ভোট রাজনীতির দায়ে সরাসরি আদালতের রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করা মুশকিল। সেই জন্যই সাংবিধানিক যুক্তি ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বলছে, ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত আদালতে খারিজ হওয়াই প্রত্যাশিত ছিল।
তবে বিজেপি এই লুকোছাপায় নেই। ইমাম-ভাতার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছিলেন তাদেরই রাজ্য নেতা অসীম সরকার। হাইকোর্টের রায়কে সরাসরি স্বাগত জানাতেও বিজেপি-র অসুবিধা হয়নি।
সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির একাংশ অবশ্য ভাতা বন্ধের নির্দেশে দুঃখিত। বঙ্গীয় ইমাম পরিষদের সম্পাদক মহম্মদ রহিসুদ্দিন পুরকায়েত পরিষ্কার বলেছেন, “আমরা এই রায় মানতে পারছি না।” তাঁর যুক্তি, আগে গ্রাম থেকে চাঁদা তুলে ইমাম এবং মোয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়া হতো। সরকারি ভাবে সাহায্য চালু হওয়ার পরে সেই ভাতা বন্ধ। এখন হাইকোর্টের রায়ের ফলে ইমামেরা পরিবার নিয়ে বিপদে পড়বেন। রহিসুদ্দিনের বক্তব্য, “সরকারকে বলব উচ্চতর পর্যায়ে আবেদন করতে। আমরাও বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানাব।” সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সম্পাদক মহম্মদ কামারুজ্জামান এবং পশ্চিমবঙ্গ সুন্নৎ আল জামাত সম্পাদক আবদুল মতিনের মতে, ইমাম ভাতা বন্ধ হওয়া উচিত নয়। দু’জনেরই যুক্তি, সরকার যে সব ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করছে, তা চলতি দরে ভাড়া দিয়ে টাকার সংস্থান করা সম্ভব। মতিনের দাবি, “অবিলম্বে বেদখল ওয়াকফ সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও ঠিক ভাবে নথিভুক্ত করতে হবে।” কামারুজ্জামানের দাবি, তৃণমূলই শুধু নয়, সিপিএমের তরফে বৃন্দা কারাটও ২০১২-র জানুয়ারিতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে একই রকম ভাতার দাবি জানিয়েছিলেন।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম অবশ্য এ দিন বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সংবিধান মেনে কোনও সরকারের পক্ষে কাউকে বঞ্চিত করা, বা বাড়তি কিছু দেওয়া সম্ভব নয়। মুসলিমরাও তা জানেন। মুসলিমদের সার্বিক উন্নতিই সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাঁর কথায়, “সরকার সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে রাজকোষ থেকে এই ভাতা দিচ্ছিল! এ ক্ষেত্রে যে এমন হবে জানতাম।” এই রায়কে কি স্বাগত জানাচ্ছেন? সেলিমের জবাব, “বিষয়টা স্বাগত জানানোর নয়। যা সংবিধানসম্মত নয়, বেআইনি, তা বাতিল হতোই। মাঝখান থেকে কিছু গরিব ইমাম, মোয়াজ্জিন ভাতা পাওয়ার পরের এখন তাঁদের টাকা বন্ধ হয়ে যাবে।”
আর সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার প্রতিক্রিয়া, “আইনে এ জিনিস করা যায় না জেনেও মুখ্যমন্ত্রী বাজিমাত করতে ভাতা চালু করেছিলেন। এখনও উনি বাজিমাত করার চেষ্টা করতে পারেন। বলতে পারেন, আমি চেয়েছিলাম! আদালতের জন্য হল না! কিন্তু মুসলিমদের এত অবুঝ ভাবার কারণ নেই!” প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের প্রশ্ন, আইনি বৈধতা নেই জেনেও ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিল রাজ্য? তাঁর দাবি, “মুসলিমদের সঙ্গে প্রতারণা করতেই এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এখন এর দায় স্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রীর ইমামদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।” কিন্তু শাসক দল তো ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা ওই সাহায্য দেওয়ার পথ থেকে সরবে না? মান্নানের জবাব, “সেটা আদালত বুঝবে!” আর সেলিমের বক্তব্য, “এই সরকার তো সংবিধান, আইন সব কিছুই উপেক্ষা করার কথা বলে!”
বিজেপি অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই খুশি। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মের ভিত্তিতে ভাতা দেওয়া যায় না। সরকার টাকা পায় করদাতাদের থেকে। ধর্মগুরুদের প্রতিপালনে ব্যয় করবে কেন?” শাসক দল ‘সাম্প্রদায়িক কায়দায় ভোট কেনার চেষ্টা’ বন্ধ করুক দাবি করে রাহুলবাবু জানান, ভাঙড়ে মুসলিম হাসপাতাল গড়া রুখতেও তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। |