বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে। এর পরেই বাজি তৈরির রমরমা কারবার শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। কিন্তু বাজির কারখানাগুলিতে যে নিরাপত্তার ন্যূনতম ব্যবস্থাও রাখা হয়নি, শনিবার রাতে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার বারুইপুর থানার হারাল গ্রামে
বাজি কারখানায় কাজ করার সময়ে সিদ্ধার্থ বাগ ওরফে ভকতের (১৭) মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্থানীয় মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ বাজি ব্যবসায়ী কানাই মণ্ডলের কারখানায় কাজ করত। ওই কারখানায় মূলত রঙিন আতসবাজি তৈরি হয়। শনিবার বিকেলে সিদ্ধার্থ-সহ চার শ্রমিক অতিদাহ্য রাসায়নিক-সহ আতসবাজির মশলা তৈরি করছিল। আচমকাই ওই মশলায় আগুন ধরে যায়। সিদ্ধার্থের গোটা শরীর তাতে ঝলসে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হারাল গ্রামে প্রচুর অবৈধ আতসবাজির কারখানা চলছে। অথচ, সেগুলিতে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই।
রবিবার সকালে ওই গ্রামের পঞ্চায়েতপ্রধান মলয় বিশ্বাস কারখানাটি পরিদর্শনে যান। গ্রামের পরিস্থিতিও ঘুরে দেখেন তিনি। তিনি জানান, ওই সব কারখানায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন। দরকারে প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
রবিবার সকালে হারাল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার অধিকাংশ বাড়ির পিছনেই প্লাস্টিক-অ্যাসবেসটসের ছোট ছোট বাজির কারখানা রয়েছে। কানাইবাবুর দোতলা বাড়ির পিছনেও তেমনই ১৫০ বর্গ ফুটের কারখানা, সেখানেই আগুনে ঝলসে যায় সিদ্ধার্থ। ওই ঘরের মধ্যে তখনও বারুদের ঝলসানো দাগ। ঘরের এক কোণে রয়েছে ড্রাম ও বস্তাভর্তি অতিদাহ্য বস্তু। তবে শুধু কানাইবাবুর কারখানাই নয়, ওই এলাকার অধিকাংশ কারখানার একই চিত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ বাজি কারখানারই বৈধ লাইসেন্স নেই। স্থানীয় বাজি ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে। উৎসবের মরসুমের জন্য এখন থেকেই বিভিন্ন কারখানায় প্রচুর বাজির বরাত আসছে। উৎসবের আগেই ওই বাজির জোগান দিতে হবে। তাই চটজলদি বাজি তৈরি করতে গিয়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে অনুমান পুলিশের। কারখানার মালিক কানাইবাবুর কাছে কারখানার লাইসেন্স সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “এখানে চার জন কাজ করছিল। অসাবধানতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।” দিনে ২০০ টাকা মজুরিতে ওই কারখানায় জনমজুররা কাজ করে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিদ্ধার্থর মা বাসন্তীদেবী জানান, সাধারণত ছেলে সকালে কাজে গিয়ে বিকেল ৪টের মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসত। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ তার ফিরতে রাত হচ্ছিল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “ওই এলাকায় বেশ কিছু বাজির কারখানা রয়েছে। সেগুলির বৈধতা রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে।” |