খন্দপথ পেরোতে নাকাল যানবাহন
হাওড়া স্টেশন থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বারাসতের সুরেশ আচার্য। সঙ্গে তিন বন্ধু। বিমানবন্দর ছাড়াতেই গর্ত আর রাস্তার চড়াই-উতরাই পেরোতে গিয়ে গাড়ির চাকা গেল বসে। ঘণ্টাখানেক ধরে তা সারানোর পরে ট্যাক্সিচালক দাবি করলেন বাড়তি একশো টাকা।
“ওই যাচ্ছেতাই রাস্তায় গাড়ির ড্যামেজের তুলনায় যা নেহাতই সামান্য”, বলছেন সুরেশবাবুরা।
বিরাটি ছাড়াতেই বিশাল গর্তে পড়ে মুখ থুবড়ে পড়ল বাস। চোট পেলেন যাত্রীরা। তার পর থেকে বাস চালানোই বন্ধ করে দিয়েছেন বাসমালিক রতন বসু। ডি এন-১৭ (বারাসত থেকে বারুইপুর) শাখার বাস সিন্ডিকেটের সভাপতি রতনবাবুর কথায়, “রাস্তার এমন অবস্থা যে এক-একটি রুটে কমপক্ষে সাতটি করে বাস বেহাল হয়ে বন্ধ রয়েছে। বাকি মালিকেরাও বাস চালাতে চাইছেন না।”
শুধু বাস-ট্যাক্সি নয়, যশোহর রোডের এই বেহাল দশার কারণে একই হাল অন্য যানবাহনেরও। বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেট থেকে বারাসত পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা এতটাই ভয়ঙ্কর যে দেখে মনে হতেই পারে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। মাঝেমধ্যেই পিচ-পাথর উঠে নীচের ইট-মাটি বেরিয়ে পড়েছে। কিছু দূর অন্তর বিশাল বিশাল গর্ত। সেখানে বর্ষার জল জমে রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা অবশ্য বিমানবন্দর থেকে নিউ ব্যারাকপুর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার অংশের। খানা-খন্দে ভরা কঙ্কালসার পথ যেন প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তাকেও হার মানায়। ওই রাস্তায় গরুর গাড়ির মতো দোল আর ধাক্কা খেতে খেতে দুলকি চালে চলছে যানবাহন। লেগে যাচ্ছে ঘণ্টাখানেক সময়। মালবোঝাই ট্রাক উল্টে পড়ছে। গাড়ি উল্টে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। রাস্তা সংলগ্ন দোকানিরা জানালেন, প্রতিদিন কমপক্ষে সাত-আটটি গাড়ি গর্তে পড়ে হয় উল্টাচ্ছে, না হয় ভেঙে পড়ছে।

বৃষ্টির জল জমে বিপর্যস্ত পথ। —নিজস্ব চিত্র
অথচ এই রাস্তাটি নিছক জাতীয় সড়ক (৩৫) নয়। এটি আর্ন্তজাতিক রাস্তাও। এই রাস্তা দিয়েই চলে ঢাকা-কলকাতা বাস। এশিয়ার অন্যতম স্থলবন্দর বনগাঁর পেট্রাপোল দিয়ে পণ্য পরিবহণও হয় এই পথেই। এমন কী, কলকাতা থেকে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গে যেতেও রাস্তা এটিই। খুব কম দূরত্বে চারটি প্রধান সড়ক ভিআইপি রোড, ৩৪ নং জাতীয় সড়ক, টাকি রোড ও ব্যারাকপুর রোডের কেন্দ্রবিন্দু যশোহর রোডকে এমনিতেই প্রচুর ভার বইতে হয়। কলকাতা যাতায়াতের জন্য এই একমাত্র রাস্তাটি ব্যবহার করেন বারাসত, সোদপুর, মধ্যমগ্রাম, দমদম-সহ বনগাঁ ও বসিরহাটের বাসিন্দাদের।
দমদমে একটি স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে যান গাড়িচালক চঞ্চল সরকার। তাঁর কথায়, “গিয়ার আর ব্রেক কষতে কষতে হাত-পা ব্যথা হয়ে যায়। ঝাঁকুনিতে বাচ্চারা গাড়ির মধ্যেই ঠোকা খেয়ে ব্যথা পায়। অনেকে আপাতত স্কুলেও আসছে না।”
বেগতিক না দেখলে সড়ক পথে বেরোতে চাইছেন না অনেকেই। রাত্রে কলকাতার অফিসের গাড়ি বিমানবন্দরের ওপাশে যেতে বেঁকে বসছে। তবু উপায়ও নেই। ওই পথেই প্রতিদিন যাতায়াত করে কয়েকশো অ্যাম্বুল্যান্স। অসুস্থ বাবাকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে এই রাস্তা ধরেই আর জি কর হাসপাতালে গিয়েছিলেন মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অরূপ রায়। অরূপবাবু বলেন, “রাত পৌনে বারোটার সময়ে যানজটের জন্য যশোহর রোডের তিন নম্বর গেট থেকে এক নম্বর গেট পর্যন্ত আসতে পাক্কা দেড় ঘণ্টা লেগে গেল। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে মনে হচ্ছিল, এই বুঝি অ্যাম্বুল্যান্স উল্টে যাবে!”
যশোহর রোডের হালকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “এই রাস্তার নাম তো এখন আর যশোহর রোড নয়, এ হল উদয়শঙ্কর সরণি। নাচতে নাচতে এই রাস্তা দিয়ে যেতে হয়! আমার নিজেরই এই রাস্তা ধরে যেতে ইচ্ছে করে না।”
তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কার্যকরী সভাপতি (আইএনটিটিইউসি) তাপস দাশগুপ্তর অভিযোগ, “বেশ কয়েকটি রুটের প্রচুর বাস বন্ধ রাস্তার কারণেই। রাস্তার দুরবস্থা নিয়ে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।” বাসমালিকদের বক্তব্য, “অনেকেই রেলপথে যাতায়াত করছেন। তবু যাত্রীদের কথা ভেবে লোকসান সামলেও বাস চালাতে হচ্ছে। অনেকে বারাসত থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ বা দমদম গিয়ে ফের আমাদের বাসেই উঠছেন।”
রাস্তা খারাপের জন্য ধীরে চলতে গিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে যানজট। ভোগান্তি চরমে উঠেছে যশোহর রোডের দু’ধারের বাসিন্দাদেরও। একটি আবাসনের বাসিন্দা সমীরবরণ সাহা বলেন, “রাস্তায় যানজটের জন্য সারাদিন আমাদের আবাসনের সামনের রাস্তাও আটকে থাকে। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরোনো যায় না। তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে গাড়িগুলো লেন ভাঙে। তাতে যানজট আরও বাড়ে।” সমীরণবাবুর প্রশ্ন, “মাত্র কয়েক মাস আগে যে রাস্তা সারানো হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি খারাপ হল কী করে?”
এই প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি। সবচেয়ে মজার কথা, বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ যশোহর রোড কোথাও ভাঙাচোরা নেই। কিন্তু বারাসত থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তাই বারবার ভেঙে যাচ্ছে। অভিযোগ, রাস্তা তৈরির টেন্ডার যাদের দেওয়া হয়েছে, তাদের কারণেই এই বিপত্তি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.