এক অশোক নিহত। আর এক অশোক পলাতক। তার পরেও খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচন ঘিরে এড়ানো গেল না তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এত কিছুর পরেও শেষ হাসি হাসলেন নিহত অশোক ঘোষের অনুগামী। সোমবার ছিল এই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচন। ভোটাভুটিতে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রার্থী দীপা বাউড়িকে হারিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হলেন অসীমা ধীবর। খুন হওয়ার আগে যাঁর নাম প্রস্তাব করে গিয়েছিলেন নেতা অশোক ঘোষ।
ক্ষমতা দখলকে ঘিরে খয়রাশোলে তৃণমূলের জেলা সভাপতির কাছের লোক ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় এবং নিহত তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষের অনুগামীদের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আসন সমঝোতা নিয়েও সমস্যা ছিল দু’ পক্ষের। এই বিরোধকে কোনও ভাবে ধামা চাপা দিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিল তৃণমূল। এর ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য পায় তারা। কিন্তু নির্বাচনোত্তর পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্যদের উপর কার কর্তৃত্ব থাকবে এই নিয়ে বিরোধ বাধে দুই আশোকের মধ্যে। গত ১২ অগস্ট অশোক ঘোষের খুন হওয়ার পর গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথাই উঠে এসেছে। কারণ, খুনে আভিযুক্ত হন ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়-সহ একাধিক তৃণমূল নেতা কর্মী। তা সত্বেও নেতৃত্ব বিষয়টিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮টিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় তৃণমূল বোর্ড গড়বে এটা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু কার কর্তৃত্বে বোর্ড গঠন হবে তাই নিয়ে দুই অশোকের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। এমনকী বাকি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকলেও খয়রাশোল এবং নাকড়াকোন্দায় নির্দল ও সিপিএম প্রার্থীদের নিজের দলে টেনে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন নিহত অশোকবাবু। যেটা নিয়ে চূড়ান্ত বিবাদ বাধে আর এক অশোকের সঙ্গে। নিহতকে সমর্থন করেননি জেলা সভাপতিও। তা সত্বেও ৮টি পঞ্চায়েতেই নিহতের অনুগামীরাই রয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির সমিতির ক্ষেত্রেও একই চিত্র।
এই পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন ২৬। তার মধ্যে ২৪টি আসনই তৃণমূলের দখলে। বাকি দু’টি সিপিএম পেয়েছে। যদিও ২৪ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২১ জন। নিয়ম অনুযায়ী দলের নির্দেশ মেনে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কথা। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করার মতোই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে কে বসবেন তাই নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধ বাধে। খুনে মূল অভিযুক্ত আশোক মুখোপাধ্যায়, যিনি সমিতির নির্বাচিত সদস্যও বটে। বর্তমানে তিনি পলাতক। যার ফলে ওই সভায় শুধু ব্লক সভাপতি নন, এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন আশোক ঘোষ খুনে অপর অভিযুক্ত কালীচরণ দাস। এখন তিনি জেলে এবং অন্য একটি ঘটনায় জেলে থাকা শেখ জয়নালও অনুপস্থিত ছিলেন। অর্থাৎ উপস্থিত ছিলেন ২১ জন নির্বাচিত সদস্য। এখানেই শেষ নয়।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, দুই গোষ্ঠীর তরফে দুই দলনেতাও ঠিক করা হয়। তাঁরা হলেন নিহতের অনুগামী গৌতম মণ্ডল, অন্য গোষ্ঠীর দলনেতা অজিত ধীবর। তাঁরা দুই দাবিদারের নাম প্রস্তাব করতেই বচসা শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে ১৫-৬ জেতেন অসীমা ধীবর। সহ-সভাপতি হন আবরার হোসেন। তিনিও নিহত অশোকবাবুর অনুগামী। নিহতের ভাই দীপক ঘোষ বলেন, “দাদার ইচ্ছেই মর্যাদা পেল।” যদিও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এলাকার মানুষ ও দলের কর্মীদের একাংশ বলছেন, “খয়রাশোলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আগেও ছিল। এখনও রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।”
তবে এখনও কেন অশোক ঘোষ খুনে ব্লক সভপতি অশোক মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যরা গ্রেফতার হলেন না, সেই নিয়ে খয়রাশোল থানায় এরপর বিক্ষোভ দেখান নিহতের অনুগামীরা। |