হুঁশ নেই প্রশাসনের
জেটি নেই, ঝুঁকির যাত্রা গেঁওখালিতে
জেটিঘাট নেই। শুধু নদীর ঢাল বরাবর ভাঙা কংক্রিটের সিঁড়ি। পা টিপে টিপে তা দিয়ে নেমেই লঞ্চে ওঠেন যাত্রীরা। কখনও আবার ভাটার সময় পাড়ে আসার আগেই লঞ্চ আটকে যায় চড়ায়। তখন কাঠের সরু একটা মই ঠেকানো হয় লঞ্চে। তা দিয়েই উঠতে হয় যাত্রীদেরসে কচিকাঁচাই হোক বা বৃদ্ধ। এই ভাবেই চলছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার বেতকুণ্ডু পঞ্চায়েত এলাকার গেঁওখালির ফেরি ব্যবস্থা। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। পা পিছলে দুর্ঘটনাও ঘটছে মাঝেমধ্যে। টনক নড়েনি প্রশাসনের। জেটি বানাতে উদ্যোগী হয়নি কেউ। গেঁওখালিতে শ’দুয়েক মিটারের ব্যবধানে দু’টি পথে ফেরি ব্যবস্থা রয়েছেএকটি দিয়ে হাওড়ার গাদিয়াড়া যাওয়া যায়, আর একটি দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নূরপুরে। জেটি নেই কোনওটারই। পুরনো ঘাট আছে শুধু। গাদিয়াড়া ফেরিপথে সেই ঘাটের সিঁড়িগুলির অবস্থাও জরাজীর্ণ। স্থানীয় দোকানদার দিলীপ চন্দ জানান, সেচ দফতর প্রায় তিন দশক আগে ওই সিঁড়ি তৈরি করেছিল। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘাটটি ভেঙে পড়ে থাকলেও সংস্কার হয়নি। গাদিয়াড়ার ব্যবসায়ী কিঙ্কর বাগ বলেন, “ভাঙা ঘাট পিছল থাকার জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গরমকালে ও ভাটার সময় জল নীচে নেমে গেলে ঘাট থেকে প্রায় কুড়ি ফুট দূরে লঞ্চ আটকে যায়। কাঠের সরু মই বেয়ে লঞ্চে উঠতে সমস্যায় পড়তে হয়।” লক্ষ্যা গ্রামের রেখারানি সামন্ত, গাদিয়াড়ার চিন্ময় সামন্তরা বলেন, “গেঁওখালির বাজার অনেক সস্তা। কিন্তু মালপত্র ওঠানামায় ঝুঁকি থাকায় কুলিদের অনেক বেশি টাকা দিতে হয়।”
ভয়ে-ভয়ে। গেঁওখালির গাদিয়াড়া ফেরিপথে নিজস্ব চিত্র।
যাত্রীদের দুরবস্থার কথা ভেবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজেরাই অর্থ জোগাড় করে ঘাটে শৌচালয় তৈরি করিয়েছিলেন। যদিও তাতে দরজা, ছাউনিকিছুই নেই। অত্যন্ত নোংরা ওই শৌচাগারে যেতেও হয় নদীর ঢাল ধরে অনেকটা হেঁটে। যাত্রীদের জন্য কোনও প্রতীক্ষালয়ও নেই। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা।
এ দিকে, ঘাট থেকে গেঁওখালি বাসস্ট্যান্ড প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। ফলে নদী পার হয়ে আসা যাত্রীদের অন্যত্র যেতে অসুবিধা হয়। সেখানে কুঁকড়াহাটি থেকে ডায়মন্ডহারবার বা রায়চক রুটে লঞ্চের সময় অনুযায়ী বাস থাকায় এবং বাসস্ট্যান্ড কাছেই হওয়ায় লোকজন এই ফেরিপথ ব্যবহার করে বেশি। গেঁওখালি-গাদিয়াড়া রুটে লঞ্চ পরিবহণের দায়িত্ব নিয়েছে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। সমিতির গাদিয়াড়া শাখা আধিকারিক উত্তম রায়চৌধুরী বলেন, “ঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। ওই রুটে লাভ কম বলে আমরা কোনও কাজ করতে পারছি না।”
তুলনায় সামান্য ভাল অবস্থা গেঁওখালি-নূরপুর রুটের ঘাটটির। ওই রুটে লঞ্চ পরিবহণের দরপত্র নিয়েছে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি। ওই কোম্পানির এক কর্মী দ্যুতিশঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা দুই-পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছি মাত্র। ঘাটের পরিকাঠামো উন্নত করার ক্ষমতা আমাদের নেই। করতে হলে পূর্ত দফতরকেই কাজ করতে হবে।”
সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, “নদীপাড়ের কিছু অংশ ও ঘাট সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্ষার পরেই কাজ শুরু হবে।”
এলাকাটি হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত। ফলে জেটি তৈরির জন্য পর্ষদেরই মুখাপেক্ষী স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পি উলাগানাথন বলেন, “আমি এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। এলাকাটি ঘিঞ্জি হওয়ায় ওখানে নতুন জেটি নির্মাণের কাজে অবস্থানগত সমস্যা রয়েছে।” তবে, গেঁওখালিতে জেটি তৈরির ভাবনাচিন্তা রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের কেন্দেমারিতে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। তা শেষ হলেই গেঁওখালির পরিকল্পনা করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.