দুই অলিন্দ, দুই নিলয় বা মহাধমনী ও ফুসফুসিয় ধমনীর মাঝে ফুটো থাকলে পরিশোধিত রক্তের সঙ্গে মিশে যায় দূষিত রক্ত। তাতে শ্বাসকষ্ট-সহ নানা সমস্যা, এমনকী কয়েক বছরের মধ্যে শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে। তাই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে হয়। সেই ধকলও যে সব শিশু সহ্য করতে পারে, তা নয়। কিন্তু এখন অস্ত্রোপচার ছাড়াও বিশেষ এক উপায়ে এই ধরনের সমস্যা সমাধান সম্ভব। সেই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েই একটি কর্মশালা করল দুর্গাপুরের দ্য মিশন হাসপাতাল।
শনিবার এই ‘ইন্টারন্যাশানাল পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি ওয়ার্কশপ’-এ ওই চিকিৎসা পদ্ধতি বিশদে জানান হাসপাতালের চিকিৎসক সুপ্রতিম সেন, ম্যাঞ্চেস্টার রয়্যাল চিলড্রেন্স হাসপাতালের চিকিৎসক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েক জন চিকিৎসক। সুপ্রতিমবাবু জানান, এটি অনেকটা বড়দের হৃদযন্ত্রে বেলুন সার্জারির মতো। ক্যাথিটারের সাহায্যে একটি বিশেষ ‘ডিভাইস’ দিয়ে হৃদযন্ত্রের ফুটো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতির পরে এক-দু’দিনের মধ্যে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। |
চলছে কর্মশালা।—নিজস্ব চিত্র। |
দেশের ৪-৫টি হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। পূর্ব ভারতে কলকাতা ছাড়া এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয় শুধু দুর্গাপুরের এই হাসপাতাল। খরচ অন্তত দেড় লক্ষ টাকা। অনেকেই তা জোগাড় করতে পারেন না। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, সাধারণ মানুষ তো দূর, অনেক চিকিৎসকও এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে জানেন না। তিনি বলেন, “নতুন এই পদ্ধতিতে কাটাছেঁড়া করতে হয় না। ঝুঁকি কম।” ডিএসপি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অসিতকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “আধুনিক এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদে অনেকেই জানেন না। এই ওয়ার্কশপে এসে অনেকেই উপকৃত হয়েছি।”
হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু জানান, তাঁরা রাজ্য জুড়ে শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসার শিবির করে থাকেন। তিন মাস অন্তর হাসপাতালে বিশেষ শিবির করা হয়। সেখানে জয়দীপবাবু থাকেন। দুঃস্থ পরিবারের শিশুদের খরচ জোগাতেও সহযোগিতা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সত্যজিৎবাবু জানান, হাসপাতাল থেকে অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা আছে। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকেও সাহায্যের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে প্রায় দু’হাজার শিশুর জন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
এ দিনই পশ্চিম সিকিমের কালুকের ৭ বছরের মেয়ে জিনা তামাঙ্গের পিডিএ সমস্যার সমাধান করা হয়। তাঁর মা অমৃতা তামাঙ্গ জানান, স্বামী মনিকুমার খেতমজুরের কাজ করেন। সিকিম সরকারের সহায়তা প্রকল্পে চিকিৎসা হল। মনিকুমার বলেন, “মেয়েকে নিয়ে আজ দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম।” |