জোট ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই দু’ দলের প্রায় সাপে নেউলে সম্পর্ক। এক সময়ের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শরিকদের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িতে নেমেছেন দু’ পক্ষেরই প্রায় নেতারা। এ রকম পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে ঠিক উল্টো চিত্রই দেখা গেল রামপুরহাট মহকুমার দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনকে ঘিরে। রবি ও সোমবার তৃণমূলেরই সমর্থনে মুরারই ১ ও রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতি দু’টি দখল করল কংগ্রেস।
পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলে ২১ সদস্যের মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে দলগত অবস্থান ছিল সিপিএম ১০, তৃণমূল ৭ ও কংগ্রেস ৪। মাত্র চার জন জয়ী সদস্য থাকলেও জয়ী সাত তৃণমূল সদস্যের সমর্থনে কংগ্রেস সেখানে বোর্ড গড়েছে। ফলে সভাপতি নির্বাচনের ভোটে সিপিএম সদস্য শ্যামলী রাজবংশীকে ১১-১০ ভোটে হারিয়ে ওই সমিতির সভাপতি হন কংগ্রেস সদস্য ধীমান সাহা। সহ-সভাপতিও কংগ্রেসেরই আলি মোর্তাজা খান। নব নির্বাচিত সভাপতির দাবি, “আমাদের থেকে জয়ী সদস্য বেশি থাকলেও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব সভাপতি ও সহ-সভাপতির পদে কংগ্রেসকেই চেয়েছেন। তা ছাড়া তৃণমূলের দেওয়া ওই প্রস্তাবে আমাদের দলীয় হাইকমান্ডেরও আপত্তি ছিল না।” একই কাণ্ড ঘটেছে রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনেও। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটের ফলে ২৬ জন জয়ী সদস্যদের দলীয় অবস্থান ছিল কংগ্রেস ১২, সিপিএম ৮, তৃণমূল ৪ ও ফরওয়ার্ড ব্লক ২। সোমবার সভাপতি নির্বাচনের ভোটে জয়ী তৃণমূলের সদস্যেরা কংগ্রেসের প্রস্তাবিত দৌলতুন্নেসাকেই সভাপতি পদে সমর্থন জানান। শুধু তৃণমূলই নয়, এক ফব সদস্যও তাদের সমর্থন জানিয়েছেন বলে কংগ্রেস পক্ষের দাবি। ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে সহ-সভাপতি হয়েছেন কংগ্রেসেরই রাজকুমার মাল।
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মির দাবি, “স্থানীয় নেতৃত্বের ঠিক করা সিদ্ধান্তই হাইকমান্ড মেনে নিয়েছে। এটা না করলে বামফ্রন্টের সভাপতি নির্বাচিত হত।” এ দিকে কিছুই জানি না বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এমনটা হয়ে থাকলে, ঠিক হয়নি। তবে ওখানে কী হবে তার দায়িত্বে, তাঁদের কাছ থেকে খোঁজ নিচ্ছি।” যদিও মুরারই ১ ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি বিনয় ঘোষ ও রামপুরহাট ২ ব্লকের জয়ী তৃণমূল সদস্য মহম্মদ রফিউদ্দিনদের অবশ্য যুক্তি, “বামেদের ঠেকাতেই কংগ্রেসকে সমর্থন।” বিনয়বাবুর দাবি, “মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদটি সংরক্ষিত। সেখানে দলের কোনও নির্বাচিত সদস্য ছিলেন না। তাই বামেদের রুখতে কংগ্রেসকে সমর্থন করা হয়েছে।” এ দিকে রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে তাঁদের যে নির্বাচিত সদস্য কংগ্রেসকে সমর্থন করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ফব-র জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়। |