খরচ হয়ে গিয়েছে বরাদ্দ, মেটেনি জল-সমস্যা
হু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সরকারি তহবিলের টাকা খরচ হয়ে যায়, অথচ উপযুক্ত ফল মেলে না। তখন প্রশ্ন ওঠে ওই টাকা খরচের যাথার্থ নিয়েই। রামপুরহাটে জনগণের করের টাকায় তৈরি হওয়া ১১টি ‘জলাধার’ নিয়েও এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে জলাধারগুলি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, আজও সেগুলি নামেই ‘জলাধার’ অধিকাংশই সময়েই তাতে জল থাকে না এক ফোটাও। এমনকী, প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই জলাধারগুলি কার্যত অকেজো হতে বসেছে বলেও অভিযোগ। ফলে জলাধর প্রকল্পটির ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে নির্মাণের প্রকৃত উদ্দেশ্যই। কেননা টাকা খরচ করা হয়েছিল পুরবাসীদের পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর জন্য। কিন্তু ঘটনা হল, এত টাকা খরচ করেও সেই পরিষেবা দেওয়া যায়নি। যার পিছনে কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাবকেই দায়ী করছেন অধিকাংশ এলাকাবাসী।
(বাঁ দিকে) ২ নম্বর ওয়ার্ডের কলোনিমোড়ে অকেজো জলাধার। (ডান দিকে) এসডিও
অফিস সংলগ্ন পাঁচমাথা মোড়ে আবর্জনার মধ্যেই রয়েছে পুরসভার জলাধার। ছবি: অনির্বাণ সেন।
রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় ২০০৬ ও ২০০৯ সালে দু’টি পর্যায়ে রামপুরহাট পুরসভা এলাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওই জলাধারগুলি তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৬ সালে তৈরি হয়েছিল ৮টি। প্রত্যেকটিতে ৩৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়। পরে ২০০৯ সালে ৫০ হাজার টাকা করে খরচে একই রকম আরও তিনটি জলাধার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পুরবাসীর অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে তৈরি ওই জলাধারগুলির অধিকাংশই এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। ওই জলাধারগুলিতে রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির কথা খোদ আশিসবাবুও স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, রামপুরহাটের পুরপ্রধান ওই জলাধারগুলি যথাযথ ভাবে পরিষ্কার করে ঘিরে দেওয়ার আশ্বাস তাঁকে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “এই শহরে দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসা যাওয়া করেন। তাঁদের অনেকেই পানীয় জলের সন্ধানে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করতেন। শহরের এবং বাইরে থেকে আসা তৃষ্ণার্ত মানুষের জলকষ্ট মেটাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জায়গায় জলাধার তৈরি করে দেওয়া হয়।” নির্মাণের পরে ওই জলাধারগুলির রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়িত্ব পুরসভারই বলে আশিসবাবু জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ওই ১১টি জলাধারের বেশ কয়েকটিতে নজরদারি চালিয়ে বেশ কিছু চিত্র নজরে পড়ল। বেশ কয়েকটি সরকারি দফতর কাছাকাছি থাকার অবস্থানগত দিক থেকে পাঁচমাথা মোড় সংলগ্ন জলাধারটির গুরুত্ব যথেষ্ট। অদূরেই আবার রামপুরহাট রেল স্টেশন। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত জলাধারটি আবর্জনায় প্রায় ঢেকে গিয়েছে। সেখান থেকে পানীয় জল খেতে গিয়ে নোংরা আবর্জনায় বাসিন্দাদের পা ঢুকে যায়। স্থানীয় দলিল লেখক অরূপ দাস বলেন, “অফিসগুলিতে কাজে আসা বহু লোক জল পিপাসা মেটানোর জন্য ওই জলাধার ব্যবহার করতে আসেন। কিন্তু জলাধারটি এত অপরিচ্ছন্ন যে, অনেকেই কাছে পৌঁছে দুর্গন্ধে ফিরে যান।” এ দিকে আইএনটিইউসি প্রভাবিত রামপুরহাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক শাহজাদা হোসেন কিনুর দাবি, “পুরসভা কিছুই করে না, উল্টে স্থানীয় দোকানীদেরই নিজেদের উদ্যোগে জলাধারটি পরিষ্কার করতে হয়।”
রামপুরহাট ডাকবাংলা মোড় সংলগ্ন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলাধারটির অবস্থাও তথৈবচ। পাশের নির্মিয়মান বাড়ির জন্য নিয়ে আসা ইট জলাধারকে প্রায় চারপাশ থেকেই ঘিরে ফেলেছে। দুপুরে জল মিলল না ২ নম্বর ওয়ার্ডের কলোনি মোড়ের জলাধারটিতে। এলাকার দোকানীদের অভিযোগ, “জলাধারে জল ধরে রাখার যন্ত্রটি খারাপ থাকায় সব সময়ে জল পাওয়া যায় না।” আবার ১, ৩ ও ১৭ এই তিনটি ওয়ার্ডের সংযোগ স্থল শ্রীফলা মোড়েও রয়েছে একটি জলাধার। স্থানীয় বাসিন্দা কালু শেখ, দোকানী ভোলা মণ্ডলরা জানালেন, “এই জলাধারটির সব কলে জল পড়ে না। পুরকর্মীরা তা কালেভদ্রে পরিষ্কার করেন।” পাঁচমাথা মোড় ও শ্রীফলা মোড় দু’টিতেই দেখা গেল জলাধারের নাগালেই কবেকার ঝড়ে ভেঙে পড়া সাইনবোর্ড ছাউনির মতো ঝুলে রয়েছে। যে কোনও সময়ে তা ভেঙে পড়ে বিপদ ঘটাতে পারে। পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর অসীম মজুমদারের অভিযোগ, “অধিকাংশ জলাধারেরই জল ধরে রাখার ভাল্ভটি খারাপ। এর ফলে প্রচুর জল অপচয় হয়। তার উপরে নিয়মিত পরিষ্কার করা না হওয়ায়, শ্যাওলা জমা জল অনেকেই খেতে চান না। ফলে জলাধারগুলি নির্মাণের প্রকৃত উদ্দেশ্যই সফল হয়নি।”
যদিও তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অশ্বিনী তিওয়ারির দাবি, “জলাধারগুলি পরিষ্কার করা হয় না, এ কথা ঠিক নয়। অপরিষ্কার থাকলে আমাদের নজরে পড়লেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। তবে যেটুকু যা সমস্যা আছে, তা-ও খুব শীঘ্রই মিটবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.