পাকিস্তানি শিল্পীদের তুলিতে রঙিন হবে শহরের পুজো
থা বলেন এক নিঃশ্বাসে। আর হাসেন ঘন ঘন, গমগমিয়ে। কলকাতায় আসার প্রাক্কালে করাচিতে ফোনে ধরতেই হায়দর আলির গলায় টানটান উত্তেজনার আঁচ।
এত দিন রাজপথের অতিকায় ট্রাক কিংবা দেশ-বিদেশের পুরনো গাড়ির গায়ে জমকালো রঙে তাঁর শৈল্পিক দক্ষতা উজাড় করে দিয়েছেন পাকিস্তানের এই শিল্পী। এ বার কলকাতার পুজোর মণ্ডপ হবে তাঁর ছবির ক্যানভাস। ভারতের অদেখা, অচেনা শহরের উৎসবের শরিক হওয়ার আগেই নতুন দেশের স্বাদ-গন্ধের সংক্রমণ হায়দরের রক্তে মিশতে শুরু করেছে।
“দুর্গাপুজোর কথা তত শুনিনি। কিন্তু কলকাতার মিঠাইয়ের কথা শুনেছি বৈকি। ইন্ডিয়ায় দিল্লির মিঠাই দারুণ! কিন্তু ওরা বলে কলকাতাই হল বেস্ট। রসগুল্লা, চমচম...আরও কত কী!” পঞ্জাবি টানের হিন্দিতে বলছিলেন হায়দর। আর কী জানেন কলকাতার বিষয়ে? করাচির ৩৩ বছরের যুবক যা বললেন, তা তর্কসাপেক্ষ হলেও শুনলে বাঙালি হিসেবে একটু শ্লাঘা হয়! “আমাদের এখান (পাকিস্তান) থেকে যাঁরাই ভারতে যান, তাঁরা কিন্তু কলকাতার খুব ইজ্জত করেন। লোকে বলে কলকাতা খুব বড় শহর আর ইন্ডিয়ার সব থেকে বেশি ‘পঢ়া-লিখা লোগ’ কলকাতায় থাকেন।”
আপাতত অবশ্য কলকাতার গুটিকয়েক লোককে চেনেন হায়দর। উত্তর কলকাতার হাতিবাগানের এক পুজোর থিম ফুটিয়ে তুলবেন হায়দর-সহ তিন পাকিস্তানি শিল্পী। সেই পুজোর থিম-শিল্পী গোপাল পোদ্দারের সঙ্গে যোগাযোগের সুবাদেই হায়দরদের কলকাতায় আসা। এ শহরে আইসিসিআর-এর কর্মশালাতেও মধুবনী চিত্রশিল্পী ও বাংলা-ওড়িশার পটুয়াদের সঙ্গে এক মঞ্চে তাঁদের শিল্প তুলে ধরবেন পাকিস্তানের এই ট্রাক-শিল্পীরা।
হায়দর ও তাঁর সহযোগী বন্ধু মমতাজ আহমেদের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগটা অবশ্য শিকড়ের টান। হায়দরের বাপ-দাদা আদতে জালন্ধরের মানুষ। আর মমতাজের পূর্বপুরুষদের বাড়ি হরিয়ানার হিসারে। হায়দরের বাবা মহম্মদ সর্দারই হলেন হায়দর-মমতাজের গুরু। মমতাজ জানালেন, দেশভাগের পরে হায়দরদের পরিবার যায় করাচিতে। মমতাজেরা ছিলেন পাক-পঞ্জাবের সাহিওয়ালে। কিন্তু হায়দরদের আত্মীয়েরা তাঁদের প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদেই তিনিও নাড়া বাঁধেন মহম্মদ সর্দারের কাছে। মমতাজ বলেন, “বাপ-দাদাদের জমানায় ঘোড়ার গাড়ি, উটের গাড়িতেও এমন রং করে বাহারি নকশা ফুটিয়ে তোলা হতো। পাকিস্তানে এখনও ট্রাক-লরিওয়ালা সক্কলে চান, তাঁর গাড়িই সব থেকে খুবসুরত হোক। নিজের ঘরদোরের অত পরোয়া না-করলেও গাড়ির সবটা সাজিয়ে মন্দির-মসজিদের মতো ইজ্জত করেন মালিক-ড্রাইভারেরা।” হায়দরের কথায়, “ট্রাক-লরির বাইরেটা সাজাতে ১০ লক্ষ টাকা খরচা করেন, এমন ট্রাকমালিকও পাকিস্তানে আছেন।”
ট্রাক-লরি ছাড়াও পুরনো গাড়ি বা বাস রং করতেও কিন্তু হায়দরেরা ব্রিটেন, তুরস্ক, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় ডাক পেয়েছেন। ভারতেও দিল্লি-অমৃতসর-জয়পুরে নিজেদের শিল্পকলা মেলে ধরেছেন এই পাক শিল্পীরা। ফুডকোর্ট, রেস্তোরাঁর দেওয়াল রাঙিয়ে তুলতেও তাঁদের ডাক পড়েছে। পাকিস্তানের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো হালে এই শিল্পকলার মূল্য বুঝতে শুরু করেছে। হায়দর বললেন, “ট্রাকের গায়ে যা মন চায় আঁকি। উজ্জ্বল ডিপ কালারে ফুল-লতা-পাখির নকশা থেকে শুরু করে পোস্টার থেকে ফিল্মি হিরোইনের ছবিও ফুটিয়ে তুলি।”
আর ক’দিন পরেই এ শহরে এক মাসের জন্য ঘাঁটি গাড়বেন হায়দর-মমতাজ ও তাঁদের এক ছাত্র মহম্মদ ইকবাল। ট্রাকের কাচ থেকে কেবিন — সর্বত্র ‘এমবস’ করার লক্ষাধিক টাকার চমকপট্টি, নানা কিসিমের কল্কা নিয়ে আসা হচ্ছে পাকিস্তান থেকে। উত্তর কলকাতার তস্য গলি হাতিবাগানের গণেন্দ্র মিত্র লেনে পুজোমণ্ডপ সাজাতে টিনের পাত কেটে লরির আদল করা হয়েছে। পাকিস্তানি শিল্পঘরানায় তা সাজিয়ে তোলা হবে। হায়দরদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন বলে দিন গুনছেন এ রাজ্যের পানাগড় বা সিঁথির কারিগরেরা। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আইসিসিআর-এর পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা রাজশ্রী বেহরা বলেন, “শিল্প-সংস্কৃতি এ ভাবেই রাজনীতির সীমান্ত মুছে দেয়।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.