ঘটনা ১: ২০০৫-এ সল্টলেকের তরুণী রোমা ঝাওয়ার অপহরণ নিয়ে রাজ্য জুড়ে চলছে তোলপাড়। অপহরণকারীদের কয়েকজনের হদিস মেলে তারাপীঠে।
ঘটনা ২: বছর কয়েক আগে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে এক যুগল তারাপীঠের একটি লজে ওঠেন। পরে ঘরেই মহিলা খুন হন। স্বামী বলে পরিচয় দেওয়া পুরুষটির ঠিকানা, ফোন নম্বর ছিল ভুয়ো। বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়াই তাঁদের ঘর ভাড়া দেওয়া হয়।
ঘটনা ৩: দু’বছর আগে তারাপীঠ মন্দিরের কাছে ভরসন্ধ্যায় সেতুর উপরে কৃষ্ণনগরের এক যুবককে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা।
এগুলো উদাহরণমাত্র। পুলিশের খাতায় তারাপীঠে এ রকম অনেক ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে। দুষ্কর্ম করে লুকনো বা দুষ্কর্ম করার জায়গা হিসেবে অপরাধীরা তারাপীঠকে কেন ব্যবহার করে জানতে চাওয়ায় জেলা পুলিশের এক কর্তার ব্যাখ্যা, গত এক দশকে যথেচ্ছ ভাবে এখানে বহু লজ-হোটেল গড়ে উঠেছে। পুলিশের তরফে হোটেল ও লজগুলির মালিকদের ঘর ভাড়া দেওয়ার আগে বোর্ডারদের বৈধ পরিচয়পত্র ভাল করে দেখে নিতে বলা হয়। কিন্তু অনেকেই সে নির্দেশ মানেননি। হোটেল-লজের রিসেপশন-এলাকায় ক্লোজড সার্কিট টিভি লাগাতে বলা হয়েছিল। তা-ও সবাই করেননি। |
মন্দিরের আশপাশে গজিয়ে উঠেছে নতুন নতুন হোটেল।—নিজস্ব চিত্র। |
‘তারাপীঠ লজ মালিক সমিতি’র কার্যকরী সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘তারাপীঠে সমস্ত লজ মালিকদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখে ঘরভাড়া দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু অনেকে নির্দেশ মানছেন না। আবার যাঁরা আমাদের সংগঠনের সদস্য নন, তাঁদের আমরা জোর করে সরকারি নির্দেশ মেনে চলতেও বলতে পারছি না।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেই হোক বা লাগোয়া জেলা বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ থেকেই হোক তারাপীঠে সহজেই চলে আসার ট্রেন এবং যানবাহন রয়েছে। অপরাধীরাও সহজে গা ঢাকা দেওয়ার জন্য অপরিচিত মানুষের ভিড়ে ঠাসা তারাপীঠকেই বেছে নিচ্ছে। চুরি, ছিনতাই আকছার ঘটছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “তারাপীঠের বিভিন্ন লজে, হোটেলে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হয়। লজ মালিকদেরও ত্রুটিগুলি দ্রুত সংশোধন করতে বলা হয়েছে।”
পরিস্থিতির জন্য আঙুল উঠছে পুলিশের দিকেও। তারাপীঠ পর্যটনক্ষেত্রকে কার্যত আড়াআড়ি ভাবে ভাগ করেছে দু’টি থানামাড়গ্রাম ও রামপুরহাট। তারপীঠে কোনও অপরাধ ঘটলে, ঘটনাস্থল কোন থানার মধ্যে পড়ছে পুলিশ কর্মীদের কাছে সেটাই আগে বিবেচ্য হয়ে ওঠে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। যদিও অভিযোগ মানেনি কোনও থানাই। তারাপীঠে অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মাড়গ্রাম থানার অধীনে তারাপীঠ মন্দির লাগোয়া এলাকায় একটি ফাঁড়ি খোলা হয়। কিন্তু সেখানে এক জন সাব-ইনস্পেক্টর, দু’জন এএসআই ও ছ’জন কনস্টেবল আছেন। সর্বভারতীয় এই পর্যটনকেন্দ্রের নিরাপত্তা-ব্যবস্থার জন্য ওই ক’জন পুলিশকর্মী যে পর্যাপ্ত নন, তা মেনে নিয়েছেন জেলা পুলিশের একাধিক কর্তাও। এক পুলিশ-কর্তা বলেন, “তারাপীঠ লাগোয়া খরুণ, বড়শাল ও সাহাপুর পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে আলাদা থানা তৈরির প্রস্তাব বহু বার রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা অনুমোদন পায়নি।” পুলিশ সুপারের আশ্বাস, “তারাপীঠে আলাদা থানা তৈরির চেষ্টা করছি। আশা করা যায়, শীঘ্রই তার অনুমোদন মিলবে।” |