সোমবার লিভারপুলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যানেজার বিল শ্যাঙ্কলি-র ১০০ তম জন্মদিন। অ্যানফিল্ড জুড়েই ছিল ‘ধন্যবাদ শ্যাঙ্কলি’ ব্যানার। মিনিটে মিনেটে সমর্থকরা চিৎকার করে একটাই আবেদন করছিল, ‘আজকের ম্যাচটা জেতো শ্যাঙ্কলির জন্য’। লিভারপুলের তরুণ ব্রিগেড তাদের হতাশ করল না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের ১০০ শতাংশ জয়ের ধারা বজায় রাখল ব্রেন্ডন রজার্সের দল। তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে শেষ হাসি হেসে।
গত কয়েক বছর ইপিএল চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে লিভারপুল। কিন্তু ঐতিহাসিক মর্যাদা কোনও ভাবেই কমেনি এই ম্যাচের। সেই মর্যাদার যুদ্ধ রবিবার ১-০ গোলে জিতে নিল লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগ টেবলের শীর্ষেও উঠে গেল তারা। |
ম্যাচের ফল যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না মোয়েস। রবিবার। ছবি: এএফপি
|
ফার্গুসনের হটসিটে বসে প্রথম হারের স্বাদ পেলেন ডেভিড মোয়েস। ড্যানিয়েল অ্যাগার ও মার্টিন স্কারটেলকে রক্ষণে রেখে স্টারিজকে নিয়ে আক্রমণ সাজান রজার্স। পাশাপাশি ওয়েন রুনির চোট থাকার জন্য ড্যানি ওয়েলবেক ও রবিন ফান পার্সিকে প্রথম দলে রাখেন মোয়েস। প্রথমার্ধের শুরুতেই ৪ মিনিটের মাথায় হেড থেকে গোল করে লিভারপুলকে ১-০ এগোয় স্টারিজ। এরপর গোলকিপারকে নাজেহাল করেও বিরতির আগে সমতা ফেরাতে ব্যর্থ হয় মোয়েসের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড।
ম্যাচের প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেশ ছড়িয়ে পড়ে ফুটবলারদের মধ্যেও। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে বাগ্যুুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন লিভারপুল অধিনায়র স্টিভন জেরার্ড ও ম্যান ইউর স্ট্রাইকার ফান পার্সি। দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি হওয়ারও উপক্রম হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে ফান পার্সি-ওয়েলবেক যুগলবন্দি বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল গোল করার। কিন্তু লিভারপুলের আঁটোসাঁটো রক্ষণের সৌজন্যে গোলের মুখ খুলতে পারেনি মোয়েসের দল। মোয়েস অবশ্য ম্যাচ শেষে বলে দেন, “প্রথম থেকে আমরা খুব ভাল খেলেছি। প্রথমার্ধের শুরুতেই বাজে গোলটা খেলাম। না হলে এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত এই ম্যাচটাতেই সবচেয়ে ভাল খেলেছি আমরা।”
সঙ্গে ওয়েন রুনি না থাকাটাও যে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়, সে কথা মনে করিয়ে দেন মোয়েস। বলেন, “চোটের কারণেই দলে রাখিনি রুনিকে। রুনি না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই ঝামেলায় পড়েছিলাম।” পাশাপাশি জয়ী দলের কোচ রজার্স বলেন, “এই জয় প্রমাণ করল আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি। লিগ টেবলের শীর্ষে থাকলেও আরও ভাল খেলতে হবে পরের ম্যাচগুলোতে।” আর স্টারিজ? পরপর তিনটে ম্যাচে গোল করে দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখার জন্য তরুণ স্ট্রাইকারের সম্বন্ধে একটাই মন্তব্য রজার্সের। “স্টারিজ বিশ্বমানের ফুটবলার হওয়ার ক্ষমতা রাখে।”
|
ফার্গুসনের পরামর্শ
নিতে হবে মোয়েসকে
সুব্রত ভট্টাচার্য |
|
|
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এ মরসুমে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কী ফল করে তা জানতে গোটা ফুটবল দুনিয়া চোখ রাখছে শুরুর দিন থেকেই। যে দলে ঢুকে পড়েছি আমিও। কারণ সেই একটাই। ফার্গুসনের ‘হটসিট’-এ বসে ডেভিড মোয়েস ‘রেড ডেভিলস’-দের সেই চেনা ছন্দ ধরে রাখতে পারেন কি না। যদিও লম্বা ইপিএল-এ অনেক সময় পড়ে রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলতে হচ্ছে, ম্যান ইউয়ের সেই ছন্দটা কোথাও যেন আটকে গিয়েছে। আমার ফুটবল বুদ্ধি যতটুকু তার নিরিখে বলতে পারি, ফার্গুসন সাতাশটা বসন্ত এই ক্লাবটার কোচিংয়ে যুক্ত ছিলেন। হাতের তালুর মতো জানতেন কোন পরিস্থিতির সঙ্গে কী ভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। সেখানে মোয়েসের পক্ষে শুরুর দিকে কাজটা সত্যিই কঠিন। ফলে ফার্গি জমানার সেই গঠনমূলক ফুটবল ম্যাঞ্চেস্টারে নেই। প্রথম ম্যাচ সোয়ানসি সিটির সঙ্গে জেতার পর চেলসি এবং লিভারপুল দু’টো দলের সঙ্গেই কিন্তু গোল পেল না ফান পার্সিরা। চোটের জন্য এ দিন রুনি না থাকায় আরও চাপ বেড়ে গিয়েছিল মোয়েসের দলে। কারণ ৪-২-৩-১ ছকে রুনি নেই। একা বিপক্ষ রক্ষণকে উলটে পালটে দিয়ে গোল করার মতো ফুটবলার ফান পার্সি নয়। ওর দরকার হয় সাপোর্টিং ফুটবলারের। ড্রিবলটা ভাল। বল পায়ে গতিটাও মন্দ নয়। ওয়েলবেকরা সেই সহায়তাটা দিতে পারছে না। তাই টিমটাও এলোমেলো। মাঝমাঠ থেকেও ক্লেভারলি, ক্যারিকরাও দ্রুত অপারেট করতে পারছে না। এগুলো নিশ্চয়ই ও নজরে রাখছে। আমার মতে, মোয়েসের আর কিছুটা সময় লাগবে দল গোছাতে। ছন্দ ফেরাতে ফার্গুসনের পরামর্শও ওকে নিতে হতে পারে। সেটা করলে ভালই করবে মোয়েসের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। |