কোথাও বসার জায়গা ভেঙে পড়েছে। কোথাও জমা ময়লার দুর্গন্ধে বসে থাকার উপায় নেই। কোথাও আবার গরু, ছাগলে আস্তানা গেড়েছে। দেখে মনে হয় যেন গোয়ালঘর। নজরদারির অভাবে জেলা সদর বাঁকুড়ার যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলির এখন এমনই হাল।
ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়া এই প্রতীক্ষালয়গুলির এই দুরাবস্থায় দূরদূরান্ত থেকে নানা কাজে আসা মানুষজন দুর্ভোগে পড়ছেন। অথচ এই যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার দায় কার, তা নিয়েই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। |
বাঁকুড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শহরে সাতটি পুরনো বাস যাত্রী প্রতীক্ষালয় রয়েছে। সম্প্রতি শহরের জুনবেদিয়া মোড়, ভৈরবস্থান মোড়, নতুনচটি ও লালবাজারে নতুন করে আরও চারটি প্রতীক্ষালয় গড়া হয়েছে। নতুন যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলির বর্তমান অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ না থাকলেও সতীঘাট, রেল স্টেশনের মতো পুরনো যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলি নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। দুর্গাপুরের বেনাচিতি এলাকার বাসিন্দা বিকাশ পাত্র পেশার টানে প্রায়ই বাঁকুড়ায় আসেন। সতীঘাট এলাকা থেকে প্রায়ই তিনি বাস ধরেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, “সতীঘাটের যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি ময়লা আবর্জনায় ভরা থাকে। পরিস্থিতি এমনই যে দুর্গন্ধের জন্য বেশিক্ষণ বসে থাকার উপায় নেই। তাই যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকতেও কড়া রোদ ও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশপাশের দোকানে আশ্রয় নিতে হয়।”
পুরুলিয়া থেকে ট্রেনে চড়ে রোজ বাঁকুড়ায় আসেন এক সরকারি আধিকারিক। বাঁকুড়া স্টেশনের বাসস্টপ থেকে বাস ধরে তামলিবাঁধে নামেন তিনি। তাঁর কথায়, “স্টেশন এলাকায় বাস যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি গরু-ছাগলের আস্তানায় পরিণত হয়ে পড়েছে। বসার জায়গাও ঠিকঠাক নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রতীক্ষালয়ের বাইরে দাঁড়িয়েই বাসের অপেক্ষা করতে হয়।” এই পরিস্থিতিতে যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলিকে নিয়মিত পরিষ্কার করা হোক বলে দাবি তুলছেন যাত্রীরা।
কিন্তু এই যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলি পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব কার তা নিয়েই প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপা বলেন, “পুরনো যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলির একটিও পুরসভা গড়েনি। তাই ওগুলি আমাদের পরিষ্কার করার কোনও দায় নেই। নতুন করে পুরসভা যে যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলি গড়েছে শুধু সে গুলিই আমরা দেখভাল করব।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসু আবার বলছেন, “যাত্রী প্রতীক্ষালয় যারাই গড়ুক সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভারই দায়িত্ব সেগুলি পরিষ্কার রাখা।” পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের এই বাগ্বিতণ্ডার মধ্যে আখেরে ভুগতে হচ্ছে সেই আম জনতাকেই। |