এক কিলোমিটার পথ পেরোতে গিয়েই পাক্কা এক ঘণ্টা কাবার।
শহরতলির যশোহর রোড বা কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে নয়। এ ছবি খাস কলকাতার। সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় এ ভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ল যান চলাচল। একই ভাবে নাকাল হতে হল পার্ক সার্কাস ও রাসবিহারী কানেক্টর, ডায়মন্ড হারবার রোড এবং ইএম বাইপাসের যাত্রীদেরও।
সৌজন্য, রাস্তার বেহাল দশা ও ঘূর্ণাবর্তের বৃষ্টি। যার জেরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত যান নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হল কলকাতার ট্রাফিক পুলিশকে। মানুষের এই দুর্ভোগের জন্য অবশ্য ক্ষমা চেয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিজেই।
এ দিন মহাকরণে পুরমন্ত্রী বলেন, “মানুষের দুর্ভোগের জন্য প্রশাসনের তরফে আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পুজোর আগে ঝাঁ-চকচকে রাস্তা উপহার পাবেন কলকাতার মানুষ।” তাঁর আরও দাবি, রাস্তা সারাতে প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু টানা ৪-৫ দিন শুকনো, বৃষ্টিহীন আবহাওয়া মিলছে না। যার ফলে কোথাও সারাইয়ের কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না, কোথাও আবার সারাই মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। |
গর্ত বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে আরও কমে গেল পথের গতি।
সোমবার, মহাত্মা গাঁধী রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ। |
ফিরহাদ জানান, বেহালা, ই এম বাইপাসে মেট্রোর কাজের জন্য রাস্তার বেহাল দশা। যে কারণে প্রশাসন পারছে না, একই কারণে মেট্রো কর্তৃপক্ষও রাস্তা সারিয়ে উঠতে পারছেন না। কল্যাণী এক্সপ্রেসের কাজও সরকার শীঘ্রই শুরু করবে বলে পুরমন্ত্রী জানান।
পূর্ত দফতরের পক্ষ থেকে এ দিন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দর মোড় থেকে বারাসত পর্যন্ত রাস্তা সারাইয়ের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। দফতরের দাবি, এই রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখনও পর্যন্ত জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হলেও নানা কারণে তাঁরা এই কাজ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই সরকার এখন নিজের উদ্যোগেই রাস্তা সারাই করবে। এ জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
একই ভাবে তারাতলা মোড় থেকে জোকা পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার রোডের কারাপ অবস্থার দায়ও রেল বিকাশ নিগমের ঘাড়ে চাপিয়েছে পূর্ত দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রেল বিকাশ নিগমও খুব শীঘ্রই এই রাস্তা সারাইয়ের কাজে হাত দেবে। কিছু কিছু জায়গায় বিটুমিনের রাস্তাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রশাসনের আশ্বাস থাকছে। কিন্তু সোমবার শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তায় যে ভাবে নাকাল হতে হয়েছে নিত্যযাত্রীদের, তার তুলনা সাম্প্রতিক কালে খুব একটা চোখে পড়েনি।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনের বৃষ্টিতে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়। মহাজাতি সদন, জোড়াসাঁকোর সামনে জমা জলে যানবাহনের গতি এতটাই ধীর হয়ে পড়ে যে গিরিশ পার্কের মোড় থেকে দক্ষিণমুখী যান চলাচল বেলা ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ রাখতে হয়। পুলিশ জানায়, একে রাস্তায় জল, তার উপরে জায়গায় জায়গায় রাস্তা এবড়োখেবড়ো হয়ে থাকার ফলে চালকেরা গাড়ি নিয়ে এগোতেই পারছিলেন না এ দিন। ওই সময়ে দক্ষিণমুখী গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া বিবেকানন্দ রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট দিয়ে। কিন্তু অফিসের ব্যস্ত সময় যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউ, ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে যায়।
আমহার্স্ট স্ট্রিটেও এ দিন অল্পবিস্তর জল জমে। ফলে সেখানেও শ্লথ হয় যানবাহনের গতি। যার জেরে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোডেও এ দিন যানজট ছিল। পুলিশ জানায়, পার্ক সার্কাস চার নম্বর ব্রিজ পেরিয়ে পূর্ব দিকে সার্ভিস রোডেও দীর্ঘক্ষণ যানবাহন আটকে থাকে। একই পরিস্থিতি হয় আলিপুরের জিরাট সেতু ও তার লাগোয়া এলাকায়।
কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গাঁধী রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, নিউ পার্ক স্ট্রিট, ইএম বাইপাস, ডায়মন্ড হারবার রোড-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অনেক জায়গায় ভেঙেচুরে গিয়েছে। মেরামতির মুখে ফের বৃষ্টি হচ্ছে। তাতেই এমন পরিস্থিতি।”
পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্ত ঘোষ জানান, কলকাতা পুলিশ তাঁদের কাছে ২৫৩টি রাস্তার তালিকা দিয়েছে। এই রাস্তাগুলির অবস্থা ভাল নয়। পুজোর আগেই সেগুলি সারানো দরকার। তাঁর দাবি, কয়েকটি রাস্তা সারাইয়ের কাজ চলছে। কিন্তু পুরসভার রাস্তা দফতর এবং সংশ্লিষ্ট বরো পুরোদমে মেরামতির কাজ শুরু করবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে। |