যে আসন তুলনায় ইতিবাচক, সেই আসন চাই। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হলে এমন টানাপোড়েন চেনা ছবি। আগামী লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে বামফ্রন্টের অন্দরেও এ বার তেমন দর কষাকষির আবহ তৈরি হচ্ছে! খাতা-কলম নিয়ে অঙ্ক কষতে বসেছে সিপিএম এবং বাম শরিকেরা!
রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসন বহু দিন ধরেই পরম্পরাগত ভাবে বাঁটোয়ারা হয়ে আসছে সিপিএম এবং তিন বাম শরিকের মধ্যে। কিন্তু এ বার সেই ভাগের ছকে কিছু অদল-বদল চান শরিক নেতৃত্বের একাংশ। আলিমুদ্দিনের কাছে তাঁদের দাবি, অন্তত একটি তুলনামূলক ভাবে ইতিবাচক আসনে তাঁদের লড়তে দেওয়া হোক। নইলে দিল্লিতে দলের দফতর ধরে রাখাই অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে! পঞ্চায়েত ভোটে এ বার অনেক উদার ছিল আলিমুদ্দিন। তারাও আপাতত অঙ্ক কষতে ব্যস্ত। কোন আসনের কী অবস্থা, প্রাথমিক ছক তৈরি করে শরিকদের যন্ত্রণা তারা ভেবে দেখবে।
লোকসভা ভোট ঘিরে বামফ্রন্টের মধ্যে এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার কারণ সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটের ফল। এবং বাম শরিকদের মধ্যে এই অবস্থায় সব চেয়ে বেশি উদ্বেগে ফরওয়ার্ড ব্লক। রাজ্যের যে তিনটি লোকসভা আসনে তারা লড়ে থাকে, তার মধ্যে বারাসত গত বারই হাতছাড়া হয়েছে। জেতা দু’টি আসন পুরুলিয়া ও কোচবিহারও পঞ্চায়েত ভোটের ফলের নিরিখে নড়বড়ে দেখাচ্ছে! রাজ্যসভার একমাত্র দলীয় সাংসদ বরুণ মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদ আগামী মার্চে ফুরিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যসভার যে পাঁচটি আসনে তখন নির্বাচন হবে, তার মধ্যে বামফ্রন্ট সরাসরি জিততে পারবে একটিতেই। সেখানেও ফ ব-র ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা কম। তার পরে লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া, কোচবিহার খুইয়ে বসলে দিল্লিতে তাদের কেন্দ্রীয় দফতরই হাতছাড়া হতে পারে! সেই চিত্ত বসুর আমল থেকে যে সাংসদ-বাংলো ফ ব-র কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর হিসাবে কাজ করে আসছে।
বিপন্নতা বুঝে ফ ব-র রাজ্য নেতৃত্ব কয়েকটি লোকসভা আসনের তালিকা তৈরি করেছেন। বড় শরিকের কাছে তাঁরা দাবি জানাতে চান, ইতিবাচক দেখে একটি বাড়তি আসন তাঁদের দেওয়া হোক। বা বদলে দেওয়া হোক তাঁদের কোটার একটি আসন।
বাম সূত্রের খবর, এই বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন প্রবীণতম বাম নেতা অশোক ঘোষ। ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “অনেক রকম অঙ্ক এখন মাথায় রাখতে হচ্ছে! উত্তরবঙ্গে রায়গঞ্জ, উত্তর মালদহ বা দক্ষিণবঙ্গে বনগাঁ প্রাথমিক ভাবে এই আসনগুলির মধ্যে কোনও একটা আমরা পেলে ভাল হয়। প্রয়োজনে বারাসত ছেড়ে দিয়ে বনগাঁ আমরা নিতে পারি।” লোকসভা আসনগুলির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও বেছে ফেলতে জেলা কমিটিগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন ফ ব-র রাজ্য নেতৃত্ব। সীমানা পুনর্বিন্যাসের জেরে গত বারই হাবড়া, গাইঘাটার কিছু এলাকা বারাসত থেকে বেরিয়ে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে ঢুকে গিয়েছে। সেই সব এলাকায় এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করেছে বামেরা। আর বারাসতে রয়েছে সল্টলেক, নিউ টাউন। যা নিয়ে বামেদের চিন্তা বেশি। পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে রায়গঞ্জ বা উত্তর মালদহেও বামেরা তুলনায় স্বস্তিদায়ক জায়গায়।
কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশিকা মেনে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব এখন তিন ভাগে আসন ভাগ করে পঞ্চায়েতের ময়না তদন্ত করছেন। এক, যেখানে সন্ত্রাস ও কারচুপির জেরে সুষ্ঠু ভোটই হয়নি। দুই, যেখানে আংশিক ‘ভোট লুঠ’ সত্ত্বেও কিছুটা স্বাভাবিক ভোট হয়েছে। তিন, যেখানে সন্ত্রাসের অভিযোগ ছাড়াই ভোট মিটেছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “এই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিধানসভা আসনভিত্তিক একটা হিসাব বার করা হবে। সেটা ধরেই লোকসভা আসনের একটা ছবি পাওয়া যাবে। তার পরে বাকি বিষয় বিবেচনা করা যাবে।”
সেপ্টেম্বরের ৬,৭,৮ তারিখ বর্ধিত রাজ্য কমিটিতে পঞ্চায়েতের সবিস্তার রিপোর্ট জমা পড়ার পরেই এই কাজে হাত দেওয়া যাবে বলে আলিমুদ্দিনের বক্তব্য। |