পার্ক স্ট্রিট থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে ইলিয়ট রোডে শনিবার রাতে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হলেন এক ব্যবসায়ী। দুষ্কৃতী সেখানে তাঁকে মারধর করেই ক্ষান্ত হয়নি। অভিযোগ, পার্ক সার্কাস চার নম্বর ব্রিজের কাছে তারা ফের হামলা করে ওই ব্যবসায়ীর উপরে। সেখানে তারা ওই ব্যবসায়ীর উপরে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর চোখের উপরের অংশ ছুঁয়ে চলে যায় গুলি।
শনিবারই কলকাতা পুলিশের ক্রাইম কনফারেন্সে রাতের শহরে পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলেছিলেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ্য রাস্তায় এ ভাবে একই ব্যক্তির উপরে দু’দুবার দুষ্কৃতীদের হামলার ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে শহরের পুলিশি ব্যবস্থা। রাস্তায় আক্রান্ত হওয়ার পরে কেন ওই ব্যবসায়ী পুলিশি সহায়তা পেলেন না, দুষ্কৃতীরাও বা কী করে গা ঢাকা দিলতার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি পুলিশকর্তাদের কাছে। পুলিশের একটি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ওই ব্যবসায়ীর উপরে গুলি চালানোর ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী মেলেনি। তাঁর কপালের আঘাতের চিহ্ন নিয়েও সংশয় রয়েছে তদন্তকারীদের।
কী ঘটেছিল শনিবার রাতে?
আক্রান্ত পরিবহণ ব্যবসায়ী তনভির রেজা পুলিশকে জানিয়েছেন, রাত ১০টা নাগাদ চাঁদনি চক থেকে অটোয় তপসিয়া রোডের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। অটোটিতে তিনি ছাড়াও আর দুই যাত্রী ছিলেন। ইলিয়ট রোডে একটি পানশালার কাছে ওই যাত্রীরা নেমে যান। এর পরে কিছুটা দূরে যেতেই দুই দুষ্কৃতী অটোটি থামায়। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তাঁকে অটো থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে মারধর শুরু করে ওই দুই দুষ্কৃতী। তনভিরের বক্তব্য, এলাকার এক প্রোমোটারের সঙ্গে ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে তাঁর বিরোধ চলছিল। তারাই ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তনভির।
তনভির পুলিশকে জানান, মারধরের মধ্যেই তিনি দুষ্কৃতীদের হাত ছাড়িয়ে ছুটতে শুরু করেন। দৌড়ে তিনি পৌঁছে যান এজেসি বসু রোডে নোনাপুকুর ট্রামডিপোর কাছে। সেখান থেকে ট্যাক্সি ধরে তিনি বাড়ির দিকে রওনা দেন বলে ওই ব্যবসায়ী তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ট্যাক্সি নিয়ে পার্ক সার্কাস চার নম্বর ব্রিজের কাছে পৌঁছলে চার যুবক তাঁর ট্যাক্সি থামায়। তাঁকে নামিয়ে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে ওই দুষ্কৃতীরা। তনভিরের অভিযোগ, ইলিয়ট রোডে যে দুই দুষ্কৃতী তাঁর উপর হামলা চালিয়েছিল, তাদের এক জন পার্ক সার্কাসেও ছিল। সঙ্গে ছিলেন ওই প্রোমোটারও। মারধরের মধ্যেই এক জন দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালায় বলে দাবি তনভিরের। গুলিটি তাঁর বাঁ চোখের উপরের অংশ ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় বলে পুলিশকে জানান তিনি। আরও জানান, এর পরে দুষ্কৃতীরা চলে যায়। রাতেই কড়েয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যবসায়ী।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ মতো গুলি চালানোর কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, গুলি চালানোর ঘটনা না ঘটলেও মারধরের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, তনভিরের কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। তনভির যে আঘাতের কথা পুলিশকে বলেছেন, তা গুলিতে নয় বলে নিশ্চিত তদন্তকারীরা। চিকিৎসকেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই আঘাত ধারালো কোনও অস্ত্রের হতে পারে।
পুলিশ জানায়, ওই রাতেই পার্ক সার্কাস চার নম্বর ব্রিজের কাছে ঘটনাস্থলে যান তদন্তকারীরা। তনভির যে জায়গায় গুলি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন, সেই জায়গায় ওই সময়ে অনেক লোক ছিল বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু তনভিরের উপরে হামলার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী মেলেনি বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। ঘটনাস্থলে মেলেনি কার্তুজের কোনও খোলও। তবে যে প্রোমোটারের নামে তনভিরের অভিযোগ, শনিবার রাতে তিনি কোথায় ছিলেন, তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। |