ডিজেলের দাম ফের এক দফা বেড়ে যাওয়ার পরে আরও এক বার ধর্মঘটের হুমকি দিল বাস-মালিকদের সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এ বার চরম রাস্তা নিতে হবে। এর আগে ১৯ ও ২০ অগস্ট ধর্মঘটের ডাক দিয়েও শেষ পর্যন্ত পরিবহণমন্ত্রীর আশ্বাসে পিছিয়ে এসেছিলেন তাঁরা।
গত মাসের সরকারি হিসেবই বলছে অর্ধেক বেসরকারি বাস পথমুখো হচ্ছে না। সংখ্যাটা এ ক’দিনে আরও কমেছে। অফিস টাইমে তুলনায় বেশি যাত্রী মেলে। তাই শুধু সে সময় যা-ও বা কিছু বাস চলছে, রাতে বা ছুটির দিনে তাদের দেখা পাওয়াই দুষ্কর। ‘এমনটা চললে এমনিতেই সব বাস বসে যাবে,’ কথাটা অনেক দিন ধরেই বলে যাচ্ছেন বাস-মালিকরা। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের কাছে আর এক দফা ভাড়া বাড়ানোর আর্জি জানিয়ে সোমবারও তাঁরা এই কথাগুলিই বলেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বাস ভাড়া বাড়ানোর কোনও ইঙ্গিত মেলেনি এ দিনও। পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী এখন পাহাড়ে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। বাসভাড়া নিয়ে এখনও আলোচনা করার সময় আসেনি।”
এটা স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার তার জনমোহিনী নীতি থেকে সরে এসে ভাড়া বাড়াতে প্রস্তুত নয় এখনও। কিন্তু প্রশ্ন হোল, পরিস্থিতি চরমে পৌঁছে গিয়েছে বলেও বাস-মালিকরা কেন সেই আবেদন-নিবেদনেই আটকে রয়েছেন? ধর্মঘটের ডাক দিয়েও কেন পিছিয়ে আসছেন তাঁরা? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাস-মালিকদেরই একাংশ বলছেন, আমাদের সংগঠনের শীর্ষ নেতারা শাসক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। ফলে, দলীয় বাধ্যবাধকতার কারণেই তাঁদের পক্ষে সরকারের বিরোধিতা করে ধর্মঘট ডাকা সম্ভব নয়। তাই বারবার এক-পা এগিয়ে দু’পা পিছিয়ে আসছে বাস-মালিক সংগঠনগুলি। সরাসরি আন্দোলনে গিয়ে সরকারের কোপে পড়তে চাইছেন না বাস-মালিক সংগঠনের নেতারা। তৃণমূল বিধায়ক, বিধানসভার পরিবহণ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য তথা বাস মালিকদের একটি সংগঠনের নেতা স্বর্ণকমল সাহাও তাই ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “বাস খুব কঠিন অবস্থায় রয়েছে।”
বাস-মালিকদের একাংশের দাবি, ভাড়া না বাড়লে পুজোর আগে কলকাতা ও শহরতলির ৭৫ শতাংশ বেসরকারি বাসকেই আর রাস্তায় দেখা যাবে না। শেষ বার বাসভাড়া বেড়েছে গত বছরের নভেম্বরে। এর পরে ডিজেলের দাম দশ বারে বেড়েছে মোট সাত টাকা। দফায় দফায় বেড়েছে যন্ত্রাংশের দামও। সঙ্গে রয়েছে ভাঙা রাস্তার সমস্যা। খানাখন্দে পড়ে রোজই সারাই করতে হচ্ছে বাস। এই ত্র্যহস্পর্শে মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজ্যের পরিবহণ শিল্পই। পরিত্রাণ খুঁজতে গত মাসের ১৯ এবং ২০ তারিখে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন বাস-মালিকরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা তুলে নেন। পরিবহণমন্ত্রী সে বার আশ্বাস দিয়েছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে আলোচনায় বসে ইতিবাচক কোনও রাস্তা বের করা হবে। বাস-মালিকদের এখন বক্তব্য, “১৫ দিন কেটে গিয়েছে। রবিবার ফের ডিজেলের দাম বেড়েছে। কিন্তু পরিবহণমন্ত্রী কোনও বৈঠক ডাকেননি। এখন আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।”
সোমবার মদনবাবুর সঙ্গে দেখা করে ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস। মঙ্গলবার পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একই দাবি রাখবে মিনিবাস মালিকদের সংগঠনও। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এ দিন মন্ত্রীকে জানিয়েছি, জ্বালানির ভাড়া যে ভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের আর বাস চালানোর উপায় থাকছে না। আমরা অসহায়। এর পরেও মন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা না নিলে আমাদের চরম রাস্তা নিতেই হবে।” আর মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রয়েছি। তিনি যদি একান্তই কিছু না করেন, তা হলে তো আমাদের আন্দোলনে যেতেই হবে।”
আন্দোলন-ধর্মঘটের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের সংগঠনগুলির নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক দায়কেই ফের বেশি গুরুত্ব দেবেন কি না, সেটাও ভাবাচ্ছে বাস-মালিকদের। |