স্কুলে গোর্খাল্যান্ডের দাবি প্রচারের ফতোয়া
বার পাহাড়ের স্কুলগুলিতে প্রার্থনার পরে রোজ ৫ মিনিট করে গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে প্রচার করতে হবে বলে কার্যত ‘ফতোয়া’ দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। রবিবার দার্জিলিঙের সিংমারিতে নর্থ পয়েন্ট স্কুলের মাঠে পাহাড়ের নানা স্কুলের প্রতিনিধি ও পড়ুয়াদের একাংশের উপস্থিতিতে গুরুঙ্গ এ কথা জানান। সেই সঙ্গেই পাহাড়ের আইসিএসই এবং আইএসসি স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষকে গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে চিঠি পাঠাতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে শনি এবং রবিবার স্কুল পড়ুয়াদের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মিছিলে সামিল হওয়ার অনুমতি দিতে হবে। এই তিনটি শর্তে পাহাড়ের সব স্কুলকে বন্ধ থেকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোর্চা।
যদিও গুরুঙ্গের দাবি, “এটা নির্দেশ নয়, আমাদের অনুরোধ। স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি আশা করি সহযোগিতা করবেন।” তিনি বলেন, “রোজ প্রার্থনার পরে জাতীয় সঙ্গীত শেষ হলে ৫ মিনিট করে পড়ুয়াদের গোর্খাল্যান্ডের দাবি কেন যুক্তিযুক্ত, তা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ছাত্রছাত্রীদের বোঝাতে হবে। গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে স্কুলের তরফে কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখতে হবে। শনি ও রবিবার পড়ুয়ারা যাতে মিছিলে সামিল হয়, সেই অনুমতি দিতে হবে।” কেন এমন নির্দেশ দিচ্ছেন, সেই ব্যাপারে গুরুঙ্গের যুক্তি, “শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের আর্জি মেনে সব স্কুলকে বন্ধ থেকে ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদেরও কিছুটা আত্মত্যাগ করতে হবে।” তবে কবে থেকে স্কুল গুলি বন্ধ থেকে ছাড় পাবে, তা অবশ্য ঘোষণা করেননি মোর্চা সভাপতি। তিনি বলেন, “আমরা স্কুলগুলিকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। ফের বৈঠক হবে। তার পরে দিনক্ষণ জানানো হবে।”

মোর্চার উদ্যোগে সিংমারির সভায় ভোজ। রবিবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
এই ঘটনায় পাহাড়ের স্কুল কর্তৃপক্ষ তো বটেই, পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মধ্যেই ক্ষোভ দানা বাঁধছে। একাধিক স্কুলের তরফে আশঙ্কা করা হয়েছে, এ ধরনের ‘ফতোয়া’ মানতে বাধ্য করা হলে বহু অভিভাবক ছেলেমেয়েদের বোর্ড থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যাবেন। বেশ কয়েকটি শতবর্ষ প্রাচীন স্কুলও ওই সিদ্ধান্ত মানা আদপে সম্ভব নয় বলেও একান্তে জানিয়ে দিয়েছেন। পাহাড়ের কয়েকজন অভিভাবকও জানান, স্কুল থেকেই যদি পড়ুয়াদের রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামানো হয়, তা হলে অনেকের পড়াশোনাই লাটে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ের পড়ুয়াদের একাংশকে সমতলে পাঠানোর কথা তাঁরা ভাবতে বাধ্য হবেন, বলেও অভিভাবকদের একাংশ জানিয়ে দিয়েছেন।
এ ধরনের ফতোয়া কখনও স্কুলের পক্ষে মানা সম্ভব নয় বলে রাজ্য সরকারও মনে করছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “শিক্ষা পরিবেশ কেমন থাকবে, স্কুলে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না তা নিয়ে সরকারের স্পষ্ট নীতি রয়েছে। স্কুল পড়ুয়াদের পোশাক পরিয়ে রাজনৈতিক মিছিলে আনা যাবে না বলে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। শিক্ষার অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কাজেই তা খর্ব করার চেষ্টা আইন কিংবা আমজনতা কেউই মানতে পারবে না।” এ দিন মোর্চার উদ্যোগে সম মনোভাবাপন্ন কয়েকটি দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত গোর্খাল্যান্ড অ্যাকশন কমিটির বৈঠক ছিল নর্থ পয়েন্ট স্কুলের মাঠে। সেখানে কমিটির সদস্যরা প্রথমে আলোচনা করে স্কুল খোলানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে গুরুঙ্গ সকলের সামনে ওই ‘ফতোয়া ও শর্ত’ জানিয়ে দেওয়ার পরেই সব মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
গোর্খাল্যান্ডের দাবির সমর্থক হলেও অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ কিন্তু মনে করছে, এতে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “স্কুল পড়ুয়াদের রাজনৈতিক বিষয়ে সামিল করা উচিত নয়। তা ছাড়া এ হেন সিদ্ধান্ত মানলে স্কুল পড়ুয়াদের রাজনৈতিক উদ্দেশে সামিল করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের যে নির্দেশ রয়েছে, তা অবমাননা করা হবে।”
জিএনএলএফের একাধিক নেতা এদিন নাম প্রকাশ না-করার শর্তে গুরুঙ্গের ফতোয়াকে ‘তালিবানি’ বলে অভিযোগ করেছেন। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, এমন শর্ত মানার চেয়ে অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ পাহাড় ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাববেন। গুরুঙ্গকে উদ্দেশ্য করে তাঁদের বক্তব্য, যিনি নিজে স্কুলের গণ্ডী পেরোতে পারেননি, তাঁর পক্ষেই এমন ‘ফতোয়া’ দেওয়া সম্ভব।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.