোগ করেন সুব্রতবাবু।
আবেদনকারীদের আইনজীবী জানান, ১৭ অগস্ট প্রধান নির্বাচনে যোগ দেওয়ার জন্য বাম সদস্যেরা ওই পঞ্চায়েত ভবনের কাছাকাছি পৌঁছনো মাত্র আক্রান্ত হন। দুষ্কৃতীরা আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিল। বাম প্রতিনিধি এবং তাঁদের সঙ্গীদের উপরে এলোপাথাড়ি গুলি চলল। ১৮ জন গুলিবিদ্ধ হলেন। বাম সদস্যেরা প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। ফাঁকা মাঠে তৃণমূলের পাঁচ জন এবং কংগ্রেসের এক জন সদস্য পঞ্চায়েত-প্রধান নির্বাচন করে ফেললেন। শীর্ষ দু’টি পদ ভাগাভাগি করে নিল তৃণমূল আর কংগ্রেস। পঞ্চায়েতের প্রধান হলেন তৃণমূলের এক জন, উপপ্রধান কংগ্রেসের।
নিরুপায় বাম সদস্যেরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন। ২৬ অগস্ট তাঁরা বিডিও-র কাছে ফ্যাক্স-বার্তা পাঠিয়ে জানান, হাইকোর্টে তাঁদের মামলা বিচারাধীন। তাই এখন বোর্ড গঠন করা যাবে না। বিডিও কিন্তু ২৭ অগস্ট বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন এবং সেই মতো বোর্ড গঠন হয়ে যায়।
বিচারপতি সরকারের পক্ষের আইনজীবী পারমিতা পালের কাছে এই ব্যাপারে রাজ্যের বক্তব্য জানতে চান। কিন্তু পারমিতাদেবী এই বিষয়ে সরকারের বক্তব্য আদালতে জানাতে পারেননি। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১২ জন নির্বাচিত সদস্যকে বোর্ড গঠনের সময় ঢুকতেই দেওয়া হল না। ভোটে জয়ী অধিকাংশ সদস্যের অনুপস্থিতিতেই পঞ্চায়েত-প্রধান নির্বাচন এবং বোর্ড গঠন হয়ে গেল! এটা কী ভাবে সম্ভব? বিচারপতির নির্দেশ, কেন ওই বোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে না, সরকারকে সাত দিন পরে তা জানাতে হবে।
পঞ্চায়েত ভোটের পরে বেআইনি ভাবে বোর্ড গড়ার অভিযোগ জানিয়ে হাইকোর্টে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। গত সপ্তাহে এই ধরনের তিনটি মামলায় হাইকোর্ট জানায়, নির্বাচিত সদস্যেরা জেল বা পুলিশি হেফাজতে থাকলেও বোর্ড গঠনের সময় তাঁদের সেখানে হাজির থাকার ব্যবস্থা করতেই হবে। নির্বাচিত সদস্যদের অনুপস্থিতিতে বোর্ড গঠন করা যাবে না। |