ইন্দ্রনাথ গুহ লিখেছিলেন, “...১৯৫৪ সালের ১ এপ্রিল সতীকান্ত গুহ ও তাঁর স্ত্রী প্রীতিলতা গুহের যৌথ উগ্যোগে সাউথ পয়েন্ট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন সাউথ পয়েন্টের সঙ্গে মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়ের কোনও সম্পর্কই ছিল না। প্রায় এক বছর পর সতীকান্ত গুহ তাঁর শৈশবের বন্ধু মোহনলালের স্ত্রী মিলাডাকে শুধুমাত্র নার্সারি ও প্রেপ্ বিভাগ দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। মিলাডা কোনও দিনই সাউথ পয়েন্টের কোনও বিভাগেরই অধ্যক্ষা ছিলেন না।” (‘মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়’, সম্পাদক সমীপেষু, ২৫-৭) তার উত্তরে আমি যে লিখিত বিবৃতি আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানিয়েছি, তাই হুবহু প্রকাশিত হয়েছে সে দিনেরই সম্পাদক সমীপেষুতে। তাতে লেখা হয়েছিল, “সাউথ পয়েন্ট স্কুলে আমার মা মিলাডা ১৯৫৫ সালেই যোগদান করেন। ...তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই সেখানকার শিশু বিভাগে শিক্ষকতার কাজ করছেন।...স্কুল কর্তৃপক্ষ পরে তাঁকে নার্সারি ও প্রেপ বিভাগের অধ্যক্ষা (ডাইরেকট্রেস) পদে উন্নিত করেছিলেন। ১৯৭৫-এ তিনি বার্ধক্যের কারণে অধ্যক্ষা রূপে স্বেচ্ছাবসর নেন।” এর ভিত্তি ছিল আমার মা মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবদ্দশায় তাঁর মুখে শোনা তথ্য।
পরে মা’র পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে সাউথ পয়েন্ট স্কুলে মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়ের নিয়োগপত্রটি উদ্ধার করতে পেরেছি। ৫ মে ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন সেক্রেটারি প্রীতিলতা গুহর স্বাক্ষর করা স্কুলের লেটার-হেড-এ যা লেখা ছিল, তা এই রকম মিলাডাকে অতীত-সংক্রান্ত রূপে (রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট) ১ মার্চ ১৯৫৪ থেকে নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রথম দিন থেকেই তাঁকে নার্সারি বিভাগের অধ্যক্ষা (ডাইরেকট্রেস) পদে নিয়োগ করা হয়। অর্থাৎ স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সতীকান্তবাবু মিলাডার লন্ডনে মন্টেসারি শিক্ষার জ্ঞানকে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছিলেন।
মিতেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা-৯৯
|
অসীম চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘দার্জিলিং অতীতে কোনও সময় আমাদের সঙ্গে ছিল না’। ১৯০৫ সাল পর্যন্ত দার্জিলিং ছিল ভাগলপুর মহকুমায়। (‘এ পথে গোর্খাল্যান্ড...’ ১৪-৮) কিন্তু মনে রাখা দরকার, ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ভাগলপুর-সহ বিহার (এবং ওড়িশাও) ছিল বাংলা প্রেসিডেন্সির (ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তম প্রদেশ) অন্তর্গত। বঙ্গভঙ্গ রদ হলে বিহার আলাদা হয়ে যায় কিন্তু দার্জিলিং থাকে বাংলায়। ১৮৩৫-এ সিকিমের চোগিয়ালের কাছ থেকে লর্ড বেন্টিঙ্কের আমলে দার্জিলিং ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ও পরে বাংলা প্রেসিডেন্সিতে যুক্ত হয়।
ডা. অতনু মুখোপাধ্যায়। কলকাতা-৩৩
|
ডা. রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের (সবার কাছে আর এন চ্যাটার্জি) শতবর্ষ পূর্তির খবর পেলাম। (কলকাতার কড়চা, ৫-৮) অনেক দিন আগের কথা। তখন ডা. আর এন চ্যাটার্জি বরানগরে থাকতেন, আমি পাইকপাড়ায় সরকারি আবাসনে। আমার বাবাকে ওঁর ধর্মতলার চেম্বারে নিয়ে যাই দেখাতে। বাবার ডায়াবিটিসও ছিল।
এক বার ওঁর চেম্বারে দেখানোর পর, ডা. চ্যাটার্জি আমাকে বললেন, ‘বাবার বয়স হয়েছে, এর পর আপনি আর বাবাকে কষ্ট করে এই চেম্বারে আনবেন না। আমি বাড়ি যাওয়ার পথে দেখে যাব’। এক দিন বললেন, ‘আপনার বাবাকে আজ দুপুরে দেখতে যাব। পোর্টেবল ই সি জি মেশিনটা নিয়ে যাব।’ এক সময় আমার চার তলার ফ্ল্যাটে এলেন। বেশ ক্লান্ত। বললেন, ‘ই সি জি মেশিনটা গড়বড় করছে। তাই খবর দিয়ে গেলাম। চেম্বার থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেখে যাব, আপনার বাবাকে। চেম্বারের গায়েই লোক ডেকে মেশিনটা সারিয়ে নেব’। রাত্রে ডা. চ্যাটার্জি এলেন। আমার বাবা যে ডাক্তার, সেটা আমরা চেপে গেছি। জানলে টাকা নেবেন না। কিন্তু কথায় কথায় ফাঁস হয়ে গেল। ডা. চ্যাটার্জি কালবিলম্ব না-করে মানিব্যাগ থেকে আগের দিনের ফিসটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘কী অন্যায় করে ফেলেছিলাম, বলুন তো। আপনার বাবা আমার দাদা। ...ওঁর থেকে টাকা নিতে পারি? আমি আবার আসব। দেখে যাব’।
শিশিরকুমার নিয়োগী। কলকাতা-৯১ |