সম্পাদকীয় ১...
অপরাধের বয়স
কাহারও বয়স যদি সতেরো বছর তিনশো চৌষট্টি দিন হয় তবে সে প্রাপ্তবয়স্ক নহে, আর আঠারো বছর এক দিন হইলেই সে প্রাপ্তবয়স্ক? দিল্লি গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও ‘কিশোর’ অপরাধীটিকে তিন বছরের জন্য সংশোধনী ‘হোম’-এ পাঠানো হইবে, তাহার পরে, বস্তুত ইতিমধ্যেই কয়েক মাস বিচারাধীন বন্দি হিসাবে কাটাইয়াছে বলিয়া তিন বছর পূর্ণ হইবার আগেই, সে মুক্তি পাইবে আদালতের এই রায় তুমুল শোরগোল তুলিয়াছে। স্বাভাবিক। কোনও সংশয় নাই যে, ছেলেটির বয়স কয়েক মাস বেশি হইত, তাহার অন্য রকম সাজা হইত। অত্যন্ত কঠোর সাজা। যে আইনে এমন অপরাধ করিয়া বয়সের কয়েক মাস হেরফেরের সুযোগে কেহ গুরুদণ্ড হইতে অব্যাহতি পায়, সেই আইন কি ন্যায়সম্মত? ন্যায়-অন্যায় সম্বন্ধে সামাজিক মানুষের মনে কিছু স্বাভাবিক, কাণ্ডজ্ঞানপ্রসূত ধারণা থাকে। আইন দেখাইয়া কাণ্ডজ্ঞানকে নিরস্ত করা যায় না, সে তাহার প্রশ্ন করিবেই। সে জানিতে চাহিবেই, ছেলেটি কঠোর শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে কেন?
জবাবে কিশোর অপরাধী সংক্রান্ত আইন বলিবে, প্রথমত, অল্পবয়সে বিচারবুদ্ধি কাঁচা থাকে, শাস্তিবিধানের সময় তাহা বিবেচনা করিতে হয়; এবং দ্বিতীয়ত, সেই একই কারণে, অল্পবয়সি অপরাধীর মন পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, তাই কারাগারে না দিয়া তাহাকে হোমে পাঠানো বিধেয়। হোম বলিতে এই দেশে সচরাচর যাহা বোঝায়, সেখানে চরিত্রের সংস্কার হয়, না অপরাধপ্রবণতা আরও ভয়ানক আকার ধারণ করিয়া বাহির হইয়া আসে, তাহা ভিন্ন তর্ক। কিন্তু সেই তর্কে না গিয়াও কাণ্ডজ্ঞান পাল্টা প্রশ্ন তুলিবে, বয়স আঠারোর অধিক হইলে অপরাধীর বিচারবুদ্ধি যতখানি হইত, তাহা অপেক্ষা কিছুমাত্র কম ছিল কি? বিপরীত দিক হইতে দেখিলে, আঠারোর কম বয়সি এক জন অপরাধীর মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটাইবার যে সুযোগ বা সম্ভাবনা থাকে, আঠারো অতিক্রম করিলেই তাহা অন্তর্হিত হয়? যে ভাবেই দেখা হউক, স্বাভাবিক ন্যায় বলিতে যাহা বোঝায়, এই রায়কে তাহার সহিত সমঞ্জস বলিয়া মানিয়া লওয়া অত্যন্ত কঠিন। অপরাধ এবং শাস্তির যদি কোনও সামঞ্জস্য থাকিতে হয়, তবে এমন গুরু পাপে এমন লঘু দণ্ড হয় কী করিয়া? আইনে যদি ইহাই বিহিত হয়, সেই আইন কি অবিলম্বে সংশোধন করা উচিত নহে?
কিন্তু সংশোধিত আইন কোথায় পৌঁছাইবে? আঠারোর স্থানে কী হইবে অপরাধীর বয়স বিভাজনের নূতন সীমারেখা? সতেরো? ষোলো? পনেরো? আইন যেখানেই দাঁড়াইতে চাহিবে, তৎক্ষণাৎ তর্কটি ফিরিয়া আসিবে: পনেরো বছর এক দিন বয়স হইলে কেহ যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়, চৌদ্দো বছর তিনশো চৌষট্টি দিনে নয় কেন? ইহার কোনও সদুত্তর হয় না। যে কোনও সীমারেখাই আরোপিত, যথেচ্ছ, ‘আরবিট্রারি’। বয়সের নির্দিষ্ট সীমারেখা দ্বারা অপরাধীর বর্গ বিভাজনের মূল ধারণাটিকে বিসর্জন না দিলে এই সংকট হইতে মুক্তি নাই। অপরাধীকে দেখা উচিত অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে, পাশাপাশি তাহার মানসিকতা পরীক্ষা করা উচিত, যাচাই করা উচিত সেই মানসিকতার কতটা সংস্কারের সম্ভাবনা আছে। দণ্ড যদি শাস্তি এবং সংশোধনের সমাহার বলিয়াই গণ্য হয়, তবে এই দ্বিবিধ বিচারই জরুরি। অল্পবয়সি অপরাধীর মন বদলের সম্ভাবনা যদি তুলনায় অধিক হয় সাধারণত হইবারই কথা তবে দণ্ড নির্ধারণের সময় সেই সম্ভাবনাও বিবেচ্য। কিন্তু যে আইনে নিছক বয়সের ফেরে শাস্তির আকাশপাতাল তফাত হইয়া যায়, সেই আইন আপাদমস্তক যাচাই করা দরকার। শুধু নৈতিকতার কারণে নহে, বাস্তব পরিণামের কারণেও অবিলম্বে এই পর্যালোচনা অত্যাবশ্যক। বয়স আঠারোর কম হইলে যে কোনও গর্হিত অপরাধ করিয়া কার্যত পার পাওয়া যাইবে, এই বিশ্বাসের ফল কী হইতে পারে, ভাবিলে বাস্তবিকই আতঙ্ক হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.