জেলা হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর বালাই নেই। দিনরাত যে কেউ অবাধে ঢুকে পড়ছে ওয়ার্ডের মধ্যে। এক নাগাড়ে বছর পাঁচেক ধরে এই অবস্থা চলায় হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজকর্মে দেখা দিচ্ছে সমস্যাও। এমনই হাল শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বারবার টেন্ডার ডেকেও নানা কারণে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা যাচ্ছে না।
জানা গিয়েছে, জেলা হাসপাতালে ঠিকাদারের মাধ্যমে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হত। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ভাবেই নিযুক্ত নিরপত্তারক্ষীরা হাসপাতালের নিরাপত্তার দেখভাল করে এসেছেন। কিন্তু তৎকালীন রোগী কল্যাণ সমিতি ঠিকা পদ্ধতিতে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা পাকাপাকি রদ করে দেয়। তারপর থেকে এখনও অবধি শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল অরক্ষিত হয়ে রয়েছে। নিরাপত্তার শিথিলতার সুযোগে রোগীর আত্মীয়রা নির্দিষ্ট নিয়মে ওয়ার্ডে ঢোকার নিয়মের তোয়াক্কা না করে যখন তখন জরুরি বিভাগে পা দিচ্ছেন। মহিলা বিভাগে পুরুষরা যাতায়াত করছেন অবাধে। পোষ্যরাও স্থায়ী ঘাঁটি গেড়েছে হাসপাতালের ভিতরে। রোগীদের সঙ্গে বিছানা ভাগ করে শুয়ে থাকে কুকুর-বেড়ালের দল। |
ভাতকুণ্ডা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র।—নিজস্ব চিত্র। |
এক জন ডাক্তার, আর এক নার্স। পাঁচটি গ্রামের প্রায় বিশ হাজার মানুষের ভরসা তাঁরাই। এ গ্রাম সে গ্রামের রোগী সামলে নিজেরাই ওষুধ দেন, রোগীদের টোকেনও লিখে দেন।
রোগী থেকে চিকিৎসক সবারই দাবি, আউশগ্রাম ২ পঞ্চায়েতের ভাতকুণ্ডা গ্রামের এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্ত পরিকাঠামোরই উন্নতি দরকার। গ্রামবাসীরা এ নিয়ে একাধিকবার দাবিও জানিয়েছেন। তবে লাভ বিশেষ হয়নি। ভাতকুণ্ডা গ্রাম ছাড়াও আশপাশের দেবশালা, গেঁড়াই, বিষ্টুপুর, মৌকাটা গ্রামের বাসিন্দারাও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। ফলে প্রতিদিন রোগীর ভিড় ভালই থাকে। কিন্তু কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না থাকায় সব কাজই নার্স বা চিকিৎসককেই করতে হয়। স্থানীয়রাই জানান, দিনের পর দিন রোগীর চাপ বাড়ছে। কিন্তু কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বা ফার্মাসিস্ট নেই। এমনকী হাসপাতাল পরিস্কার রাখার কাজও এলাকার কিছু মানুষই পালা করে করেন। এলাকারই বাসিন্দা আরিফ হোসেন জানান, একজনের পক্ষে হাসপাতাল সামলানো খুবই মুশকিলের। তার মধ্যে কোনও কারণে নার্স ছুটি নিলে রোগীদের টোকেন লেখা, চিকিৎসা করা থেকে ওষুধ দেওয়া সবটাই চিকিৎসককেই করতে হয়। তিনি আরও জানান, এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগে ছ’টি শয্যা ছিল। কিন্তু কর্মীর অভাবে বেশ কয়েক বছর আগে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীদের আর্জি, স্বাস্থ্য দফতর যদি এই হাসপাতালের দিকে নজর দেন তাহলে তাঁদের উপকার হয়। সেক্ষেত্রে রোগীদের মানকর, জামতাড়া বা দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালেও বারবার নিয়ে যেতে হয় না। তাঁরা জানান, এ বার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বিষয়টি নিয়ে দরবার করবেন তাঁরা। ভাতকুণ্ডা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েও দেখা যায়, রোগীদের চাপে কথা বলারই সময় নেই চিকিৎসকের। আর নার্স রোগীদের ওয়ুধ দিচ্ছেন, আবার মাঝেমধ্যে রোগীকে ব্যান্ডেজও করে দিচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে দেখাতে আসেন। কিন্তু একজন চিকিৎসক থাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। এমনই এক রোগী ভাতকুণ্ডার রাজিয়া বেগম বলেন, “সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। একজন ডাক্তার হওয়ায় খুবই সমস্যা।” প্রেমগঞ্জ থেকে আসা রানু পাত্র বলেন, “চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বাড়ালে আমাদের মতো রোগীদের সুবিধা হয়।” আরও চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীর প্রয়োজনের কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক সুদীপ্ত মাইতিও। তিনি জানান, বিস্তীর্ণ এলাকায় এই একটিই স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। ফলে রোগীর চাপ তো থাকেই। তিনি বলেন, “ডাক্তার, নার্স ছাড়াও একজন ফার্মাসিস্ট ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ করা হলে পরিষেবা দিতে আমাদেরও সুবিধা হয়।” |