কলেজে তাণ্ডব রানিগঞ্জেও, ফের অভিযুক্ত টিএমসিপি
রাজ্যপাল মারকুটে ছাত্রদের পিটিয়ে ঠান্ডা করতে বলুন আর মুখ্যমন্ত্রী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিন, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছেই।
ইটাহার, হরিরামপুর, সন্দেশখালির পরে এ বার রানিগঞ্জের কলেজে ফের তাণ্ডব চালাল কিছু ছাত্র। অভিযোগের তির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে। রাতে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন কলেজের অধ্যক্ষ। তবে এখনও কেউ ধরা পড়েনি।
বর্ধমানের রানিগঞ্জে টিডিবি কলেজে উত্তেজনার সূত্রপাত হয় এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। গত ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে টিএমসিপি। কিছু ছাত্র এ দিন কলেজ ছাড়ার শংসাপত্র নিতে এবং ‘অ্যাটেস্ট’ করাতে এসে কোনও কর্মীকে দেখতে পাননি।
ভাঙচুরের পর রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
অধ্যক্ষ নীপঙ্কর হাজরা জানান, কলেজে প্রধান করণিক-সহ ১২ জন শিক্ষাকর্মী আছেন। এর মধ্যে তিন জন ছুটিতে রয়েছেন। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এক শিক্ষক ক্লাস নিতে-নিতেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েই সব শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়েই কিছু ছাত্র অধৈর্য হয়ে প্রধান করণিকের ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালান। তিনি ঘরে না থাকায় আক্রান্ত হননি।
ঘটনাচক্রে, কলেজের টিএমসিপি নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেখানে হাজির ছিলেন। তবে তাঁর দাবি, “ছাত্রেরা ভাঙচুর চালাচ্ছে জানতে পেরে আমি দৌড়ে গিয়ে আটকেছি।” রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তথা কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি সোহরাব আলি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে টিএমসিপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র দাবি করেন, “ওই ছাত্রেরা আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। ওই কলেজে শিক্ষক ও অন্য কর্মীরা যে যখন খুশি আসেন-যান। বেশির ভাগ দিনই পড়ুয়াদের নানা কাজে এসে ফিরে যেতে হয়। শুনেছি, সেই ক্ষোভেই তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।”
তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “সারা রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে যা ঘটছে, তা-ই এখানে ঘটেছে। গত কালই টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা সংগঠনকে সতর্ক করেছিলেন। তা যে প্রহসন, সেটাই প্রমাণিত হল!”
হরিরামপুরের আব্দুল গনি দেওয়ান কলেজে ছাত্রকে তল্লাশি করছেন
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সনাতন দাস। ছবি: অমিত মোহান্ত।
এসএফআইয়ের বর্ধমান জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে-র মন্তব্য, “কলেজ কর্তৃপক্ষের যে ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব আছে, এটা পরিষ্কার। কোনও দাবিতেই ছাত্রদের এ ভাবে আক্রমণাত্মক হওয়া ঠিক নয়।” সোমবার রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি।
ইটাহার এবং হরিরামপুরেও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। ওই দুই কলেজেই কাঠগড়ায় টিএমসিপি তথা তৃণমূল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শুধু বলেছেন, “খবর নিয়ে দেখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।” অথচ সন্দেশখালির কালীনগর কলেজে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পরেই ২৪ জন গ্রেফতার হয়েছে। এর পিছনে আমরা-ওরার রাজনীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, “অভিযোগের গুরুত্বের উপরে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়। অন্য কোথাও অধ্যাপককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি।”
এ দিনই বসিরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কালীনগর কলেজের অধ্যক্ষকে দেখতে যান খাদ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ তথা কালীনগর কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম। অধ্যক্ষ নিগ্রহের প্রতিবাদে ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কর্মবিরতি পালন করেন। তবে এসএফআইয়ের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অয়ন বসুর দাবি, “সাংগঠনিক তদন্তে জেনেছি, অধ্যক্ষকে প্রহারে আমাদের কেউ জড়িত নয়। অধ্যক্ষ সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রথমে বলেছিলেন, বহিরাগতেরা হামলা করেছিল। পরে তৃণমূলের স্থানীয় সাংসদ এবং পঞ্চায়েত স্তরের এক নেতার ফোন পেয়েই তিনি এসএফআইয়ের নাম বলেন।”
ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজে অবশ্য এ দিনও ‘টোকাটুকি’র ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষা নিয়ামক সনাতন দাসের নেতৃত্বে এ দিনও পরিদর্শক দল আচমকা ওই কলেজে হানা দিয়ে সাত পরীক্ষার্থীর ‘টুকলি’ ধরে। ইতিমধ্যেই নকল করার অভিযোগে তৃণমূল নেতা গৌতম পালের স্ত্রী-সহ ৭৮ জনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার জন্য গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে সুপারিশ করেছেন সনাতনবাবু। অন্য দিকে, হরিরামপুরের আব্দুল গনি দেওয়ান কলেজের ঘটনা নিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য উত্তরবঙ্গের আইজি-কে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক রবীন্দ্রনাথ সামন্ত এ দিন বলেন, “হরিরামপুর কলেজের ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের ফুল বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ পাঠিয়ে উত্তরবঙ্গের আইজির কাছে সে দিনের ঘটনার বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.