শ্রীনি, সচিনকে নিয়ে চর্চায় উত্তপ্ত কলকাতা
চিন তেন্ডুলকর কোথায় তাঁর দু’শোতম টেস্ট ম্যাচ খেলবেন ইডেন? না ওয়াংখেড়ে?
নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন কি সমবেত আইনি জট কাটিয়ে সত্যিই সেপ্টেম্বর শেষে পুনর্নির্বাচন আর সভাপতিত্বের জন্য দাঁড়াবেন? নাকি ঘরের মাঠেই প্রবল পরাক্রান্ত শ্রীনির দুর্গ ধসে পড়বে?
রবিবারের বহুচর্চিত বোর্ড বৈঠক উত্তর যত না দিল, তার চেয়ে অনিশ্চয়তা দিল বেশি। উত্তর হোক, অনিশ্চয়তা হোক, সব কিছুর কেন্দ্রে থাকার কথা ছিল চেন্নাই থেকে এক দিনের পর্যটক শ্রীনিবাসনের। কেউ আন্দাজ করেনি যে, তাঁর সঙ্গে আরও একটা ‘এস’ জুড়ে যাবে। তিনি সচিন তেন্ডুলকর। শ্রীনি-ধোনি পাশাপাশি বসে, পাশাপাশি লেখা হয়, এটাই এত কালের দস্তুর। রোববারের কলকাতা অকস্মাৎ সেটাকে দাঁড় করিয়ে দিল শ্রীনি-সচিনে।
তেন্ডুলকর বহু দিনই বোর্ডকে লিখব-লিখব করছিলেন যে, তাঁর বিদায়ী ম্যাচের ব্যবস্থা যেন ভারতের মাঠে করা হয়। বিদেশের মাঠে খেলে যেন তাঁকে বিদায় নিতে না হয়। অথচ পরিস্থিতি সে রকমই ছিল। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পর ভারতের পরের সফর নিউজিল্যান্ডে। বিদেশে। ক’দিন আগে হঠাৎই রাজীব শুক্ল সচিনের কাছে জানতে চান, দেশে খেললে প্রতিপক্ষ হিসেবে তোমার কাকে পছন্দ?
শ্রীলঙ্কা না ওয়েস্ট ইন্ডিজ? সচিন তখন বলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু তাঁর কোনও ধারণাই ছিল না, বোর্ডের বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর কেটে মধ্যিখানে নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। সরকারি ভাবে সচিন মন্তব্য না করলেও শোনা গেল, ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, বোর্ড যখন এতটাই করল, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভারত সফরে যে ওয়ান ডে-গুলো হবে সেটা যেন টেস্টের আগে দেওয়া হয়। ওয়ান ডে টিমে তিনি না থাকলেও ওই সময়টা মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জি খেলে নিজেকে ম্যাচ ফিট করে নিতে চান। দু’শোতম টেস্ট ম্যাচ খেলতে চান সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে। আপাতত তিনি ১৯৮ নম্বরে দাঁড়িয়ে। বিশ্বক্রিকেটের অনন্য কীর্তি পূর্ণ করার জন্য চাই মাত্র ২।
এখানেই প্রশ্ন। এই দুইয়ের মধ্যে এক কে? দুই কে? সিএবি কর্তারা অবশ্যই চান দুই হতে। যাতে প্রবল জাঁকজমক এবং গোটা বিশ্বের চাহনির মধ্যে সচিন এ মাঠেই খেলেন দু’শোতম টেস্ট। সচিনের নিজের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে হয়তো তিনি কলকাতাকে ১৯৯ দিয়ে ওয়াংখেড়েকে ২০০ দেবেন। কী হবে, সেটা ঠিক হতে অন্তত দিন পনেরো লাগবে। সিএবি কর্তারা যদিও আশায়-আশায় আছেন। রোববারের বৈঠক থেকে শ্রীনির লাভ হোক না হোক, তাঁরা হয়তো নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই ম্যাচ আয়োজনের বরাত পেয়ে যাবেন।

মুখোমুখি ডালমিয়া-শ্রীনি। শহরে রবিবার। ছবি: উৎপল সরকার
এ দিকে বোর্ডের অকস্মাৎ এই সিদ্ধান্তে দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড অবশ্যই প্রচণ্ড নিরাশ হয়ে পড়বে। তারা তেন্ডুলকরের শেষ সিরিজ এবং দু’শোতম টেস্ট ম্যাচ ঘিরে ইতিমধ্যে হাইপ তুলে দিয়েছিল। শোনা যায়, শুধু বোর্ড নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা ট্যুরিজম পর্যটকদের বেশ কিছু টিকিট কাটিয়েছিল। অনেকে হোটেল বুক করে রেখেছিলেন। কিন্তু ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলে যদি বা এর পর দক্ষিণ আফ্রিকা যায়, সেখানে দু’শোতম টেস্টের জাদুকরী মুহূর্তটাই আর ঘটবে না। ভারতীয় ক্রিকেটমহলের খবর, অন্তরালে কলকাঠি নেড়েছেন জগমোহন ডালমিয়া। ইডেন থেকে তাঁর বিশ্বকাপের ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আইসিসি। সেই সময়ে আইসিসি-র মুখ্য কর্তা ছিলেন হারুণ লর্গ্যাট, যিনি আজ দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের চিফ এগ্জিকিউটিভ। রবিবার রাত্তিরে ঘনিষ্ঠমহলে ডালমিয়া নাকি বলেছেন, “হারুণ এ বার বোঝ, ভীষণ আশা করে বসে থাকা ম্যাচ চলে গেলে কেমন লাগে?” যা শুনে তাঁর বন্ধুদের কেউ কেউ বলছেন, এই তো ভিন্টেজ ডালমিয়া! কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট নিজে অবশ্য আনন্দবাজারকে বললেন, “আরে না, না। হারুণ তো আমার বন্ধু আছে।”
দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড চেয়েছিল ভারত তাদের দেশে তিন টেস্ট, সাত ওয়ান ডে খেলুক। ডালমিয়া নাকি বলেছেন দু’টো টেস্ট আর তিনটে ওয়ান ডে বড়জোর খেলব। যদি না লর্গ্যাট ওর কৃতকর্মের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়। এ ব্যাপারে শ্রীনিও ডালমিয়ার সঙ্গে।
রোববারের সভায় অভূতপূর্ব ব্যাপার ছিল চারপাশে আইনজীবীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রক্তক্ষয়ী বোর্ড নির্বাচনের সময় যদি বা এত আইনজীবী দেখা যায়, ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের সময় বাইরে আইনজীবীদের এমন ভিড় কেউ কখনও দেখেনি। শোনা যাচ্ছে আইনজীবীদের এনেছিলেন শ্রীনিবাসন, যাতে কোথাও কোনও টেকনিক্যাল ভুল না হয়। যাতে কোথাও আদালত অবমাননা না হয়।
১১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠতে পারে ধরে নিয়ে শ্রীনি দু’টো ধূর্ত চাল চেলেছেন।
চাল এক, এ দিনের বৈঠকে আজকের আনন্দবাজারের খবর অনুযায়ী তিনি চেয়ার করেননি যেমন সত্যি। তেমনই তামিলনাড়ুর প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন কি না সেটা ধোঁয়াশা। তামিনলাড়ুর কাশী বিশ্বনাথনকেও বৈঠকের ভেতর দেখা গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে সভার কার্যবিবরণী লেখার সময় শ্রীনিকে দেখানো হবে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে। কাশীকে দেখানো হবে তামিলনাড়ু প্রতিনিধি হিসেবে। যাতে উচ্চতর আদালতের কাছে বোর্ড পরিষ্কার থাকতে পারে।
চাল দুই, ২৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন ঘোষণা করে দেওয়া আর সেটা চেন্নাইয়েই ফেলা। অনেকে মনে করছেন এর ফলে শ্রীনি উচ্চতর আদালতকে যেন বার্তা দিয়ে রাখলেন, আমাদের জরুরি কাজ রয়েছে, নির্বাচনটা সেরে ফেলতে হবে। আমাকে ওখানে দাঁড়াতে দিন।
নির্বাচনে তিনি যে দাঁড়াবেন, সেই ঘোষণাটা শ্রীনি প্রকাশ্যে করে দিয়েছেন শুনে বোর্ডের অন্দরমহলে অনেকেই তীব্র ফোঁসফাঁস করলেন। উনিশ বছর বোর্ডের হয়ে মামলা লড়া আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “আমি তো ভাবতেই পারছি না, কোর্ট খালাস করেনি, এই অবস্থায় শ্রীনি কী ভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন! যদি সত্যিই শ্রীনি চেন্নাইয়ের বৈঠকে পুনর্নির্বাচনের জন্য দাঁড়ান, তা হলে আমি বলব সুরেশ কলমডীর কাহিনিও লজ্জা পাবে।” বোর্ডের সিনিয়র কিছু সদস্যও উত্তেজিত, লোকটার কি লজ্জা-টজ্জা নেই? কিন্তু সামনে কেউ একটা কথাও বলেনি। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন ঘিরে গত কয়েক মাসে যতই অসন্তোষ আর ক্ষোভ তৈরি হোক, রোববারের সভা দেখাল, এখুনি নির্বাচন হলে তিনি নিরঙ্কুশ জিতবেন। এখনও এক জনেরও সামনাসামনি তাঁকে বলার সাহস নেই যে, আপনি নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য বোর্ডকে উচ্ছন্নে যেতে দিতে পারেন না।
শ্রীনিবাসন তাই পিছু হটতে পারেন একমাত্র আদালতের আদেশে। অর্থাৎ মাঠের বাইরের মারপ্যাঁচে। সুপ্রিম কোর্টে আপাতত তাঁর বিরুদ্ধে সওয়াল করছেন দুঁদে সব আইনজীবী। বিহার ক্রিকেট সংস্থার হয়ে এত সব তারকা আইনজীবীকে একসঙ্গে দেখে অনেকেই বিস্মিত। হরিশ সালভে, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং নলিনী চিদম্বরম। শোনা যাচ্ছে, আগামী ক’দিনের মধ্যে এঁদেরই কেউ সুপ্রিম কোর্টে নতুন আবেদন পেশ করবেন যে, আদালতের আদেশ মাফিক শ্রীনিকে নির্বাচনে যোগ দেওয়া থেকে বিরত করা হোক। কারণ তিনি মুম্বই ও দিল্লির আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছিলেন, তদন্ত কমিটির কাজ শেষ না হলে চেয়ারে ফিরবেন না। অতএব নির্বাচনের দিন চেয়ারে বসার ঘোষণা সম্পূর্ণ আদালত অবমাননাকর।
ক্রিকেট রঙ্গ তাই কলকাতা থেকে এখন প্রবাহিত দিল্লিতে। আইনজীবীদের কালো কোটে। মাঝেমধ্যে তাকে ঢেকে দেওয়ার জন্য অবশ্য বান্দ্রা কুর্লা মাঠে প্র্যাক্টিসের জন্য অন্য ‘এস’-কে পাওয়া যাবে। তিনি সচিন!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.