|
|
|
|
মোর্চার কথা উড়িয়ে কালিম্পঙে লেপচারা
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি
রেজা প্রধান • দার্জিলিং |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে সফরের সময় পাহাড়ে কার্যত বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন বিমল গুরুঙ্গ। কিন্তু তাঁর সেই ‘ঘর ভিতরো জনতা’ কর্মসূচি শুরুর আগে বন্ধ শিথিলের সুযোগে লেপচা সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ কালিম্পঙে জড়ো হয়ে গিয়েছেন। উদ্দেশ্য, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানো। এই পরিস্থিতিতে সুর পাল্টে মোর্চা সভাপতি রবিবার শুভকামনাই জানিয়েছেন মমতাকে। তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পঙে লেপচাদের অনুষ্ঠানে আসছেন। আমাদের তরফে আগাম শুভেচ্ছা।” সঙ্গে অবশ্য খোঁচাও রয়েছে, “ডুয়ার্সের নেপালিদের এনে এই অনুষ্ঠান সফল করার চেষ্টা হচ্ছে।” যদিও গুরুঙ্গের এই কথা শুনে প্রশাসনের একাংশ বলছে, অনুষ্ঠানটি যে সফল হতে পারে, তা আঁচ করেই আগাম সুর পাল্টে নিলেন গুরুঙ্গ।
একই সঙ্গে গুরুঙ্গ ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁদের ধৃত সাড়ে আটশো নেতা-কর্মীকে ছাড়া না হলে ৪ সেপ্টেম্বর জিটিএ-র নতুন চিফ নির্বাচনে তাঁরা অংশ নেবেন না।
কালিম্পঙের অনুষ্ঠানে কি ডুয়ার্স থেকে লোক আনা হচ্ছে? অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ইন্ডিজেনাস লেপচা ট্রাইবাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএলটিএ) দাবি করেছে, ডুয়ার্স থেকে কেউ কালিম্পঙের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেননি। এ দিন সংগঠনের তরফে কেউ প্রকাশ্যে বিবৃতি দেননি। তবে সংগঠনের সদস্যদের একাংশ জানান, সুবাস ঘিসিংয়ের আমলে তাঁরা গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনে সহযোগিতা করলেও গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গঠনের পরে লেপচাদের উন্নয়নের জন্য আলাদা ভাবে কিছু করা হয়নি। ২০০৭ সালে মোর্চার উত্থানের পরে তাদেরও সমর্থন করেন লেপচারা। কিন্তু জিটিএ গঠনের পরে লেপচাদের জন্য আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার প্রস্তাব মোর্চা নেতারা পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন বলে সংগঠনের একাংশের অভিযোগ। তাই রাজ্য সেই পর্ষদ গড়ার পরে তাঁরা ঝুঁকি নেওয়ার সাহস পেয়েছেন, জানিয়েছেন আইএলটিএ-এর এক প্রবীণ সদস্য। |
|
লেপচাদের অনশন।—নিজস্ব চিত্র |
মোর্চার তরফে কিন্তু অভিযোগ তোলা হয়েছিল, পর্ষদ গঠন নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করছে রাজ্য। যদিও রাজ্য মনে করছে, পাহাড়ের অন্যতম প্রাচীন এই জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। রাজ্যের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “পাহাড়ের অন্যতম প্রাচীন জনগোষ্ঠীর দাবি এত দিন কেউ পূরণ করেনি। সকলেই ওঁদের নানা ভাবে ব্যবহার করেছেন। এখন নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন লেপচারা। রাজ্য সরকার সব সময় ওঁদের পাশে থাকবে।” মোর্চা যে বিভাজনের রাজনীতির কথা বলছে, তাকেও পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “কেউ অনাদরে-অবহেলায় পড়ে থাকবে, আর কেউ ক্রমাগত ক্ষমতা বাড়িয়ে নেবে এমন রাজনীতিতে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বাস করেন না। তাই লেপচারা এখন ভরসা পেয়ে রাস্তায় বার হয়েছেন।”
এত দিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান নিয়ে প্রকাশ্যে একটাও কথা বলেননি গুরুঙ্গ। বরং ওই অনুষ্ঠানে যাতে লেপচারা অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য সোমবার ও মঙ্গলবার পাহাড়ের মানুষকে ‘ঘরে বসে থাকার’ ফতোয়া দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু শনিবারের বন্ধ শিথিলের সুযোগে লেপচা সম্প্রদায়ের প্রায় ৭ হাজার সদস্য কালিম্পঙে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁরা সেখানেই একাধিক রান্নাঘর তৈরি করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। অনুষ্ঠান হবে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত। তার পরেই তাঁরা কালিম্পং ছেড়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
মোর্চার অন্দরের খবর, গুরুঙ্গ যে শুধু লেপচাদের তরফে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তা-ই নয়, নিজের দলের জিটিএ সদস্যদের একাংশও বন্ধ তোলার ব্যাপারে তাঁর উপরে চাপ বাড়াচ্ছে। স্কুল-কলেজের তরফেও চাপ বাড়ানো হয়েছে। কার্যত কোণঠাসা হয়ে এখন স্কুল-কলেজ খোলার রাখার বিষয়টিকে সামনে রেখে বন্ধ থেকে ফেরার রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে মোর্চাকে। মোর্চার উদ্যোগে গঠিত গোর্খাল্যান্ড অ্যাকশন কমিটির চেয়ারম্যান এনোস দাস প্রধানের কথায়, “একবার যখন স্কুল খুলে যাবে, তখনই আমাদের দোকান, গাড়ি চলাচলের অনুমতিও দিতে হবে। তাই এই বিষয়গুলি নিয়ে আরও কথার প্রয়োজন রয়েছে।”
বন্ধ তোলার ব্যাপারে তাঁর উপরে যে চাপ বাড়ছে, গুরুঙ্গ এ দিন সে কথা খোলাখুলি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কিছু জিটিএ সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা অন্য ধরনের সমাধানের কথা বলছেন। আমাকে প্রস্তাব দিচ্ছেন। আমি তাঁদের এই ধরনের অনুরোধ করতে নিষেধ করেছি। গোর্খাল্যান্ড ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে আমি আগ্রহী নই।” তাঁর কথায়, “প্রয়োজনে গোর্খাল্যান্ডের জন্য প্রাণও দিতে পারি। রাজ্য আমাদের যতই চাপ দিন না কেন, আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পথে চলবে। তবে স্কুল খোলার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে ভাবছি।”
এ দিন বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন কালিম্পঙের বিধায়ক তথা মোর্চা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হরকাবাহাদুর ছেত্রী। বিমানে ওঠার আগে তিনি বলেন, “আমরা ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করব। রোশন গিরি দিল্লিতে আছেন। তিনি সাক্ষাতের সময় বের করার চেষ্টা করছেন।”
সোমবার পাহাড়ে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তখন তাঁরা দিল্লি গিয়ে কি রাজ্যের প্রতি চাপ বাড়াতে চাইছেন? হরকাবাহাদুর বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী লেপচাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাহাড়ে যাচ্ছেন। তাই আমাদের থাকার প্রশ্ন নেই। তা ছাড়া আমাদের ‘ঘরের ভিতরে জনতা’ কর্মসূচি চলবে।”
মোর্চা নেতাদের দিল্লি যাওয়া নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “যে কেউ যেখানে খুশি যেতে পারেন। আমাদের কিছু যায় আসে না। মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে সকলেই উপস্থিত থাকবেন।” |
|
|
|
|
|